বিশ্বের বড় শক্তিগুলো এখনও আফ্রিকা মহাদেশে কর্তৃত্ব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত
নাইজারের কাছে ফ্রান্সের নতজানু হওয়ার রহস্য ও বার্তা
অবশেষে ফ্রান্স নাইজারের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে এ ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে যে চলতি বছরের শেষ নাগাদ ফরাসি সব সেনা নাইজার ত্যাগ করবে। এ ছাড়াও আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফরাসি রাষ্ট্রদূতও প্যারিসে ফিরে আসবেন।
নাইজেরিয়ার ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদ ফ্রান্সের এই ঘোষণাকে নতুন যুগের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে। এর আগে এই পরিষদ তিন সেপ্টেম্বরের মধ্যে নাইজার ত্যাগ করতে ফরাসি সেনাদের প্রতি সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল এবং এরপর যে কোনো ঘটনার জন্য ফরাসি সেনারাই দায়ি থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।
নাইজারে গত ২৬ জুলাই এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদ বাজুম এবং প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড বাহিনীর প্রধান আবদুর রহমান তিয়ানি দেশটির নতুন প্রধান ও অন্তর্বর্তী সরকার তথা ক্ষমতাসীন সামরিক পরিষদের প্রধান হন। এই পরিষদ প্রথমেই সেদেশ থেকে ফরাসি সেনা প্রত্যাহারের ও দেশটির ঘরোয়া বিষয়ে ফরাসি হস্তক্ষেপ বন্ধের দাবি জানায়। ফ্রান্স সরকার ও তার সমর্থকরা এই দাবির বিরোধিতা করেছে।
ফ্রান্সের সরকারগুলো সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে আফ্রিকার নানা দেশে সেনা মোতায়েন করেছে। এইসব সেনা মোতায়েনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছে আফ্রিকার জনগণ ও কোনো কোনো সরকার। আফ্রিকার দেশ মালি ও বুর্কিনাফাসোতেও সামরিক অভ্যুত্থান বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ফরাসি সেনা প্রত্যাহারের দাবির মধ্য দিয়ে। এ দুই দেশ থেকে ফরাসি সেনা সরিয়ে আনতে বাধ্য হওয়ার পর প্যারিস ভেবেছিল যে নাইজারে তার সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব হবে।
প্রথমদিকে ফ্রান্স নাইজার থেকে তার রাষ্ট্রদূত ও সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের পক্ষ নিয়েছিল। ইউরোপীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো এ হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল যে ক্ষমতাচ্যুত বাজুমকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে না আনলে সেখানে সামরিক হস্তক্ষেপ করা হতে পারে। এক পর্যায়ে নাইজার, মালি ও বুর্কিনাফাসো বাইরের সম্ভাব্য সামরিক হস্তক্ষেপের মোকাবেলায় একে-অপরকে সহায়তার ব্যাপারে জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। নাইজারের আকাশসীমায় ফরাসি বিমান উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশটির সামরিক পরিষদ। এ অবস্থায় আফ্রিকার বিপ্লবী সরকারগুলোর প্রতিরোধ ও জনগণের দাবির মুখে পিছু হটে ফ্রান্স।
এটা স্পষ্ট বিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আফ্রিকার দেশগুলোর নতুন নেতৃত্ব এখন উপনিবেশবাদের শৃঙ্খল বা বিজাতীয়দের শোষণের নাগপাশ সইতে আর রাজি নয়। বিশ্বের বড় শক্তিগুলো এখনও আফ্রিকা মহাদেশে তাদের কর্তৃত্ব বিস্তার নিয়ে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি এখন আফ্রিকানদের অনুকূলে এবং তারা নিজস্ব নতুন আদর্শ বা মডেল গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছেন। আফ্রিকানদের স্বাধীনতাকামী চেতনার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটছে এবং এই মহাদেশে ফ্রান্সের পর অন্যান্য পশ্চিমা দেশের আধিপত্যের অবসান ঘটাও এখন অত্যাসন্ন। # পার্সটুডে/আমির/২৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।