হামাসের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নেওয়ায় পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া কী?
-
ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি পাকিস্তানিদের সমর্থন
পার্সটুডে-গাজা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরিকল্পনায় হামাসের সাড়া দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সরকার ফিলিস্তিনিদের আদর্শের প্রতি তাদের নীতিগত সমর্থন জানিয়েছে। সেইসঙ্গে ইহুদিবাদী ইসরাইলি হামলা অবিলম্বে বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার (৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত পরিকল্পনার প্রতি ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ইসলামাবাদ স্বাগত জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, "এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ, যাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা যায়, গাজায় নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের রক্তপাত বন্ধ করা যায়, ইসরাইলি বন্দীদের মুক্তি দেওয়া যায়, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া যায়, মানবিক সহায়তা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিশ্চিত করা যায় এবং স্থায়ী শান্তির দিকে একটি বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার পথ প্রশস্ত করা যায়। পাকিস্তান সরকার জোর দিয়ে বলেছে যে, ইসরাইলকে অবিলম্বে তাদের আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা প্রকাশ করেছে যে এটি একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, সামগ্রিক ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে পরিচালিত করবে। পাকিস্তান এই প্রক্রিয়ায় গঠনমূলক এবং অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ অব্যাহত রাখবে। পাকিস্তান ফিলিস্তিনের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তার নীতিগত সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে এবং ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে তাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামে ফিলিস্তিনের জনগণের সাথে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকার প্রয়োগের জন্য সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করে, যার ফলে একটি স্বাধীন, স্থিতিশীল ও সংযুক্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বৈধতা ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমানা নিয়ে, যার রাজধানী হবে কুদস-শরীফ, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ট্রাম্পের অস্ত্রবিরতি ঘোষণার জবাবে হামাস যুদ্ধবিরতি, বন্দী বিনিময় এবং গাজার স্বশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সম্মত হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি জাতীয় স্বার্থের আওতায় গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, "হামাসের বিবৃতি অনুযায়ী, আমি মনে করি তারা স্থায়ী শান্তির জন্য প্রস্তুত। ইসরাইলের উচিত অবিলম্বে গাজায় বোমা ফেলা বন্ধ করা যাতে আমরা দ্রুত এবং নিরাপদে বন্দীদের মুক্তি দিতে পারি।
গাজা যুদ্ধের বিষয়ে পাকিস্তানের অবস্থান সবসময় মানবিক নীতি, ফিলিস্তিনিদের অধিকার সমর্থন এবং ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরোধিতা করে। সাম্প্রতিক গাজা যুদ্ধে, পাকিস্তান সরকার বারবার গাজা উপত্যকায় সহিংসতা বৃদ্ধি, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস এবং মানবিক সংকট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের সরকারি বিবৃতিতে ইসরাইলের দ্বারা আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল এবং স্কুলগুলোতে হামলার নিন্দা করেছে এবং এ ধরনের হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে।
যুদ্ধবিরতির জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে পাকিস্তান সমর্থন করেছে এবং যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। ইসলামাবাদ হামাসের ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে এবং এটিকে রক্তপাত বন্ধ, বন্দীদের মুক্তিসহ মানবিক সহায়তা প্রেরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে। ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্দশা হ্রাস করতে পারে-এমন যে কোনও রাজনৈতিক উদ্যোগকে সমর্থন করার এই অবস্থানের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়।
আন্তর্জাতিকভাবে, পাকিস্তান ইসলামী দেশ এবং ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) এর মতো সংস্থাগুলোর সাথে ইসরাইলের ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছে এবং যুদ্ধাপরাধের জন্য এই দখলদারদের জবাবদিহিতার দাবি করেছে। এছাড়াও, পাকিস্তানের কর্মকর্তারা ইসলামী দেশগুলোর নেতাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বৈঠকে ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইসলামী বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
নীতিগতভাবে, পাকিস্তান সবসময়ই ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমান্তের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকারকে জোর দিয়ে আসছে, যার রাজধানী হবে কুদস-শরীফ। ইসলামাবাদ বিশ্বাস করে যে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন এবং ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ অধিকারকে সম্মান করে অর্জন করা উচিত।
অভ্যন্তরীণ পর্যায়েও, পাকিস্তানের জনগণ গাজার জনগণের সাথে তাদের সংহতি প্রদর্শন করে প্রতিবাদ সমাবেশ, পদযাত্রা এবং জনসাধারণের জন্য ত্রাণ সাহায্য পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলোও যুদ্ধের বিস্তৃত কভারেজ দিয়ে গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের মাত্রা সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা করেছে।
সামগ্রিকভাবে, গাজা যুদ্ধের প্রতি পাকিস্তানের অবস্থান মূলত নীতি- নৈতিকতা, মানবাধিকার রক্ষাকারী, ইসলামী সংহতিসহ স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমন্বয়। দেশটি একটি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখে ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করাসহ সংকটের মৌলিক সমাধানের জন্য একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করার আহ্বান জানিয়েছে।#
পার্সটুডে/এনএম/৬
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।