দায়েশকে মোকাবেলায় ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন সিআইএ’র প্রধান
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র প্রধান জন ব্রেনান স্বীকার করেছেন, তার দেশ উগ্র তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল বা দায়েশকে মোকাবেলায় কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি কংগ্রেসে প্রশ্নোত্তর বৈঠকে আরো বলেছেন, দায়েশ নেতাদের ওপর হামলা এবং তাদের অর্থ আয়ের উৎস ধ্বংস করা হলেও দায়েশ সন্ত্রাসীদের শক্তি নির্মূল করার জন্য আমেরিকা ও তার মিত্রদের প্রচেষ্টা সফল হয়নি। সিআইএ’র প্রধান আমেরিকার অরলান্ডো শহরে গুলিবর্ষণের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, এ ঘটনা থেকেই বোঝা যায় দায়েশের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ না করেও তাদের ভ্রান্ত আদর্শ বা চিন্তাচেতনায় প্রভাবিত হয়ে কেউ কেউ পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে হামলা চালাচ্ছে।
সিআইএ’র প্রধান এমন সময় দায়েশসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা মোকাবেলায় ব্যর্থতার কথা স্বীকার করলেন যখন মার্কিন সরকার গত ১৫ বছর ধরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দাবি করে আসছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পর পাশ্চাত্য দেশগুলোতে অনুরূপ হামলা ঠেকানোর লক্ষ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রকে দমনের জন্য আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে ব্যাপক চেষ্টা চালিয়েও আমেরিকা ব্যর্থ হয়েছে। এ লক্ষ্যে আমেরিকা সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ আইন প্রণয়ন, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, কোটি কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছে। এমনকি আফগানিস্তান ও ইরাকে ব্যাপক সেনা সমাবেশ ঘটিয়েছে। নিরাপত্তা হুমকি এবং সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করতে গিয়ে মার্কিন সরকার নিজ দেশের জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামাজিক অধিকার পদদলিত করেছে। এ ছাড়া, বহু গোপন জেলখানা নির্মাণ ও সেখানে বন্দীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি আমেরিকার ভেতরে ও সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও যোগাযোগ কেন্দ্রের ওপর কঠোর নজরদারি করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
এতো কিছুর পরও ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার ১৫ বছর পর দায়েশের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মাত্র একজন ব্যক্তি অরলান্ডোতে ৫০ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। বলা হচ্ছে এটা মার্কিন ইতিহাসে সর্ববৃহৎ গুলিবর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। অবশ্য মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, ওমর মতিন নামে যে ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার সঙ্গে বাইরের কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। আগামীতেও এ ধরণের ঘটনায় বাইরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর জড়িত থাকার সম্ভাবনা না থাকলেও মার্কিন সমাজ ভবিষ্যতে এ ধরণের হামলা থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে আমেরিকা দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বললেও দায়েশ নামক দানবকে তারাই তৈরি করেছে। দায়েশকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে আমেরিকাই সহযোগিতা করে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য তারা দায়েশকে ব্যবহার করছে।
যাইহোক আমেরিকার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, বিদেশি সন্ত্রাসী চক্রের চাইতে দেশের ভেতরের সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে তারা সবচেয়ে বেশি হামলা বা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির ভেতরে অস্ত্র বহনের অবাধ লাইসেন্স থাকায় সেদেশে হত্যাকাণ্ড স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন সমাজে ছড়িয়ে পড়া উগ্রবাদ ও সহিংসতার উৎসগুলো যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তা হলে কোটি কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করে কিংবা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়েও বিরাজমান সমস্যা থেকে তারা নিষ্কৃতি পাবে না। #
পার্সটুডে/মোহাম্মদ রেজওয়ান হোসেন/২০