শতাব্দীর বর্বরদের মুখোমুখি 'আশার জাহাজ'; গাজা উদ্ধারে ম্যাডেলিনের মিশন
-
\\\"ম্যাডেলিন\\\" জাহাজ
পার্সটুডে- গাজার জনগণের ওপর ইসরাইলি গণহত্যা ও অবরোধের মাঝে "ম্যাডেলিন" জাহাজটি মানবিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা শুরু করেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজার জনগণের ওপর ইসরাইল আক্রমণ চালিয়ে আসছে। তারা হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে এবং এই অঞ্চলের ওপর নিষ্ঠুর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। "ম্যাডেলিন" জাহাজটি গাজার নিপীড়িত জনগণকে সাহায্য করার লক্ষ্যে অনুকরণীয় সাইসকতার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা শুরু করেছে। সংহতি, আশা এবং মূল্যবান মানবিক ত্রাণ-পণ্য বহনকারী ওই জাহাজটি এখন গাজার তীরে পৌঁছেছে। ভূমধ্যসাগরের ঢেউয়ের বুকে প্রতিরোধ ও মানবতার পতাকা উড়িয়েছে ওই জাহাজ। পার্সটুডে'র এই নিবন্ধে ওই জাহাজের মিশন সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করার চেষ্টা করা হবে।
ম্যাডেলিন নামটি কোত্থেকে এসেছে?
গাজার প্রথম ফিলিস্তিনি মহিলা জেলে ম্যাডেলিন কোল্লাবের সম্মানে জাহাজটির নামকরণ করা হয়েছে ম্যাডেলিন; এটি এমন এক নাম যা দৃঢ়তা এবং সংগ্রামের প্রতীক।

এই মানবিক অভিযানের পেছনে কে?
গাজার অবরোধ ভাঙার জন্য ২০১০ সাল থেকে গঠিত আন্দোলন ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের অংশ হিসেবে পরিচালিত আন্তর্জাতিক কমিটি টু ব্রেক দ্য গাজা অবরোধ, এই পথে ৩৬টি জাহাজ পাঠিয়েছে। তারা এবারও এই যাত্রার আয়োজন করেছে।
'ম্যাডেলিন' জাহাজ কখন যাত্রা শুরু করে?
১ জুন, ২০২৫ তারিখে, ইতালির সিসিলি দ্বীপের ক্যাটানিয়া বন্দর থেকে ম্যাডেলিন ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ২,০০০ কিলোমিটারের দীর্ঘ যাত্রা শুরু করে। জাহাজটি এখন মিশরের জলসীমার কাছে গাজার দিকে সাহসের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

জাহাজটি কী বহন করছে?
আয়োজকদের মতে, ম্যাডেলিন গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যের যেসব পণ্য বহন করছে, তার মধ্যে রয়েছে; ওষুধ, ময়দা, চাল, গুঁড়ো দুধ, শিশুর ডায়াপার, নারী স্বাস্থ্যবিধি পণ্য, জল বিশুদ্ধকরণ সরঞ্জাম, হাঁটার লাঠি এবং শিশুদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ। আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাৎকারে মানবাধিকার কর্মী ইয়াসমিন আজার জোর দিয়ে বলেন যে লক্ষ্য কেবল সাহায্য পৌঁছে দেওয়া নয়, বরং গাজার জনগণকে বাঁচানোর পথ খুলে দেওয়াও। কমিটির প্রধান জাহের বিরাউই বলেন: "জাহাজটি ছোট, কিন্তু এর বার্তা বিশাল; মুক্ত জাতির দায়িত্বের প্রতীক এবং এই অপরাধ বন্ধ করার আহ্বান।"
৪. "ম্যাডেলিন"-এর সাথে কারা আছেন?
বিভিন্ন জাতীয়তার বারোজন সাহসী কর্মী জাহাজে আছেন: গ্রেটা থানবার্গ, সুইডিশ পরিবেশ ও সামাজিক ন্যায়বিচার কর্মী; রিমা হাসান, ফরাসি এমপি; ওমর ফায়াদ, মিশনটি কভার করছেন আল জাজিরার সংবাদদাতা; ফরাসি প্ল্যাটফর্ম ব্লাস্টের প্রতিবেদক ইয়ানিস মোহাম্মদী; ফ্রিডম ফ্লোটিলা মিশনে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ফরাসি কর্মী পাস্কাল মোরিরেস; ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক এবং ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের সমর্থক থিয়াগো আভিলা; আহতদের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত ফরাসি ডাক্তার ব্যাপটিস্ট আন্দ্রে; কুর্দি বংশোদ্ভূত জার্মান কর্মী ইয়াসমিন আজার; ফরাসি জলবায়ু কর্মী রিভা ফিয়ার; তুর্কি কর্মী সুয়েব ওরদু; সি শেফার্ড সামুদ্রিক সংরক্ষণ সংস্থার স্প্যানিশ সদস্য সার্জিও টোরিবিও; এবং নেদারল্যান্ডসের নৌ প্রকৌশলের ছাত্র মার্কো ভ্যান রিনিস।

ম্যাডেলিন কখন পৌঁছাবে গাজায়?
যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে চলে, তাহলে সোমবার জাহাজটি গাজা উপকূল থেকে ১০০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছাবে। ইয়াসমিন আজার ঘোষণা করেছেন যে জাহাজটি মিশরীয় উপকূলের কাছাকাছি চলে এসেছে এবং গাজা অবরোধ সমাপ্ত করার জন্য আন্তর্জাতিক কমিটি আসন্ন সময়গুলোকে "মারাত্মক" বলে অভিহিত করেছে।
ইসরাইলের প্রতিক্রিয়া কী?
ইসরাইল দৃঢ়ভাবে বলে আসছে যে তারা ম্যাডেলিনকে গাজায় প্রবেশ করতে দেবে না এবং এমনকি বল প্রয়োগের হুমকিও দিয়েছে, যেমন ২০১০ সালে মাভি মারমারার ওপর ভয়াবহ হামলায় ১০ জন তুর্কি নাগরিক নিহত হয়েছিল। ২০২৫ সালের মে মাসে, ইসরাইল আল-ধামির জাহাজে ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করে এবং এখন মিডিয়া রিপোর্ট করছে যে নৌ কমান্ডোরা ম্যাডেলিনকে আটক করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে সেনাবাহিনী জাহাজটি আটক করতে পারে এবং কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মনে করে। ম্যাডেলিন জাহাজের অন্যতম সংগঠক 'রাশাদ আল-বাজ' আল-আলম নেটওয়ার্ককে বলেছেন: জাহাজটি ড্রোন হামলার শিকার হয়েছিল, মনে করা হচ্ছে ওই ড্রোন ইসরাইলি ছিল। তিনি আরও জানান আক্রমণ সত্ত্বেও, ম্যাডেলিন গাজার দিকে যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং কয়েক ঘন্টা আগে মিশরের জলসীমায় প্রবেশ করেছে।
ইসরাইল কেন ম্যাডেলিনকে ভয় পায়?
১. অপরাধ ফাঁস হবার ভয়: ইসরাইল চায় না বিশ্ব দেখুক যে তারা গাজার জনগণকে কীভাবে মারাত্মক অবরোধের মধ্যে রেখেছে। স্বাধীন ত্রাণ সামগ্রীর আগমনের "নিরাপত্তা" সম্পর্কে তাদের মিথ্যা প্রচারণা যেন ফাঁস হয়ে না যায়।
২. প্রচারণার ব্যর্থতা: মানবিক সাহায্য প্রমাণ করে যে গাজায় সাহায্য পৌঁছানোর পথে ইসরাইলই প্রধান বাধা, হামাস নয়। নিরাপত্তার অজুহাতে সরকার শিশু এবং অসুস্থদেরও ওষুধ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করে।
৩. বৈশ্বিক ঐক্যের ভয়: মানবিক আন্দোলনগুলো ইসরাইলি দখলদারিত্ব এবং তাদের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে পারে, যেমনটি আমরা BDS প্রচারণায় দেখেছি।
৪. অবৈধ অবরোধ ভাঙা: আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গাজার ওপর অবরোধ একটি যুদ্ধাপরাধ আর এই জাহাজগুলো অবরোধ ভেঙে ইসরাইলের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
এই যাত্রা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ম্যাডেলিন কেবল গুরুত্বপূর্ণ ত্রাণই বহন করছে না বরং নাগরিক প্রতিরোধের প্রতীক এবং গাজা ট্র্যাজেডির ওপর বিশ্বব্যাপী নীরবতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্লোগানও বহন করছে। হুমকির ঝড়ের মধ্যে ম্যাডেলিন সাহসিকতার সাথে গাজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে; যে যাত্রা মানবিক সংহতির ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করতে পারে।#
পার্সটুডে//এনএম/৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।