ট্রাম্পের রাশিয়া-বিরোধী হুমকি কি এবার বিফলে যাচ্ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i150872
পার্সটুডে: রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাগযুদ্ধ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, ওয়াশিংটন এখন পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েনের মতো সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।
(last modified 2025-08-02T12:17:45+00:00 )
আগস্ট ০২, ২০২৫ ১৮:১৫ Asia/Dhaka
  • ডোনাল্ড ট্রাম্প - দিমিত্রি মেদভেদেভ
    ডোনাল্ড ট্রাম্প - দিমিত্রি মেদভেদেভ

পার্সটুডে: রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাগযুদ্ধ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে, ওয়াশিংটন এখন পরমাণু শক্তিচালিত সাবমেরিন মোতায়েনের মতো সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে।

পার্সটুডে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত শুক্রবার (১ আগস্ট) ঘোষণা করেছেন যে, রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভের উত্তেজক বক্তব্যের জবাবে তিনি দুটি পরমাণু সাবমেরিন রাশিয়ার কাছাকাছি কৌশলগত স্থানে মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তকে "অভূতপূর্ব" আখ্যা দিয়ে মেদভেদেভের বক্তব্যকে "খুবই উস্কানিমূলক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, "যদি এসব বোকামিপূর্ণ ও উত্তেজক বক্তব্য কেবল কথার কথা না হয়ে বাস্তবিকই গুরুতর হয়, তাহলে আমরা প্রস্তুত।"

অন্যদিকে, ২৯ জুলাই ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়াকে শুল্ক ও অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হবে। ট্রাম্প রাশিয়াকে ১০ দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, "এই সময়ের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করুন, নতুবা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।"

৩১ জুলাই ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেন: "রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় কোনো বাণিজ্যই নেই। আসুন এভাবেই চলি। আর রাশিয়ার সেই পরাজিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভকে বলি—যে এখনও ভাবে সে প্রেসিডেন্ট—সাবধান! তোমার কথাবার্তায়!"

জুলাই মাসে ট্রাম্প প্রথমে রাশিয়াকে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধবিরতিতে আসার জন্য ৫০ দিনের সময় দেন, পরে তা কমিয়ে ১০-১৫ দিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু মেদভেদেভ ট্রাম্পের এই আলটিমেটামকে উপহাস করে টেলিগ্রামে লিখেন, "যদি রাশিয়ার একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের কয়েকটি কথাই মার্কিন প্রেসিডেন্টকে এতটা ক্ষেপিয়ে তুলতে পারে, তাহলে স্পষ্ট যে রাশিয়া সঠিক পথেই আছে এবং আমরা আমাদের পথে চলব।"

এতে করে দুই পক্ষের যুদ্ধংদেহী বাক্যবিনিময় তীব্রতর হয়। মেদভেদেভ রাগান্বিত হয়ে ট্রাম্পকে "ডেড হ্যান্ড" (মৃত হস্ত) নামক স্নায়ুযুদ্ধকালীন পরমাণু অস্ত্র ব্যবস্থার কথা স্মরণ করিয়ে দেন—এটি একটি স্বয়ংক্রিয় পরমাণু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যা সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি করেছিল।

ট্রাম্প মেদভেদেভের এই প্রতিক্রিয়াকে "অত্যন্ত বিপজ্জনক" আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেন।  ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লেখেন, ‘দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন যথাযথ স্থানে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছি। বোকামিপূর্ণ ও উত্তেজক ওই সব মন্তব্য এর চেয়েও বেশি কিছু।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, ‘শব্দগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রায়ই অপ্রত্যাশিত পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। আমি আশা করি, এটি এমন ঘটনাগুলোর একটি হবে না।’

এরপর মেদভেদেভ মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামকে "বৃদ্ধ" বলে সম্বোধন করে লিখেন, "তোমরা বা ট্রাম্প কেউই নির্ধারণ করতে পারবে না কখন আলোচনায় বসতে হবে। আমরা আলোচনায় বসব যখন আমাদের সামরিক অভিযানের সকল লক্ষ্য অর্জিত হবে।"

বিশ্লেষকদের মতে, মেদভেদেভের এই ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া—যা নিঃসন্দেহে পুতিনের সমর্থনপুষ্ট—ট্রাম্পকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছে। ট্রাম্প তার প্রথম ও বর্তমান প্রেসিডেন্সিতে সর্বদা অন্যান্য দেশের প্রতি ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন এবং বহুবার বিদেশি নেতাদের প্রতি অপমানজনক ভাষা ব্যবহার করেছেন। তিনি সাধারণত আশা করেন যে তার দাবিগুলো কোনো আলোচনা ছাড়াই মেনে নেওয়া হবে।

এর উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো- সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি। যদিও ইউরোপীয় নেতারা ট্রাম্পের চাপে নতিস্বীকার করতে অনিচ্ছুক ছিলেন, তবুও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মার্কিনির উপর নির্ভরশীলতা এবং অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়েন স্কটল্যান্ডে ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে ইউরোপ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকৃত পণ্যে ১৫% শুল্ক মেনে নেন। ট্রাম্প দাবি করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে ইউরোপ মার্কিন শক্তি পণ্য কিনতে এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

মেদভেদেভ এই চুক্তিকে "ইউরোপের জন্য অপমানজনক" বলে আখ্যায়িত করে টেলিগ্রামে লিখেন, "এই চুক্তি ইউরোপীয় বাজারকে রক্ষার সকল ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং মার্কিন পণ্যের উপর শুল্ক শূন্যে নামিয়ে এনেছে।"

রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক এই উত্তপ্ত সম্পর্ক থেকে স্পষ্ট যে, রাশিয়া এবার ট্রাম্পের কৌশলকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে রাশিয়া ট্রাম্পের হুমকিকে উপহাসের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে, যা তাদের আত্মবিশ্বাস ও সামরিক শক্তি—বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার—এর প্রতি নির্ভরতা প্রতিফলিত করে।

সবশেষে বলা যায়, রাশিয়া এবার যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে মাথা নোয়াতে রাজি নয় এবং ট্রাম্পের কৌশলেরই পাল্টা প্রয়োগ করছে। পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়া এবার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ট্রাম্পের চাপকে উপহাস ও অবজ্ঞায় পরিণত করেছে। ট্রাম্পের যে কৌশল ছিল—শক্তি প্রদর্শন, সময়সীমা, শাস্তির হুমকি—তা এবার রাশিয়ার ক্ষেত্রে কাজ করেনি।#

পার্সটুডে/এমএআর/২