হত্যাকাণ্ড, দাঙ্গা ও অসন্তোষ বাড়ছে; যুক্তরাষ্ট্র কি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে?”
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152072-হত্যাকাণ্ড_দাঙ্গা_ও_অসন্তোষ_বাড়ছে_যুক্তরাষ্ট্র_কি_গৃহযুদ্ধের_দ্বারপ্রান্তে
পার্সটুডে- যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ একদিকে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদ ও সহিংসতা, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার ঘটনাও বাড়ছে; যা আবারও সেদেশের গৃহযুদ্ধকালীন অস্থির ইতিহাসের স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে।
(last modified 2025-09-18T10:53:26+00:00 )
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫ ১৭:৩২ Asia/Dhaka
  • হত্যাকাণ্ড, দাঙ্গা ও অসন্তোষ বাড়ছে; যুক্তরাষ্ট্র কি গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে?”

পার্সটুডে- যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কারণ একদিকে ছড়িয়ে পড়ছে প্রতিবাদ ও সহিংসতা, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার ঘটনাও বাড়ছে; যা আবারও সেদেশের গৃহযুদ্ধকালীন অস্থির ইতিহাসের স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছে।

নিউজউইকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত সপ্তাহে রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী চার্লি কার্কের হত্যাকাণ্ড গোটা যুক্তরাষ্ট্রকে নাড়িয়ে দিয়েছে। এ ঘটনাকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক সহিংসতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে সহিংসতাকে ‘স্বাভাবিক কৌশল’ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে এই সহিংসতাকে অনেক সময় নতুন বা বাইরের প্রভাব হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়, তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাণঘাতী সহিংসতা আমেরিকার রাজনীতির বহু পুরনো বৈশিষ্ট্য। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনবিদ জন মাইকেলস লিখেছেন, আমেরিকানরা ক্রমেই এক ধরনের অকল্পনীয় সহিংসতায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। এর সবচেয়ে ভয়াবহ দৃষ্টান্ত হচ্ছে গণগুলিবর্ষণ, যা প্রায়ই স্কুল ও উপাসনালয়ে ঘটছে।

অনেক বিশ্লেষক ২০২১ সালের কংগ্রেস ভবন দাঙ্গাকে আমেরিকার সমকালীন রাজনীতির মোড় ঘোরানো মুহূর্ত বলে মনে করেন। সেদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা কংগ্রেসে হামলা চালায়, এর মাধ্যমে তারা জো বাইডেনের বিজয় বাতিল করার চেষ্টা করে।

নিউজউইকের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এ দাঙ্গা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতার সবচেয়ে স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ। বিশেষ করে ২০২০ সালের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রাজনৈতিক বিভাজন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং লকডাউনের অস্থির পরিবেশ বিষয়টিকে আরও ঘনীভূত করেছিল।

প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি হত্যাচেষ্টা, জুন মাসে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মেলিসা হর্টম্যানকে হত্যা এবং ওয়াশিংটন ডিসির ইহুদি জাদুঘর ও জর্জিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রসহ নানা স্থানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলার কথা।

লেখকের মতে, আমেরিকায় রাজনৈতিক সহিংসতার শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া দেশটির প্রথম একশো বছর কেটেছে স্থানীয় আদিবাসীদের সংগঠিত গণহত্যা, প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর কর, ধর্ম, জাতি ও শাসনব্যবস্থা নিয়ে সংঘর্ষ এবং দাসপ্রথা নিয়ে ভয়াবহ দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে—যা শেষ পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে গড়ায়।

সেই যুদ্ধের অব্যবহিত পরেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রক্তাক্ত রাজনৈতিক অধ্যায় শুরু হয়। মাত্র ৩৫ বছরের মধ্যে তিন প্রেসিডেন্ট—আব্রাহাম লিংকন, জেমস গারফিল্ড ও উইলিয়াম ম্যাকিনলি—দায়িত্বে থাকাকালে নিহত হন। পাশাপাশি, উনিশ শতকের শেষভাগ ও বিশ শতকের শুরুর দিকে অন্যান্য সহিংসতাও ব্যাপক আকার নেয়।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেফ গুডউইন মনে করেন, আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনে সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। তার মতে, কয়েক দশক ধরে বৈষম্য এত তীব্র ছিল না, বর্তমানে শ্রমজীবী শ্রেণি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। একইসঙ্গে, চরম ডানপন্থীদের উত্থানও কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অসলো শান্তি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক ক্রিস্টিন ড্যাভেনপোর্ট বলছেন, রাজনৈতিক সহিংসতার আলোচনায় সরকারের ভূমিকা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়।

তিনি সতর্ক করে বলেন, আমেরিকানদের মনে রাখা উচিৎ সরকারও প্রায়ই বিদ্রোহ, সন্ত্রাস ও সহিংস অসন্তোষকে উসকে দেয় নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য।

ড্যাভেনপোর্টের মতে, যদি আমরা স্বীকার করি যে সরকারগুলো মানুষকে সহিংসতার দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রেরণা রাখে, তবে নাগরিকরা আরও সচেতন হয়ে উঠবে। তারা প্রমাণ চাইবে, ঘটনাকে বিশ্লেষণ করবে এবং সকল দায়িত্বশীলকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সচেষ্ট হবে।#

পার্সটুডে/এসএ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।