ট্রাম্প বনাম মোদি: মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শুরুর সম্ভাব্য পরিণতি
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151502-ট্রাম্প_বনাম_মোদি_মার্কিন_শুল্ক_যুদ্ধের_আনুষ্ঠানিক_শুরুর_সম্ভাব্য_পরিণতি
পার্স টুডে - ভারত থেকে আমদানি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।
(last modified 2025-08-28T14:01:06+00:00 )
আগস্ট ২৮, ২০২৫ ১৮:১৩ Asia/Dhaka
  • ট্রাম্প বনাম মোদি: মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শুরুর সম্ভাব্য পরিণতি
    ট্রাম্প বনাম মোদি: মার্কিন শুল্ক যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক শুরুর সম্ভাব্য পরিণতি

পার্স টুডে - ভারত থেকে আমদানি পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০% শুল্ক কার্যকর করা হয়েছে।

মার্কিন সরকার দেশটির রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশে ২৭শে আগস্ট, বুধবার থেকে ভারত থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর প্রায় ৫০% শুল্ক আরোপ করেছে; এই পরিমাণের অর্ধেক রাশিয়ান তেল কেনার জন্য "শাস্তি" হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতের বিরুদ্ধে নতুন শুল্কের সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের অর্থ হল বাণিজ্য ভারসাম্যের বাইরেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাণিজ্য নীতিকে একটি হাতিয়ার ব্যবহার করা, যার মধ্যে রাশিয়ার সাথে জ্বালানি বাণিজ্যকারী দেশগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করাও অন্যতম।

মার্কিন এই পদক্ষেপ ভারতীয় নানা পণ্যের রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। এসব পণ্যের তালিকায় রয়েছে ওষুধ-পত্র, দামি পাথর,  ডাল জাতীয় শস্য ও গাড়ির যন্ত্রাংশ। ভারতের শেয়ার বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ কমে যেতে পারে এর ফলে।  এ ছাড়াও মার্কিন আমদানিকারকরা চীনের কাছ থেকে পণ্য না কিনে ভারতের কাছ থেকে পণ্য কেনার যে কৌশলগত নীতি গ্রহণ করেছিল তাও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। 

ট্রাম্প প্রথমে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপ করেছিলেন। কিন্তু ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় এর শাস্তি হিসেবে সেকেন্ডারি ট্যারিফ আরোপ করেন আরও ২৫ শতাংশ যাতে তেল বিক্রি খাত থেকে আয় করা ও লাভ করা হোয়াইট হাউজের ভাষায় রাশিয়ার জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। 

৫০ শতাংশ হারে মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি ভারতকে বেশ ক্ষুব্ধ করেছে। ফলে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে বেড়েছে উত্তেজনা। ট্রাম্পের প্রথমবারের শাসনামলের মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উচ্চ পরিষদের প্রধান জন বোল্টন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভারত ট্রাম্পের পক্ষ থেকে শুল্ক খাতে বড় ধরনের আঘাত পেলেও চীন ও রাশিয়া তেমন একটা চাপের শিকার হয়নি। তিনি বলেন, ভারতকে যতই কোনঠাসা করা হবে ততই ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

জানা গেছে গত কয়েক সপ্তায় ট্রাম্প বেশ কয়েকবার টেলিফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও মোদি ফোন ধরেননি। মনে হচ্ছে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক ক্রমেই আরও খারাপ হচ্ছে। যদিও উভয় সরকারই পূর্বে এই সম্পর্ককে "একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব" হিসাবে বর্ণনা করেছে। ট্রাম্প স্পষ্টতই উত্তেজনা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু মোদির কথা বলতে অস্বীকৃতি তাকে ক্ষুব্ধ করেছে। 

ট্রাম্পের সাথে কথা বলতে মোদির অস্বীকৃতির সাথে মার্কিন প্রেসিডেন্টের আলোচনার ফলাফল বিকৃত করার উদ্বেগ জড়িত বলে জানা গেছে, বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে তিনি বাণিজ্য চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পারমাণবিক সংঘাত রোধ করেছেন, যে দাবি ভারত সরকার অস্বীকার করেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ধরে ভারতকে "শুল্ক রাজা" হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন। তিনি নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তারা শুল্ক এবং কঠোর মানদণ্ডের মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষা করছে, যে সমস্যাগুলি পূর্বে মোটরসাইকেল এবং গল্ফ সরঞ্জামের মতো কিছু আমেরিকান পণ্যের রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বছরের পর বছর ধরে ভারতকে "শুল্ক রাজা" হিসেবে উল্লেখ করে আসছেন, নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তারা শুল্ক ও কঠোর মানদণ্ডের মাধ্যমে তার অভ্যন্তরীণ বাজারকে রক্ষা করছে, যে বিষয়গুলো অতীতে মোটরসাইকেল এবং গল্ফ সরঞ্জামের মতো কিছু আমেরিকান পণ্যের রপ্তানিকে প্রভাবিত করেছে। এই বছর, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা ধীরগতিতে এগিয়েছে, এবং ভারতীয় কৃষকদের সহায়তা দেয়া বা ভর্তুকি প্রদান এখনও একটি সংবেদনশীল বিষয়।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে মার্কিন জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আমদানি ৭০% বৃদ্ধি করে ৬.৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছে ভারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও নয়াদিল্লির এইসব প্রচেষ্টা ট্রাম্পের শুল্ক সিদ্ধান্তকে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে।

মার্কিন নয়া শুল্ক আরোপ ভারতের ঘরোয়া রাজনীতির ওপরও প্রভাব ফেলেছে। মোদি ক্ষুদ্র ব্যবসা ও কৃষকদের সহায়তা দেয়াকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলছেন। ট্রাম্পের নাম না নিয়েই মোদি বলছেন, "চাপ যাই হোক না কেন, ভারত জিতবে"। তিনি ভারতের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতার পুনর্বিন্যাস ও নতুন নতুন শরিক খুঁজে বের করার ওপরও জোর দিয়েছেন। আর এই পদক্ষেপের মধ্যে থাকবে চীন ও ল্যাটিন আমেরিক এবং পূর্ব ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নতুন বাণিজ্য শরিক খুঁজে নেয়া।

মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির এত উচ্চ হার কেবল ব্রাজিলের পর ভারতের ওপরই আরোপ করেছেন ট্রাম্প। ফলে গত ২৫ বছরে ভারত ও ওয়াশিংটনের সক্রিয় কূটনীতির মাধ্যমে ভারতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর ব্যাপক উপস্থিতির যে ধারা জোরদার হয়েছিল তা সংকটাপন্ন হবে। মার্কিন আমদানিকারকরা চীনের পরিবর্তে ভারতকে গুরুত্ব দেয়ার যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা এখন ব্যাপক ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।  

তবে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির অধিকারী ভারতের ওপর বিশেষ করে ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লির মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের উপর এই মার্কিন সিদ্ধান্তের পরিধি ও অব্যাহত প্রভাব আগামী সপ্তাহ ও মাসগুলিতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
ভারত মার্কিন চাপের মুখে নত হয়নি, বরং রাশিয়া ও চীনের সাথে দ্রুত অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করেছে, যা তার কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বজায় রাখার দৃঢ় সংকল্প তুলে ধরছে। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।