'ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ট্রাম্পের যোগদান ছিল বোকামিপূর্ণ, ইউক্রেন ধ্বংসের মুখে'
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151244-'ইরানের_বিরুদ্ধে_যুদ্ধে_ট্রাম্পের_যোগদান_ছিল_বোকামিপূর্ণ_ইউক্রেন_ধ্বংসের_মুখে'
পার্সটুডে : শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমার গতকাল (রোববার) এক আলোচনায় ইউক্রেনে পশ্চিমাদের কৌশলগত ব্যর্থতা, বোকামিপূর্ণভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদান এবং গাজার গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকে 'ওয়াশিংটনের গভীর সংকটের লক্ষণ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
(last modified 2025-09-11T14:06:22+00:00 )
আগস্ট ১৮, ২০২৫ ১৬:৪৯ Asia/Dhaka
  • অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমার
    অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমার

পার্সটুডে : শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের বিশিষ্ট অধ্যাপক জন মিয়ারশাইমার গতকাল (রোববার) এক আলোচনায় ইউক্রেনে পশ্চিমাদের কৌশলগত ব্যর্থতা, বোকামিপূর্ণভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে যোগদান এবং গাজার গণহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকে 'ওয়াশিংটনের গভীর সংকটের লক্ষণ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে আলাস্কায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি দ্রুতই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে একে শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত এবং বিশ্ব সমীকরণে ওয়াশিংটনের ভূমিকাকে নতুনভাবে যাচাইয়ের পরীক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তবে বৈঠকটি কোনো সুনির্দিষ্ট ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়। এ কারণে ইউক্রেন যুদ্ধ ও ট্রাম্পের সাম্প্রতিক অবস্থান নিয়ে নতুন করে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ: রাশিয়ার জন্য ‘অস্তিত্বের লড়াই’

এই প্রসঙ্গে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশিষ্ট অধ্যাপক এবং বাস্তববাদী তত্ত্বের পরিচিত তাত্ত্বিক জন মিয়ারশাইমার বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ রাশিয়ার জন্য এক ‘অস্তিত্বের লড়াই’। আর আমেরিকা ভুল সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মতো ব্যয়বহুল সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে।

মিয়ারশাইমার পুতিনের ইউরোপ ও আমেরিকার অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যানের কথা উল্লেখ করে বলেন, "পুতিন সাম্প্রতিক বৈঠকে তার আচরণ ও কৌশল পরিচালনায় অসাধারণ কাজ করেছেন। এটাই ছিল একমাত্র কাজ যা তাকে করতে হয়েছিল। তাকে শুধু বৈঠকে উপস্থিত থাকতে হয়েছিল এবং ট্রাম্পের কূটনৈতিক, বুদ্ধিমান ও পেশাদার আচরণ প্রদর্শন করতে হয়েছিল।"

এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক আরও বলেন, "পুতিনের স্পষ্টভাবে যুদ্ধবিরতির ধারণা প্রত্যাখ্যান করার পর, ট্রাম্প এখন পিছু হটেছেন এবং তিনিও শান্তি চাইছেন। কিন্তু রাশিয়া ভালো করেই জানে, পশ্চিমাদের আসল লক্ষ্য ইউক্রেনকে সময় দেওয়া যাতে তারা পুনরায় সজ্জিত হয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারে। রাশিয়ার কাছে ন্যাটোতে ইউক্রেনের সম্ভাব্য যোগদানও এক অস্তিত্বগত হুমকি।"

রাশিয়ার শর্ত ও অচলাবস্থা

মিয়ারশাইমার তার বক্তব্যে বলেন, রাশিয়ার কয়েকটি স্পষ্ট শর্ত রয়েছে:

১. চারটি দখলকৃত প্রদেশ ও ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেওয়া,

২. ইউক্রেনকে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত করা

৩. ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা ধ্বংস করা, যাতে তা রাশিয়ার জন্য হুমকি না হয়

মিয়ারশাইমার বলেন, "এই শর্তগুলো পশ্চিমের জন্য অগ্রহণযোগ্য, তাই শান্তি চুক্তি অসম্ভব।"

ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ: পতনের দ্বারপ্রান্তে

মিয়ারশাইমার বলেন, “রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ সুসংহত হলে ইউক্রেন তার ২০ শতাংশ ভূখণ্ড হারাবে। এটি কিয়েভের জন্য এক ট্র্যাজেডি।”

তার মতে, ইউক্রেন শেষ পর্যন্ত ভেঙে পড়তে বাধ্য। জেলেনস্কিকে রাশিয়ার শর্ত মেনে নিতে হবে। বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ হবে পরাজয় মেনে নেওয়া। কিন্তু শুধু ইউক্রেন নয়, পশ্চিমাও নিজের পরাজয় স্বীকার করতে চায় না, ফলে সংঘাত আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

ট্রাম্পের অবিবেচক যুদ্ধ  

মিয়ারশাইমার ইরান প্রসঙ্গে বলেন, “ইসরায়েলের ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেছে। বাইডেন দু’বার চাপ থাকা সত্ত্বেও ইরানবিরোধী যুদ্ধে সরাসরি জড়াননি, যা ছিল বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। কিন্তু ট্রাম্প সম্পূর্ণ অবিবেচকভাবে এই যুদ্ধে প্রবেশ করেছেন এবং এখন আমেরিকাকে এতে জড়িয়ে ফেলেছেন।”

আমেরিকার নৈতিক ও কৌশলগত সংকট

মিয়ারশাইমার সতর্ক করে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখন গভীর সংকটে রয়েছে। একদিকে তারা গাজার গণহত্যায় অংশীদার। এমনকি যারা ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করতে চায় না, তারাও স্বীকার করছে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ঘটছে। ফলে কৌশলগত ও নৈতিক দুই দিক থেকেই ট্রাম্প সরকারের কার্যকলাপ বহু মানুষকে হতাশ ও উদ্বিগ্ন করেছে।”#

পার্সটুডে/এমএআর/১৮