ফিরে দেখা
কিউবান-আমেরিকান খলনায়ক মার্কো রুবিও, ট্রাম্পের অজনপ্রিয় সহকর্মী
-
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও
পার্স টুডে - ফ্লোরিডার প্রাক্তন সিনেটর এবং আমেরিকান রাজনীতির অন্যতম বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব মার্কো রুবিও তার কঠোর এবং যুদ্ধংদেহী অবস্থানের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত।
সন্ত্রাসী ও দখলদার ইহুদিবাদী ইসরায়েলি প্রতি তার চরম সমর্থন এবং স্বাধীন দেশগুলোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তার চলমান প্রচেষ্টার মাধ্যমে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আগ্রাসী নীতির অন্যতম প্রবল সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
তার জীবন, কর্মজীবনের ইতিহাস এবং পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে তার দৃষ্টিভঙ্গি বিষয়ে এখানে কিছু আলোকপাত তুলে ধরছি:
মার্কো রুবিও ১৯৭১ সালে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে কিউবান-আমেরিকান বাবা-মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ১৯৫৬ সালে কিউবা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হয়, কিন্তু রুবিও সম্পর্কে খুব কম লোকই জানেন যে ১৯৬২ সালে আমেরিকান কর্তৃপক্ষ তার মাতামহ পেদ্রো ভিক্টর গার্সিয়াকে নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু অন্য সবার দৃষ্টির আড়ালে রুবিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যান।
যুবক বয়সে, রুবিও ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন, এবং যদিও তিনি আইন, ফুটবলে মেজর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং জাতীয় ফুটবল লীগে (এনএফএল) যোগদানের স্বপ্ন কিছু সময়ের জন্য তার মনোযোগ কেড়ে নিয়েছিল। মিসৌরির টারকু কলেজে তার অল্প সময়ের জন্য ফুটবল বৃত্তি ছিল, কিন্তু সেই পথটি থমকে যায় এবং অবশেষে তিনি আহত হন।
সেই পথে না গিয়ে, রুবিও রাজনীতিতে প্রবেশ করেন, ফ্লোরিডা হাউসের প্রতিনিধি হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেন। রুবিও ১৯৯৮ সালে জিনেট ডাউসডেবেসকে বিয়ে করেন এবং তাদের চারটি সন্তান রয়েছে।
২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত, রুবিও ফ্লোরিডা হাউসের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তারপর মার্কিন সিনেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৬ সালে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতি মনোনয়নের প্রচারণার সময়, তিনি নিজেকে একজন রক্ষণশীল হিসেবে পরিচয় দেন, একটি শক্তিশালী বৈদেশিক নীতি, একটি মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং সামাজিক বিষয়গুলোতে ঐতিহ্যবাহী অবস্থানের পক্ষে ছিলেন।
কিন্তু রুবিও সব সময়ই কঠোর ও বিপজ্জনক নীতি অনুসরণকারী। তিনি কেবল ইরানের বিরুদ্ধে ভারী নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করেননি, একইসঙ্গে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের ওপর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধির জন্যও ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করেছেন। তার কাছে, নিষেধাজ্ঞা কেবল একটি কৌশলগত হাতিয়ার নয়, একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধী সরকারগুলোকে অস্থিতিশীল করার একটি উপায়ও।
আর এই অপকৌশলের ভিত্তিতে রুবিও কখনও শত্রু তৈরি করতে ভয় পান না। ইরান, চীন এবং রাশিয়ার ঘন ঘন সমালোচক হিসেবে, তিনি ২০১৬ সালের রিপাবলিকান প্রাইমারিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনকে "গুন্ডা" এবং "দেশ পরিচালনাকারী একজন অপরাধী" বলে অভিহিত করেছিলেন। রুবিও কখনোই কোনও যুদ্ধ থেকে সরে আসেন না, তা সে ইরানের সাথে অর্থনৈতিক যুদ্ধ হোক, চীনের সাথে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ হোক, অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরাসরি সংঘাতে লিপ্ত যেকোনো দেশের সাথে সাংস্কৃতিক যুদ্ধ হোক।
রুবিও ইসরায়েলের একজন কট্টর সমর্থক, তিনি তার বক্তৃতায় ঘোষণা করেছেন যে, বিশ্বে ইসরায়েল যাতে আমেরিকার বিশ্বস্ত এবং অপ্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মিত্র থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে যা কিছু করা দরকার তা করতে হবে। যদিও এই সমর্থন কারো কারো কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে, অনেকের কাছে এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহী এবং বিপজ্জনক নীতির প্রতিনিধিত্ব করে।
রুবিও, যিনি নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেন, তিনি আমেরিকান কট্টরপন্থী রাজনীতিতে নিজেকে একজন গুরুতর ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যদিও তরুণদের মধ্যে তার অনুসারী রয়েছে, তবুও তিনি আসলে একজন উস্কানিমূলক রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন যিনি কখনও আপস করেন না। নিষেধাজ্ঞা, অর্থনৈতিক যুদ্ধ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতাকারী দেশগুলোর ওপর চাপ - এই সবই রুবিওর এজেন্ডার অংশ; এমন একটি এজেন্ডা যা কখনও শান্তি ও পুনর্মিলন চায় না। #
পার্স টুডে/এমএএইচ/০২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।