পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো লিবিয়া বিপর্যয়ে ন্যাটোর ভূমিকা লুকায় কেন?
(last modified Sun, 22 Sep 2024 03:18:41 GMT )
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪ ০৯:১৮ Asia/Dhaka
  • পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো লিবিয়া বিপর্যয়ে ন্যাটোর ভূমিকা লুকায় কেন?

পার্সটুডে- ব্রিটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী অন্তত ৯৭০০ বিমান হামলা চালিয়ে এবং ৭৭০০’র বেশি গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করে লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের পতন ঘটায়। একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষক শোপ্যাক মনে করেন, এসব বোমা হামলায় এমন হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে যাদেরকে রক্ষা করার দাবি করেছিল ন্যাটো।

প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয়কে সাধারণত পরস্পর থেকে আলাদা করা কঠিন; বিশেষ করে ওই বিপর্যয় সৃষ্টিতে যখন বিদেশি সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ থাকে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ড্যানিয়েল নামক ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লিবিয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। ওই ঘূর্ণিঝড় কোনো স্বাভাবিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল না বরং সেটি ছিল তার চেয়ে বড় কোনো ঘটনা যার সূত্রপাত হয়েছিল ২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে। অথচ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এ ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে এর প্রাকৃতিক দিকগুলোর প্রতি দর্শক-শ্রোতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে কিন্তু এর পেছনে ন্যাটোর ভূমিকা বেমালুম চেপে গেছে। পার্সটুডের এই নিবন্ধে এ বিষয়টির স্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে যে, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো লিবিয়ার অবকাঠামো ধ্বংস এবং দেশটিতে চরম বিশৃঙ্খলা ও গোলযোগ দেখা দেয়ার পেছনে ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কেন লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে?

২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর বিমান হামলা দেশটিতে মানবিক ও অবকাঠামোগত সংকট সৃষ্টি করে। Responsible Statecraft এর তথ্যমতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ড্যানিয়েল নামক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট ভয়াবহ জলোচ্ছ্বাসে ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এটি নিছক কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ছিল না বরং সেটি ছিল লিবিয়ায় ন্যাটো বাহিনীর সামরিক হস্তক্ষেপের অনিবার্য পরিণতি।  Responsible Statecraft এর গবেষক গ্রেগরি শোপ্যাক বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো একথা তুলে ধরার চেষ্টা করে যে, গৃহযুদ্ধের কারণে লিবিয়ার কর্তৃপক্ষ ওই প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে জনগণকে রক্ষা করার পর্যাপ্ত সুযোগ পায়নি। অথচ তারা লিবিয়ায় ন্যাটোর সামরিক হামলার বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে গেছে।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ড্যানিয়েল  ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয় এবং পরবর্তীতে এটি লিবিয়া উপকূলে আছড়ে পড়ে। আফ্রিকা মহাদেশ ও ভূমধ্যসাগরের ইতিহাসে ওই ঘূর্নিঝড়কে সবচেয়ে বিধ্বংসী বলে বর্ণনা করা হয়।

শোপ্যাক বলেন, ২০১১ সালে লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে ন্যাটো জোটের ভয়াবহ হামলার সময় মার্কিন গণমাধ্যমগুলা দাবি করে যে, লিবিয়ার বিমান বাহিনী দেশটির প্রতিবাদকারীদের ওপর বোমাবর্ষণ করেছে। কিন্তু তারা এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি; এমনকি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনও এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেনি।

ব্রিটেন, আমেরিকা ও ফ্রান্সের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী ৯৭০০’র বেশি বিমান হামলা চালিয়ে এবং ৭৭০০’র বেশি গাইডেড বোমা নিক্ষেপ করে লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফি সরকারের পতন ঘটায়। শোপ্যাক মনে করেন, এসব বোমা হামলায় এমন হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে যাদেরকে রক্ষা করার দাবি করে ন্যাটো। ওই ঘটনায় হাজার হাজার আগ্নেয়াস্ত্র লিবিয়া ও সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের হাতে চলে যায়।

২০১১ সালে লিবিয়ায় ন্যাটোর হামলার সময় থেকে দেশটি দু’টি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। প্রতিটি সরকারই সারাদেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে লড়াই করছে। শোপ্যাক বলেন, ন্যাটো বাহিনীর বোমাবর্ষণে লিবিয়ার দেরনা এলাকার বাধগুলো সরাসরি ধসে পড়েনি কিন্তু লিবিয়ায় যুদ্ধের কারণে দেশটির সরকারের পতনের পাশাপাশি সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। আর এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে লিবিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলো সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে যায়।

শোপ্যাক এ সম্পর্কে বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এ বাস্তবতা বিশেষ করে লিবিয়ার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে যুদ্ধের এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরা হয়নি। তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ওয়াশিংটন পোস্টের মতো বিখ্যাত মার্কিন দৈনিকগুলোতে ছয় দিনে যে ৬৭টি খবর দেখেতে পেয়েছেন তার মধ্যে মাত্র ৪০টিতে যুদ্ধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেগুলোর মধ্যে আবার মাত্র তিনটিতে ওই যুদ্ধে ন্যাটোর ভূমিকার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

সবশেষে শোপ্যাক তার মন্তব্যে বলেন, ইউক্রেনে বর্তমানে যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে তাতেও ন্যাটো জোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ন্যাটো ২০২২ সালের আগে ইউক্রেনে এমন কিছু ধারাবাহিক ঘটনা ঘটিয়েছে যার ফলে রাশিয়া দেশটিতে বিশেষ সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে।#

পার্সটুডে/এমএমআই/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ