কূটনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও ইসরায়েল-অস্ট্রেলিয়া গোপন সহযোগিতা অব্যাহত থাকার রহস্য
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151802-কূটনৈতিক_উত্তেজনা_সত্ত্বেও_ইসরায়েল_অস্ট্রেলিয়া_গোপন_সহযোগিতা_অব্যাহত_থাকার_রহস্য
পার্স টুডে - ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং কূটনীতিকদের ভিসা বাতিলের ফলে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে, তবুও উভয় পক্ষের মধ্যে নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।
(last modified 2025-09-09T10:09:59+00:00 )
সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২৫ ১৭:৩৩ Asia/Dhaka
  • ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী : এন্থনি আলবানেস (বামে) ও ডানে নেতানিয়াহু
    ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী : এন্থনি আলবানেস (বামে) ও ডানে নেতানিয়াহু

পার্স টুডে - ইসরায়েল ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং কূটনীতিকদের ভিসা বাতিলের ফলে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে, তবুও উভয় পক্ষের মধ্যে নিরাপত্তা, প্রযুক্তিগত এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান সরকার ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর এবং কিছু চরমপন্থী ইহুদিবাদীদের ভিসা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর ইসরায়েল অস্ট্রেলিয়ান কূটনীতিকদের ভিসা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পার্স টুডে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়াং ঘোষণা করেছেন যে ইসরায়েল এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শান্তির জন্য আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। 

এই অবস্থানের প্রতিক্রিয়ায়, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে একজন দুর্বল রাজনীতিবিদ বলে অভিহিত করেন এবং তার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ান ইহুদিদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন।

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ঘোষণা করেছেন যে তার দেশ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে, এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইসরায়েলি সরকার। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের দাবি এবং অবস্থান এমন এক সময়ে এসেছে যখন দেশটি কেবল ইহুদিবাদী দখলদার কর্তৃপক্ষের সাথে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক হ্রাস করতে ইচ্ছুক নয়, বরং সাম্প্রতিক মাসগুলিতে এই সম্পর্কগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ান ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের অবস্থানের বিপরীতে, দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে এবং সাম্প্রতিক মতপার্থক্যগুলি কূটনৈতিক উত্তেজনার বাইরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনি।

জনমত ও মানবাধিকার সংস্থাগুলি অস্ট্রেলিয়াকে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানালেও, অস্ট্রেলিয়ান সরকার তেল আবিবের সাথে নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। এই দ্বন্দ্ব অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র নীতির নৈতিক অগ্রাধিকার সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানিগুলো ইসরায়েল-নির্ভর স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগ করেছে। অস্ট্রেলিয়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কোম্পানিগুলোর প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। অস্ট্রেলিয়ান কর্মকর্তাদের অবস্থান এবং ইহুদিবাদী শাসনের অপরাধ মোকাবেলায় একটি সিদ্ধান্তমূলক নীতি গ্রহণে তাদের অস্বীকৃতির বিপরীতে, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক ও কর্মীরা সাম্প্রতিক মাসগুলিতে গাজার জনগণের সমর্থনে ইহুদিবাদীদের অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন।

আরব গোষ্ঠী, প্রগতিশীল ইহুদি এবং শান্তি কর্মী সহ ৮০ টিরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক সমাজের সংগঠন গাজায় গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি জমা দিয়েছে। এই বিবৃতিতে জোর দেয়া হয়েছে যে, গণহত্যা প্রতিরোধ কনভেনশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অন্যথায় এটি অপরাধে জড়িত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। এই পদক্ষেপটি অস্ট্রেলিয়ান সরকারের ওপর আরও সক্রিয় ও নৈতিক অবস্থান গ্রহণের জন্য নাগরিক সমাজের তীব্র চাপেরই প্রতিফলন।

অস্ট্রেলিয়ান কর্মীরা মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যুদ্ধাপরাধের ঘটনা প্রকাশ করে আসছেন। অস্ট্রেলিয়ার কিছু লেখক, শিল্পী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও ইসরায়েলের প্রতি সরকারি সমর্থন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নিবন্ধ এবং প্রকাশ্য বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলো থেকে বোঝা যায় যে কিছু সরকারী সরকারী অবস্থানের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনে একটি উচ্চ ও স্পষ্ট কণ্ঠস্বর রয়েছে।

বাহ্যিক লোক-দেখানো তৎপরতা এবং প্রচারণার স্লোগানের আলোকে অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলো প্রায়ই বাহ্যিকভাবে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার রক্ষা করে, কিন্তু বাস্তবে এইসব দেশ কেবল নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয় নৈতিকতা এবং মানবতা লঙ্ঘন করে। এ অবস্থার বিপরীতে পশ্চিমা বিশ্ব-জনমত ধীরে ধীরে দাবি করছে যে পশ্চিমা সরকারগুলো ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থাকে নিঃশর্তভাবে সমর্থন দেয়া বন্ধ করুক।

পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডে বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে ছাত্র বিক্ষোভের এক বিশাল জোয়ার প্রত্যক্ষ করেছে। এইসব ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে পশ্চিমা সরকারগুলো এবং জনমতের মধ্যে ব্যবধান ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। #

পার্স টুডে/এমএএইচ/০৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন