সিরিয়া কি লিবিয়ার পথে?
https://parstoday.ir/bn/news/west_asia-i153572-সিরিয়া_কি_লিবিয়ার_পথে
পার্সটুডে: বাশার আল-আসাদের পর সিরিয়া এমন এক অস্থির পরিস্থিতিতে পড়েছে যা লিবিয়ার মতো পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন।  এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিধ্বংসী যুদ্ধে জড়িত সিরিয়ায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটে। তার তখন থেকেই দেশটি একটি পরিবর্তনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করে।
(last modified 2025-11-11T14:44:42+00:00 )
অক্টোবর ৩১, ২০২৫ ১৭:১৮ Asia/Dhaka
  • সিরিয়া কি লিবিয়ার পথে?

পার্সটুডে: বাশার আল-আসাদের পর সিরিয়া এমন এক অস্থির পরিস্থিতিতে পড়েছে যা লিবিয়ার মতো পরিণতি বয়ে আনতে পারে বলে অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন।  এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিধ্বংসী যুদ্ধে জড়িত সিরিয়ায় ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন ঘটে। তার তখন থেকেই দেশটি একটি পরিবর্তনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করে।

ইরানের সরকারি বার্তা সংস্থা ইরনা'র উদ্ধৃতি দিয়ে পার্সটুডে জানিয়েছে, “হায়াত তাহরির আল-শাম” (এইচটিএস)–এর সাবেক প্রধান আবু মুহাম্মদ আল-জোলানি এখন সিরিয়ার শাসক হিসেবে একটি কেন্দ্রীভূত ও স্থিতিশীল সরকার গঠনের চেষ্টা করছেন। তবে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা, উপজাতীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ—এসব লক্ষণ সিরিয়াকে 'মুয়াম্মার গাদ্দাফি–পরবর্তী লিবিয়া'-র মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

লিবিয়ার অভিজ্ঞতা: এক সতর্কবার্তা

২০১১ সালে গাদ্দাফির পতনের পর লিবিয়া দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকারের মধ্যে বিভক্ত হয়। তখন থেকে দেশটি গৃহযুদ্ধ, তেলসম্পদের দখলদারি এবং বিদেশি শক্তির প্রভাবের কারণে অস্থিরতায় নিমজ্জিত। আজ লিবিয়া সিরিয়ার জন্য এক সতর্কতামূলক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

গঠনগত সাদৃশ্য

লেবাননের দৈনিক আল-আখবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, জোলানির প্রশাসনিক কাঠামো মূলত ইদলিবে যুদ্ধকালীন সময়ের 'হায়াত তাহরির আল-শাম' মডেলের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। যুদ্ধের সময় এটি কার্যকর হলেও এখন তা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
বর্তমানে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো অর্থনৈতিক প্রকল্প ও চোরাচালানের রুট নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, আর তাদের জোটগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

ওয়াশিংটনের কুর্দি ইস্যু নিয়ে আলোচনার চাপ, ইসরায়েলের সুয়িদায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের প্রতি সমর্থন এবং বৃহৎ পরিসরের যুদ্ধের অনুপস্থিতি—এসব বিষয় জোলানির নিরাপত্তা মডেলকে অকার্যকর করে তুলেছে।

আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় 'কেন সিরিয়ায় লিবিয়া পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা?'-শীর্ষক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "যেভাবে লিবিয়ায় ঐক্য সরকারের প্রধান আব্দুল হামিদ আল-দবিবাহ ত্রিপোলি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং খলিফা হাফতার পূর্ব ও দক্ষিণ অংশের দখলে আছেন, ঠিক তেমনভাবেই সিরিয়াও একধরনের বিভাজনের পথে হাঁটছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দামেস্কে নিয়ন্ত্রণ রাখলেও, সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তেল ও গ্যাসসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে।"

আল-জাজিরা আরও উল্লেখ করেছে, হাফতার রাশিয়ার সমর্থন পাচ্ছেন 'আল-জুফরা' ও 'আল-খাদিম' ঘাঁটি থেকে, অন্যদিকে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস মার্কিন সামরিক ঘাঁটি 'রামিলান' ও 'কোনিকো' থেকে সহায়তা পাচ্ছে।

এইভাবে সম্পদের ভৌগোলিক বিভাজন, লিবিয়ার মতোই, ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের মঞ্চ তৈরি করছে।

জাতিসংঘের সতর্কতা

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে 'জাতিসংঘের দূতের সতর্কতা: সিরিয়া লিবিয়ার  পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে' শিরোনামে জানায়, জাতিসংঘের বিশেষ দূত গেয়ার পেডারসেন সতর্ক করেছেন যে, সিরিয়া বর্তমানে 'ছুরির ধারের উপর ' দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি জোলানিকে সতর্ক করে বলেন, “তাকে তার পথ পরিবর্তন করতে হবে, যাতে দেশটি একটি কর্তৃত্ববাদী ও বন্ধ শাসনব্যবস্থায় রূপ না নেয়।”

পেডারসেন আরও সতর্ক করেন, অন্তর্বর্তী সরকার, কুর্দি গোষ্ঠী ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের পারস্পরিক অবিশ্বাস দেশটিকে আবারও গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।#

পার্সটুডে/এমএআর/৩১