পশ্চিমা আধিপত্যের অবসান ঘটছে এবং বহুমেরু কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা সুসংহত হচ্ছে: পুতিন
https://parstoday.ir/bn/news/world-i152686-পশ্চিমা_আধিপত্যের_অবসান_ঘটছে_এবং_বহুমেরু_কেন্দ্রিক_বিশ্বব্যবস্থা_সুসংহত_হচ্ছে_পুতিন
পার্সটুডে–ভালদাই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন: পশ্চিমা আধিপত্যের অবসান ঘটছে এবং বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা সুসংহত হয়েছে।
(last modified 2025-10-07T09:26:39+00:00 )
অক্টোবর ০৬, ২০২৫ ১৮:০০ Asia/Dhaka
  • ভালদাই সম্মেলনে পুতিনের ভাষণ
    ভালদাই সম্মেলনে পুতিনের ভাষণ

পার্সটুডে–ভালদাই সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন তার বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছেন: পশ্চিমা আধিপত্যের অবসান ঘটছে এবং বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা সুসংহত হয়েছে।

পার্সটুডে আরও জানায় ২ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, ভালদাই সম্মেলনে পুতিন তার বক্তৃতার মূল অংশে আবারও একাধিপত্যবাদী যুগের অবসান এবং পশ্চিমা উদারনৈতিক মডেলের ব্যর্থতার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি শ্রোতাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের নিরঙ্কুশ আধিপত্যের যুগ শেষ হচ্ছে এবং বিশ্ব একটি ভারসাম্যপূর্ণ বহুমেরুকেন্দ্রিক  ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই কাঠামোতে রাশিয়াকে একটি বিচ্ছিন্ন শক্তি হিসেবে নয় বরং চীন, ভারত এবং ব্রিকসের অন্যান্য সদস্যের পাশাপাশি মূল খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এই বহুমেরু আখ্যানটি পশ্চিমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলা করার একটি হাতিয়ার। "সকল জাতির সমান অধিকার" এবং "সাংস্কৃতিক ও সভ্যতাগত বৈচিত্র্যের" ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক ক্ষেত্রকে পুনর্নির্ধারণ করে, মস্কো অ-পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন অর্জন করতে চাচ্ছে।

পুতিন বিশ্বাস করেন যে বিশ্ব একটি "বহুমেরু যুগে" প্রবেশ করছে - এমন একটি যুগ যেখানে কোনও একক শক্তি নিয়মকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। পুতিন যুক্তি দেন যে একটি বহুমেরু বিশ্ব আরও গণতান্ত্রিক, কারণ এটি "বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারকদের" প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করার সুযোগ দেয়। তিনি বলেন, "সম্ভবত এর আগে কখনও বিশ্ব মঞ্চে এত বেশি দেশ ছিল না যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করেছে বা করতে চায়,"। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোর দিয়ে বলেন: এ ধরণের পরিবেশে সমাধানগুলো বিস্তৃত ঐকমত্যের ওপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, "যে কোনও সমাধান কেবলমাত্র সমস্ত আগ্রহী পক্ষ বা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠকে সন্তুষ্ট করে এমন চুক্তির ভিত্তিতে সম্ভব। অন্যথায়, কোনও টেকসই সমাধান হবে না,"। তিনি আরও বলেন, পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো "তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে" কারণ তারা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং "রাজনৈতিক বক্তৃতার প্ল্যাটফর্ম" হয়ে উঠেছে।

বিংশ শতাব্দির শুরুর দশকের গোড়ার দিকে মস্কো কর্তৃক শুরু হওয়া ভালদাই সম্মেলন রাশিয়ার বিস্তৃত বৈদেশিক নীতির দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করার জন্য একটি ফোরাম হিসাবে পরিচিত। রাজনৈতিক এবং একাডেমিক ক্ষেত্রে অভিজাতদের উপস্থিতি ছাড়াও, বার্ষিক এই সভাটি আন্তর্জাতিক অভিজাতদের কাছে সরাসরি বার্তা পাঠানোর জন্য মস্কোর ব্যবহৃত একটি প্ল্যাটফর্ম।

২০২৫ সালের শীর্ষ সম্মেলনে ভ্লাদিমির পুতিনের ভাষণ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল কারণ এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন ইউক্রেন সংকট এখনও চলমান, ইউরোপকে প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল এবং ব্রিকস গ্রুপ তার সদস্যপদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে পশ্চিমা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল। এই প্রেক্ষাপটে, ব্রিকসকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় যা একটি নতুন আর্থ-বাণিজ্যিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারে; এমন একটি ব্যবস্থা যা ডলারের আধিপত্য থেকে দূরে সরে গিয়ে স্বাধীন বিনিময়ের সুযোগ দেবে, বিশেষ করে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে থাকা দেশগুলোর জন্য।

৬ জুলাই, ভিডিও কলের মাধ্যমে মি. পুতিন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে জোর দিয়ে বলেছিলেন: “সমস্ত লক্ষণ ইঙ্গিত দেয় যে  মার্কিন উদারনৈতিক বিশ্বায়ন মডেলটি পুরানো এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু এখন উদীয়মান বাজারের দিকে সরে যাচ্ছে। ধনী দেশগুলোকে সেবা প্রদানকারী একমেরুকেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা এখন অতীত হয়ে গেছে এবং আরও ন্যায়সঙ্গত বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে।”

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে গত তিন দশকে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের আলোকে, বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যে চীন, ভারত এবং ব্রাজিলের মতো উদীয়মান অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ভূমিকা, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং ব্রিকস গ্রুপের মতো অ-পশ্চিমা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সৃষ্টি ও সম্প্রসারণ, সেইসাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপের প্রতি বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতিত্বের প্রথম এবং দ্বিতীয় মেয়াদে, উদার আন্তর্জাতিক বিশ্বব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং পতনের পথে রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, পশ্চিমা কর্মকর্তাদের উদ্বেগ হল: পশ্চিমা মডেল অর্থাৎ উদার গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে এবং এর ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অবনতি ঘটছে। যদিও নতুন বৈশ্বিক বাস্তবতা পশ্চিমা-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন এবং অ-পশ্চিমা শক্তির উপস্থিতিসহ একটি নতুন আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার উত্থানের ইঙ্গিত দেয়।

যদিও পশ্চিমাদের নেতা হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও একতরফাবাদ অব্যাহত রাখতে, বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তার স্বার্থ ও লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিতে  চায়। সেইসাথে নিজস্ব ও তার মিত্রদের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সংকট তৈরি করতে চায়। ওয়াশিংটন ভয় পাচ্ছে, পশ্চিমা বিশ্ব যে উদার আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে, চীন, রাশিয়ার সাথে সেই ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাবে এবং আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ওপর পশ্চিমাদের শতাব্দী প্রাচীন কর্তৃত্বকে দুর্বল করে দেবে। যাই হোক, বিশ্বব্যাপী বাস্তবতা এবং প্রবণতাগুলো বিশ্ব অর্থনীতি, বাণিজ্য এবং রাজনীতিতে উদীয়মান অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান ভূমিকার পাশাপাশি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসাবে ডলারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলে। অপরদিকে ব্রিকস সদস্যদের মধ্যে বাণিজ্যের জন্য দেশগুলোর দ্বারা অভিন্ন জাতীয় মুদ্রার ব্যবহারের বিষয়টিও নির্দেশ করে।#

পার্সটুডে/এনএম/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।