জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা, ভোট ১২ ফেব্রুয়ারি
https://parstoday.ir/bn/news/event-i154994-জাতীয়_সংসদ_নির্বাচনের_তফশিল_ঘোষণা_ভোট_১২_ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি হতে যাচ্ছে গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনের তফশিল আজ (বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
(last modified 2025-12-11T12:40:12+00:00 )
ডিসেম্বর ১১, ২০২৫ ১৮:০৯ Asia/Dhaka
  • বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।
    বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।

বাংলাদেশে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি হতে যাচ্ছে গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ দুটি নির্বাচনের তফশিল আজ (বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ঘোষণা করছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন।

ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৯ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই ৩০ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১১ জানুয়ারি এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ থেকে ১৮ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ ও প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২১ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচার শুরু হবে ২২ জানুয়ারি, প্রচার শেষ হবে ১০ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে সাতটায়। ১২ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।

এরআগে, বুধবার বিকালে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেছেন, তফশিল ঘোষণার পর আচরণবিধিসহ অন্যান্য আইন ও বিধিমালা প্রয়োগ শুরু করবে ইসি।

তফশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটল। গণভোট ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হতে যাচ্ছে ১২ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হবে সাদা-কালো। গণভোটের ব্যালটের রং হবে গোলাপি। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বুধবার সন্ধ্যায় বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো পরিবেশ দেখতে পাবে বলে আশা করছি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা ছিল। তফশিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সবকিছুর অবসান ঘটতে যাচ্ছে। নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় ঢুকছে দেশ। 

এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখের বেশি। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররাও পোস্টাল ব্যলটে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার ভোট দেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৮ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ১৬ মাসের মাথায় জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করল ইসি।

শুরুতে গত বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল বিএনপিসহ কিছু দল। গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ১৩ জুন যুক্তরাজ্যের লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে দুজন একমত হন।

এর পর থেকে সরকার বারবার বলে আসছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন হবে। ইসিও সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়। এর মধ্যে গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। আজ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ দুটি ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করলেন সিইসি।

ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই কেবল দলীয় প্রতীকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫৬টি। এর মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকা দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। নিবন্ধিত অন্য দলগুলো এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে। এর বাইরে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য যেকোনো ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ২১ নভেম্বর এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। আগামী নির্বাচনই হবে এই কমিশনের অধীনে প্রথম কোনো নির্বাচন। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হচ্ছে। দুটি ভোটের সময় ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি।

সময় ব্যবস্থাপনার জন্য এবার ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রে গোপন কক্ষের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।

অন্যদিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাকেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকার জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী নির্বাচনী পরিবেশ যাতে নিশ্চিত হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করবে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর প্রায় ৯ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইতিমধ্যে রেকর্ডসংখ্যক দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।#

পার্সটুডে/জিএআর/১১