ফিলিস্তিন সংকটে পাশ্চাত্যের অনৈতিক অবস্থান
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152222-ফিলিস্তিন_সংকটে_পাশ্চাত্যের_অনৈতিক_অবস্থান
পার্স টুডে - ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন যে তিনি গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধকে গণহত্যা বলে মনে করেন না।
(last modified 2025-09-23T05:51:47+00:00 )
সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৫ ১৬:০৯ Asia/Dhaka
  • ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ
    ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ

পার্স টুডে - ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন যে তিনি গাজায় ইহুদিবাদী সরকারের অপরাধকে গণহত্যা বলে মনে করেন না।

গাজায় ইহুদিবাদী ইসরায়েলি অপরাধযজ্ঞের সহযোগী ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন যে তিনি এই অঞ্চলে যা ঘটছে তা গণহত্যা বলে মনে করেন না। ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন যে এটি কেবল একটি রাজনৈতিক বিবৃতি নয়। পর্যাপ্ত প্রমাণ, স্পষ্ট আইনি ভিত্তি এবং নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে কেবল বিচারক বা ইতিহাসবিদরা একটি ঘটনাকে গণহত্যা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারেন।

প্যারিস একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে- এ কথা উল্লেখ করে ফরাসি রাষ্ট্রপতি বলেছেন, গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া অপরিহার্য।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কাইর স্টারমারও ঘোষণা করেছেন যে শান্তির আশা পুনরুজ্জীবিত করার জন্য দেশটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছেন যে অটোয়া একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর দ্বিধান্বিত অবস্থানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং কূটনৈতিক কারণ রয়েছে। অনেক পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সাথে ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রাখে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অনেক ইউরোপীয় দেশে জনমত ফিলিস্তিনকে বেশ জোরালোভাবে সমর্থন করে, বিশেষ করে গাজায় গণহত্যার পর। এ ধরনের চাপের প্রতিক্রিয়ায় মানবাধিকার রক্ষার লোক-দেখানো নীতি প্রদর্শন বজায় রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সরকারগুলো কখনও কখনও মুখ রক্ষা করার  প্রতীকী অবস্থান গ্রহণ করে, কিন্তু বাস্তবে তারা কোনও গুরুতর ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় দেশে, শক্তিশালী ইহুদি-পন্থী লবিগুলো বৈদেশিক নীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লবিগুলো ফিলিস্তিনের সমর্থনে স্পষ্ট ও জোরালো অবস্থান গ্রহণে বাধা দেয়। গাজা যুদ্ধ সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানকেও অনেক বিশ্লেষক এবং স্বাধীন প্রতিষ্ঠান সততা ও স্বচ্ছতার অভাবপূর্ণ বলে মনে করেন। আর এই অসততা কেবল তাদের কথায় নয় তাদের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আচরণেও স্পষ্ট। একদিকে পশ্চিমা দেশগুলো ইহুদিবাদী অপরাধযজ্ঞের নিন্দা করে, কিন্তু অন্যদিকে তারা এই ইসরায়েলকেই আর্থিক ও সামরিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখছে।

মানবাধিকার রক্ষার দাবিদার হওয়া সত্ত্বেও মার্কিন সরকার বারবার গাজায় যুদ্ধবিরতি বা মানবিক সাহায্য পাঠানোর বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ভেটো দিয়েছে। ইহুদিবাদী ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্ররা, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে, ইহুদিবাদী সরকারের আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে, যদিও আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে, দখলদারের তা করার কোনও অধিকার নেই। ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন মানবাধিকার রক্ষায় পশ্চিমাদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ও বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।

যদিও পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনি এবং গাজার বাসিন্দাদের সমর্থন করার দাবি করছে কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তারা ইহুদিবাদী সেনাদের নানা অপরাধী তৎপরতার প্রকাশ রোধ করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। গাজা যুদ্ধে পশ্চিমাদের নাশকতার মাত্রা অনেক বিস্তৃত; মানবিক সাহায্য সরবরাহে বাধা দেয়া থেকে শুরু করে যুদ্ধবিরতিতে বাধা দেয়াসহ নানা ধরনের অমানবিক পদক্ষেপ নিয়ে পাশ্চাত্য ইসরায়েলকে তার অশুভ লক্ষ্যগুলো অর্জনে সক্ষম করার ব্যাপক ব্যবস্থা নিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের বেশ কয়েকটি সভায় গাজা যুদ্ধের ওপর প্রস্তাব গ্রহণে বাধা দিয়েছে এবং সেগুলোতে ভেটো দিয়েছে, কারণ ওয়াশিংটন দাবি করেছে যে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যেকোনো পদক্ষেপ হামাসকে শক্তিশালী করতে পারে।

আমেরিকা ও পশ্চিমা সরকারগুলো একদিকে নিজেদের গাজার জনগণের সমর্থক বলে দাবি করে ও বাহ্যিকভাবে উদ্বেগও প্রকাশ করে বিবৃতি দিচ্ছে, কিন্তু পর্দার আড়ালে, ইহুদিবাদী ‌ইসরায়েলের সাথে আরও অস্ত্র চুক্তি করছে এবং ইসরায়েলের প্রতি  তাদের সাহায্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ছাড়াও পশ্চিমা কর্মকর্তারা ইহুদিবাদী মন্ত্রিসভার সাথে দেখা করতে অধিকৃত অঞ্চলগুলো ভ্রমণ করছে।

আসলেএমন পরিস্থিতিতে যেখানে মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে হোয়াইট হাউসের ইউরোপীয় মিত্ররা, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের প্রতি ব্যাপক সমর্থন প্রদান অব্যাহত রেখেছে, তখন এই দেশগুলোতে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করা বিশ্বব্যাপী জনমতের চাপ থেকে বাঁচার একটি প্রচারণামূলক কৌশল মাত্র। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীর এবং বিশ্বের মুক্তিকামীরা কখনও ফিলিস্তিন সম্পর্কে পশ্চিমা কর্তৃপক্ষের অবস্থান এবং প্রচারণা মেনে নেবে না, কারণ এই সরকারগুলোই গাজায় ইহুদিবাদীদের অপরাধের শরিক। #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।