পাকিস্তান কেন তালেবান বিরোধীদের দিকে ঝুঁকছে?
https://parstoday.ir/bn/news/world-i154958-পাকিস্তান_কেন_তালেবান_বিরোধীদের_দিকে_ঝুঁকছে
পার্সটুডে-সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, তালেবান-পাকিস্তান সম্পর্ক গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।
(last modified 2025-12-10T12:23:33+00:00 )
ডিসেম্বর ১০, ২০২৫ ১৮:২০ Asia/Dhaka
  • পাকিস্তান কেন তালেবান বিরোধীদের দিকে ঝুঁকছে?
    পাকিস্তান কেন তালেবান বিরোধীদের দিকে ঝুঁকছে?

পার্সটুডে-সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, তালেবান-পাকিস্তান সম্পর্ক গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে।

ইসলামাবাদ ধীরে ধীরে তালেবান বিরোধীদের দিকে ঝুঁকছে। এটা একটা অপ্রত্যাশিত দৃষ্টিভঙ্গি যা প্রমাণ করে আফগানিস্তান বিষয়ে পাকিস্তানের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ পরিবর্তিত হয়েছে এবং দেশটি হুমকি নিয়ন্ত্রণের জন্য কাবুলের বিরুদ্ধে নয়া কৌশল নিয়ে ভাবছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাবলী প্রমাণ করে পাকিস্তান তালেবানের ওপর একতরফা নির্ভরতার পুরনো নীতি থেকে সরে আসছে। বছরের পর বছর ধরে এই গোষ্ঠীর প্রধান সমর্থক হিসেবে পরিচিত দেশটি এখন ধীরে ধীরে তালেবান বিরোধীদের দিকে ঝুঁকছে। এটা এমন এক পরিবর্তন যা রাজনৈতিক প্রবণতার কারণে নয় বরং নিরাপত্তা চাপ এবং অতীতের হিসাব নিকাশের ব্যর্থতার ফল।

মনে হচ্ছে এই পরিবর্তনের প্রথম কারণ হল পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নিরাপত্তাহীনতার নজিরবিহীন বৃদ্ধি। তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ইসলামাবাদ আশা করেছিল যে সীমান্ত হুমকি এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সন্ত্রাসী কার্যকলাপ কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের মতো গোষ্ঠীগুলো সীমান্তে নিরাপত্তা দুর্বলতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর তাদের আক্রমণ বাড়িয়েছে। এরকম পরিস্থিতির কারণে পাকিস্তান সরকার এবং সেনাবাহিনী এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে তালেবানদের সহযোগিতা ইসলামাবাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কার্যকর হয় নি।

অবশ্য আফগানিস্তানে পাকিস্তানের একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের কৌশল ব্যর্থ হওয়ার আরও কিছু কারণ রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে, ইসলামাবাদ বিশ্বাস করত যে তালেবানদের সমর্থন করে তারা কাবুলের ক্ষমতা কাঠামোকে পরোক্ষভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তালেবান, পাকিস্তানের প্রত্যাশার বিপরীতে, একটি স্বাধীন এবং কখনও কখনও চ্যালেঞ্জিং পদ্ধতি গ্রহণ করে। সেইসঙ্গে সীমান্ত, বাণিজ্য এবং পাকিস্তান বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে মোকাবিলা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তালেবান ইসলামাবাদের নিরাপত্তা অগ্রাধিকারের কাছে নতি স্বীকার করে নি।

এই বিষয়গুলো পাকিস্তানের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীদের অনেককে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে বাধ্য করেছে যে একমাত্র অংশীদার হিসেবে তালেবানের পর নির্ভর করা কৌশলগতভাবে আর যথার্থ নয়।

এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার তৈরি করাও পাকিস্তানি রাষ্ট্রনায়কদের হিসাব নিকাশের অংশ।

তালেবান বিরোধীদের কাছে যাওয়ার অর্থ একটি সাধারণ ফ্রন্ট গঠন করা বা ব্যাপক সামরিক সহায়তা প্রদান করা নয় বরং পাকিস্তানের মূল লক্ষ্য হল কাবুলকে এটা দেখানো যে তার বিকল্পও রয়েছে। ইসলামাবাদের দৃষ্টিতে তালেবান বিরোধী কিছু রাজনীতিক, জাতিগত বা সামরিক ধারার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক দাবির প্রতি তালেবান কর্মকর্তাদের নমনীয় হতে বাধ্য করার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

আরেকটি কারণ হল আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা। মার্কিনীদের প্রস্থান এবং তার ফলে সৃষ্ট ক্ষমতার শূন্যতা আঞ্চলিক দেশগুলোকে তালেবান-পরবর্তী আফগানিস্তানে তাদের নিজস্ব অবস্থান প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টার দিকে পরিচালিত করেছে।

পাকিস্তান উদ্বিগ্ন যে তারা যদি কেবল তালেবানের ওপর নির্ভর করে, তবে চীন, কাতার বা সৌদি আরবের মতো অভিনেতাদের প্রভাবে তারা প্রান্তিক হয়ে যাবে। এ কারণে, তালেবান বিরোধীদের দিকে এগিয়ে যাওয়া এমন এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ, যে ভবিষ্যতে তালেবান আর কোনও বিতর্কিত খেলোয়াড় নাও থাকতে পারে।

সামগ্রিকভাবে, তালেবান বিরোধীদের প্রতি পাকিস্তানের দৃষ্টিভঙ্গি একটি সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত পরিবর্তন নয় বরং আফগান- তালেবান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ও ক্ষমতার ভারসাম্যকে পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার একটি প্রচেষ্টামাত্র।

আফগানিস্তানে তার সম্পর্ক বৈচিত্র্যময় করে ইসলামাবাদ একদিকে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা হুমকি নিয়ন্ত্রণ করতে চায় অপরদিকে আঞ্চলিক ক্ষমতা কাঠামোতে কোনঠাসা করার চেষ্টাও রোধ করতে চায়। এই ঘটনাবলী প্রমাণ করে তালেবানের ওপর পাকিস্তানের সম্পূর্ণ নির্ভরতার যুগ শেষ হয়ে গেছে এবং ইসলামাবাদ এখন আফগানিস্তানের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য বহু-স্তরীয় কৌশল অনুসরণ করছে।#

পার্সটুডে/এনএম/১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন