ইসলাম-আতঙ্কবাদীরা জানে ইসলাম বিশ্বের জাতিগুলোকে মুক্তি দিতে সক্ষম
(last modified Wed, 19 Jun 2024 12:30:24 GMT )
জুন ১৯, ২০২৪ ১৮:৩০ Asia/Dhaka
  • নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ইসলামোফোবিক শ্যুটিংয়ের শিকারদের জন্য শোক অনুষ্ঠানে দুজন মুসলিম মহিলা। অনুষ্ঠানটির স্থান  টরন্টো, কানাডা। তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০১৯
    নিউজিল্যান্ডের মসজিদে ইসলামোফোবিক শ্যুটিংয়ের শিকারদের জন্য শোক অনুষ্ঠানে দুজন মুসলিম মহিলা। অনুষ্ঠানটির স্থান টরন্টো, কানাডা। তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০১৯

পার্সটুডে-মুসলমানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী তৎপরতাকে বলা হয় ইসলামোফোবিয়া বা ইসলাম-আতঙ্ক। বিষয়টির নেপথ্যের ভিত্তি বা বাস্তবতা হল: পশ্চিম এশিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে বৈধতার লেবাস পরানো, বিশেষ করে বর্ণবাদী ও দখলদার ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থনের পক্ষে সাফাই দেয়া।

আর এ লক্ষ্যে তারা সন্ত্রাসের শিকারদের বা মজলুমদেরকেই দানবিক বা অমানবিক বলে তুলে ধরে। পার্স টুডের পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ইসলামোফোবিয়ার বর্তমান অগ্র-পথিকরা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ ও গণহত্যার প্রেক্ষাপটে দখলদারিত্ব ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে ফিলিস্তিনি আন্দোলনের মূল হিসেবে তুলে ধরার পরিবর্তে তাদেরকে এমনসব আরব বা ধর্মান্ধ মুসলিম হিসেবে তুলে ধরার জোরালো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে যারা স্বভাবগতভাবেই উগ্র বা সহিংস।

২০১৬ সালে এমন মুসলিম-বিদ্বেষী মনোভাব এতটাই শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে তার জোয়ারেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে ক্ষমতাসীন হতে সক্ষম হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা সংক্রান্ত নির্বাহি আদেশ নম্বর ১৩৭৬৯-কে মু'সলিমদের প্রবেশের ওপর-নিষেধাজ্ঞা' বলে উল্লেখ করেন এবং এর ফলে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় পিছিয়ে পড়া থেকে বেঁচে যান ও দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার সৌভাগ্য বা পুরস্কার অর্জন করেন। 

২০১৬ সালে অর্জিত ট্রাম্পের বিজয়ের বীজ বোনা হয়েছিল ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায়। আরও আগে ১৯৯০'র দশকে শীতল যুদ্ধ শেষ হওয়ায় হান্টিংটন ও বার্নার্ড লুইসের মত চিন্তাবিদরা ওয়াশিংটনে এই চিন্তাধারা তুলে ধরেন যে পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে সংঘর্ষের নীতির আওতায় ইসলামের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। হান্টিংটন লিখেছিলেন যে কমিউনিজমের পরাজয়ের ফলে ইসলাম পরিণত হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'আদর্শ শত্রু'তে! কারণ ইসলাম হল ভিন্ন জাতীয়তা ও সংস্কৃতির অধিকারী। আর সামরিক দিক থেকে মার্কিন নিরাপত্তার জন্য একটি বৈধ হুমকি হবার মত যথেষ্ট শক্তির অধিকারী।

কিন্তু চার বছর পর ২০২০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দৃশ্যত শেষ হয়ে যায় এবং সংবাদ শিরোনামগুলোতে বিপজ্জনক মুসলমান সংক্রান্ত গালগল্প আর দৃশ্যমান হচ্ছিল না। মুসলিম-বিদ্বেষী শ্লোগান ট্রাম্পের পুননির্বাচনের প্রচারণা থেকে পুরোপুরি বাদ পড়ে। এ পর্যায়ে ইসলামের পরিবর্তে রাশিয়া ও চীনকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে দেখানো শুরু হয়।

গাজায় ইসরাইলের নজিরবিহীন বোমা বর্ষণ হঠাৎ করে আবারও বেশ জোরালোভাবে মুসলিম-বিদ্বেষী প্রচারণা জোরদার করেছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর হামলার ঘটনাও বেড়ে গেছে। ইলিনয়স অঙ্গরাজ্যের একটি শহরে ৬ বছর বয়সের এক ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন শিশুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে এক হামলাকারী। ওই শিশুকে ও তার মাকে হামলার সময় সে চিৎকার করে বলছিল: তোমরা যারা মুসলমান তাদের অবশ্যই নিহত হওয়া উচিত। 

ইসরাইলি নেতারাও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাস পরিচালিত আল-আকসা অভিযানকে বেশ কয়েকবার 'ইসরাইলের ১১ সেপ্টেম্বরের' ঘটনা বলে উল্লেখ করেছে। এভাবে একটি মিথ্যা তুলনার মধ্য দিয়ে তারা অতীতের সরকারগুলোর কর্মকর্তাদের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হয়েছে। এ ধরনের তুলনা অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক। কারণ হামাসের লক্ষ্য হল সাত দশক ধরে চলা ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো। অথচ যদি ধরেও নেয়া হয় যে কথিত আলকায়দা ৯/১১-এর হামলাকারী-এই দলটির উদ্দেশ্য ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হামলা ছড়িয়ে দেয়া। 

পশ্চিমা কর্মকর্তারা দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলকে মজলুম হিসেবে তুলে ধরে ও ফিলিস্তিন এবং মুসলমানদের সম্পর্কে অযৌক্তিক ও অসৎ মন্তব্য করে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলাম-আতঙ্ক জোরদার করছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসলাম-আতঙ্কের সৃষ্ট সহিংস হামলা বেড়েছে ১৮০ শতাংশ, কানাডায় বেড়েছে ১৩০০ শতাংশ ও ব্রিটেনে বেড়েছে ৬০০ শতাংশ।

গাজার একটি হাসপাতালে বোমা হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশের ছবি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ইসলামোফোবিয়া ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার মানসিক চাপ কমায় 

পশ্চিমা দেশগুলোতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যদিও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই বহু মানুষ ফ্রান্স, জার্মানি ও ব্রিটেনে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিচ্ছেন এবং তাঁরা কাঁদানে গ্যাস ও পানি-কামানের বাধাও সহ্য করছেন। এসব অদ্ভুত বাধা ও নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন একদল ব্রিটিশ সাংসদ যাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন সদস্যও রয়েছেন এবং তারা ক্রমবর্ধমান মুসলিম-বিদ্বেষী তৎপরতা মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য ও মুসলিম দমন-পীড়নের মোকাবেলার বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। 

জার্মানির একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ও রাজনীতি-বিশেষজ্ঞ ম্যাথিয়াস রোহি তার দেশে মুসলিম বিদ্বেষ বৃদ্ধির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইসলামফোবিয়া মোকাবেলার জন্য সমাজের বৃহত্তর অংশের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি।

ইসলাম-বিশেষজ্ঞরা বলছেন ইসলামের প্রতি পাশ্চাত্যের আগ্রাসী মনোভাবের কারণ হল পবিত্র কুরআন, ইসলামের মহানবী এবং মানবজাতিকে অন্যদের বিভিন্ন ধরনের জুলুম ও দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে এ ধর্মের অত্যন্ত উচ্চতর ক্ষমতা। পবিত্র কুরআনের একটি বাক্যে বলা হয়েছে অন্যদের ওপর জুলুম করা যেমন নিষিদ্ধ তেমনি নিজেদের ওপর অন্যদের জুলুম মেনে নেয়াও নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআন ও মহানবীর (সা) এই সুস্পষ্ট শিক্ষাও আমাদের মনে রাখা উচিত যে জাতিতে জাতিতে গোত্রে ও বংশে কোনো পার্থক্য নাই। শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড হল খোদা-সচেতনতা বা খোদাভীতি। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।