নতুন প্রজন্মের রিপাবলিকানদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি ঘৃণা কেন বাড়ছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151298-নতুন_প্রজন্মের_রিপাবলিকানদের_মধ্যে_ইসরায়েলের_প্রতি_ঘৃণা_কেন_বাড়ছে
পার্স টুডে – গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকান জনমতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, যা কেবল ডেমোক্র্যাটদেরই নয়, রিপাবলিকানদেরও প্রভাবিত করেছে।
(last modified 2025-08-21T11:49:07+00:00 )
আগস্ট ২০, ২০২৫ ১৭:৫০ Asia/Dhaka
  • হোয়াইট হাউসের সামনে ইহুদিবাদী ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ
    হোয়াইট হাউসের সামনে ইহুদিবাদী ইসরায়েল বিরোধী বিক্ষোভ

পার্স টুডে – গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার সাথে সাথে আমেরিকান জনমতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা দিয়েছে, যা কেবল ডেমোক্র্যাটদেরই নয়, রিপাবলিকানদেরও প্রভাবিত করেছে।

মার্কিন কংগ্রেসের সাথে সম্পর্কিত প্রকাশনা দ্য হিল এক প্রতিবেদনে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের বিষয়ে আমেরিকান রিপাবলিকানদের মধ্যে প্রজন্মগত ব্যবধান পরীক্ষা করে লিখেছে: "আমেরিকার ডানপন্থী এবং রিপাবলিকানদের মধ্যেও, ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের ক্ষেত্রে পুরানো এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।"

ঐতিহ্যগতভাবে, রিপাবলিকান পার্টি ইসরায়েলের একনিষ্ঠ সমর্থক, কিন্তু তরুণ ডানপন্থীদের মধ্যে, তেল আবিবের প্রতি সন্দেহ এবং এমনকি বিরোধিতার অনুভূতি ক্রমশ বাড়ছে। নানা সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে জানা যায় যে ইসরায়েলের প্রতি ঐতিহ্যবাহী রিপাবলিকান সমর্থন প্রজন্মগতভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, পুরোনো প্রজন্ম এখনও ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থাকে জোরালোভাবে সমর্থন করে, কিন্তু তরুণ প্রজন্ম সন্দেহপ্রবণ এবং বিশ্বাস করে যে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপ-বিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা উচিত এবং ওয়াশিংটনের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, ৫০ বছরের কম বয়সী রিপাবলিকানদের মধ্যে ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ২০২২ সালে ৩৫% থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ৫০% হয়েছে। সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে, ৫৩% আমেরিকানের ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, যা ২০২২ সালে ৪২% ছিল।

মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে জর্জিয়ার প্রতিনিধি মার্জোরি টেলর গ্রিন, গাজায় ইসরায়েলকে "গণহত্যার" জন্য অভিযুক্ত রিপাবলিকানদের অন্যতম। আরেকজন রিপাবলিকান কেন্টাকির প্রতিনিধি টমাস ম্যাসি বিশ্বাস করেন যে এখন আরও বেশি মানুষ ইসরায়েলের প্রতি আমেরিকার সমর্থন সম্পর্কে তাদের পূর্বের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব প্রকাশ করার সাহস পাচ্ছেন। এই রিপাবলিকান প্রতিনিধি বারবার বলেছেন যে ইসরায়েল দরিদ্র নয় এবং তাদের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন নেই, এবং ইসরায়েলকে সমর্থনকারী বিলের বিরোধিতার জন্য বারবার ইহুদি-বিদ্বেষের অভিযোগ ব্যবহার করা হাস্যকর।

গাজা উপত্যকায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং ফিলিস্তিনিদের গণহত্যা ও গাজা যুদ্ধের সময় ইসরায়েলের অব্যাহত নজিরবিহীন অপরাধ, ২০২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভের পর থেকে ব্যাপক জনবিক্ষোভের পাশাপাশি এক অভূতপূর্ব ছাত্র আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে।

গাজায় ইসরায়েলের অপরাধ, বিশেষ করে গণহত্যার প্রতিবাদে, সেইসাথে এই অঞ্চলে অনাহার ও দুর্ভিক্ষের অস্ত্র ব্যবহারের প্রতিবাদে, সেইসাথে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় সাহায্য বৃদ্ধির আহ্বান জানাতে এই বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। যা এখনও কমবেশি চলমান, যদিও মার্কিন সরকারের কাছ থেকে এর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং এইসব বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের শাস্তি দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি, প্রথমবারের মতো, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং প্রশাসক বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দিয়েছেন।

আমেরিকান সমাজে ফিলিস্তিনিদের প্রতি এমনকি হামাসের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেশটির "তরুণ প্রজন্মের" মনোভাবের পরিবর্তন, যার মধ্যে তরুণ রিপাবলিকানরাও রয়েছেন। এই প্রজন্ম এমন একটি প্রজন্ম যারা শীঘ্রই সরকার, গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রবেশ করবেন এবং পরিবার গঠনের মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্মকে লালন-পালনের দায়িত্ব নেবেন। বর্তমানে, ফিলিস্তিনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতি মার্বিন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্মের পরিবর্তিত মনোভাব ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমেরিকান একাডেমিক নিষেধাজ্ঞা বৃদ্ধির পদক্ষেপেও প্রতিফলিত হচ্ছে।

অবশ্য জরিপের ফলাফল অনুসারে, এটা বলা যেতে পারে যে আমেরিকান সমাজের অন্যান্য অংশেও একই রকম পরিবর্তন ঘটছে, যদিও ধীরে ধীরে, যা ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে ঐতিহ্যবাহী ধারণার উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হচ্ছে। আমেরিকান সমাজে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ইসরায়েলের অমানবিক নীতি ও কর্মকাণ্ডের প্রকৃতি প্রকাশের পরিণতি। 

অতএব, আশা করা যায় যে গাজা যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এবং এর সাথে সম্পর্কিত ঘটনাবলী ও প্রতিবেদন প্রকাশের সাথে সাথে, বিশেষ করে নারী ও শিশু হত্যার ঘটনা প্রকাশের পাশাপাশি গাজার মানবিক সংকট সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকায় আমেরিকান জনমতের মধ্যে, বিশেষ করে দেশটির তরুণদের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পাবে। এ হচ্ছে এমন এক বিষয় যা কখনও ইসরায়েল ও ট্রাম্প সরকারের কাম্য নয়। 

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের সমালোচক ছাত্র, ছাত্র সংগঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উপর কঠোর দমন-পীড়ন আবারও পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে মিথ্যা স্লোগান আর দাবিগুলোর অসারতাকে তুলে ধরেছে। এখন, জরিপের ফলাফল অনুসারে, মনোভাবের এই পরিবর্তনের মধ্যে রিপাবলিকানদের তরুণ প্রজন্মও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যারা ঐতিহ্যগতভাবে আমেরিকান সমাজের রক্ষণশীল অংশ হিসেবে বিবেচিত। আর এ বিষয়টি রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের জন্য একটি বিপদ সংকেত, যার অর্থ হল আমেরিকানদের মধ্যে, এমনকি রিপাবলিকানদের মধ্যেও, আগের মতো সামাজিক ভিত্তি নেই তাদের। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।