আমেরিকা বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
(last modified Sat, 27 Jul 2024 14:37:54 GMT )
জুলাই ২৭, ২০২৪ ২০:৩৭ Asia/Dhaka
  • আমেরিকা এখন পর্যন্ত বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে
    আমেরিকা এখন পর্যন্ত বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে

আমেরিকা বিভিন্ন দেশে তার আধিপত্যকামী নীতি বজায় রাখার ধারাবাহিকতায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে একতরফা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সবচেয়ে বেশি ইতিহাস রয়েছে।

মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট সম্প্রতি আমেরিকার মাধ্যমে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করে এক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে যে ওয়াশিংটন এতটাই বেপরোয়াভাবে বিশ্বে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ও শত্রুদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যে বিশ্বের সব দেশের এক তৃতীয়াংশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। পার্স টুডে জানিয়েছে, প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী পুরো বিশ্বের  মধ্যে সবচেয়ে বেশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া।

ফেব্রুয়ারী ২০২২ এবং জানুয়ারি ২০২৪ এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ১৬ হাজারের বেশি ব্যক্তি, নয় হাজার কোম্পানি এবং ৩ হাজার ২০০টির  বেশি সংস্থাকে লক্ষ্যবস্তু করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এছাড়াও, ইরান, ভেনিজুয়েলা এবং কিউবা অন্যান্য দেশগুলো রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস এবং এবং এর নেতিবাচক প্রভাব

প্রকৃতপক্ষে কয়েক দশক ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওয়াশিংটনের নীতির অধীন নয় এমন দেশগুলোর বিরুদ্ধে নানা নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিয়েছে।  এই প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন পোস্ট একটি বিশ্লেষণে লিখেছে যে ১৯৯০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায় আসা  সরকারগুলো নিষেধাজ্ঞাকে অর্থনৈতিক যুদ্ধে পরিণত করেছে এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপকে তারা তাদের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান হাতিয়ার করে তুলেছে।

নিষেধাজ্ঞা নীতি আমেরিকার সব কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে যদিও এই নীতিটি অনেক দেশের জন্যই অকার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।  এতে আমেরিকার স্বার্থ তো হাসিল হয়ই নি বরং এসব দেশ তাদের আভ্যন্তরীণ নীতিতে পরিবর্তন  এনে নিষেধজ্ঞাকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করেছে এবং তারা বহুপাক্ষিকতার মত নীতির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য  হয়েছে। তারা আঞ্চলিক ইউনিয়ন এবং সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা এ প্রসঙ্গে স্বীকার করে যে  আমেরিকার অধিকাংশ নিষেধাজ্ঞা শুধু অকার্যকরই নয় বরং এর বিপরীত প্রভাবও পড়েছে।

নিষেধাজ্ঞায় ডলারকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ওয়াশিংটন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ডলারকে প্রধান আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করেছে। ওয়াশিংটন বারবার ডলারের ওপর নির্ভরশীল কোম্পানি, ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ব্যবস্থার অপব্যবহার করেছে যাতে অন্য দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এর ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই সমস্যাটি বিরোধী দেশগুলোতে এবং এমনকি ওয়াশিংটনের ইউরোপীয় মিত্রদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ডলারের ক্রমাগত ব্যবহার রোধ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ঐকমত্য গড়ে উঠছে।

ওয়াশিংটন পোস্ট এই প্রসঙ্গে বলেছে যে কয়েক দশক ধরে উত্তর কোরিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পিয়ংইয়ংকে তার অস্ত্র কর্মসূচির উন্নতিসহ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতার বিকাশ ঘটানো থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

ইরানের ক্ষেত্রে মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি জ্যানেট ইয়েলেন সম্প্রতি স্বীকার করেছেন  নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানের নীতি ও আচরণে আমেরিকার প্রত্যাশা অনুযায়ী পরিবর্তন আসেনি।

মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট অনুসারে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার দ্বারা লক্ষ্যবস্তু হওয়া মোট দেশগুলোর সংখ্যা বিশ্বের মোট দেশজ উৎপাদনের এক-পঞ্চমাংশের কিছু বেশি এবং এই পরিমাণের 80% চীনের অংশ। যাইহোক এই নীতি দিনদিন অকার্যকর হয়ে উঠছে। এছাড়াও, নিকারাগুয়া এবং কিউবার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো "ড্যানিয়েল ওর্তেগা" এবং "ফিদেল কাস্ত্রো" এর নেতৃত্বে চলা সরকারগুলোকে দুর্বল করতে বা তাদের জনসমর্থন হ্রাস করতে কোনও প্রভাব ফেলেনি।#

পার্সটুডে/ এমবিএ /২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে  লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ