ভারত-ইসরায়েল সমঝোতা স্মারক: তেল আবিবের বিধ্বংসী নীতির কবলে গোটা এশিয়া
-
ইসরাইলি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আমির বারাম (বামে) ও ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব অজয় কুমার (ডানে)
পার্সটুডে- ভারত ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্যদিয়ে দুই পক্ষের সামরিক সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই চুক্তি এশিয়ায় তেল আবিবের উত্তেজনাপূর্ণ নীতি ও বিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারত ও ইহুদিবাদী ইসরায়েলের মধ্যে নতুন সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার মধ্যে সামরিক শিল্পে সহযোগিতা আরও বেড়েছে। দুই দেশের গণমাধ্যমে এই উদ্যোগকে সামরিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং শিল্প খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতের প্রতিরক্ষা সচিবের তেলআবিব সফরের সময় এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইসরায়েলি যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যানুসারে এই সমঝোতা সামরিক প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও সাইবার নিরাপত্তাসহ আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে যৌথভাবে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদনের বিষয়টিও রয়েছে।
দখলদার ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমির বারাম ভারতকে “একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার” হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, তেলআবিব নয়া দিল্লির সঙ্গে আগের চেয়ে আরও বিস্তৃত সহযোগিতা গড়ে তুলতে চায়।
ভারতীয় প্রতিনিধিদলের ইসরায়েলি সামরিক শিল্প পরিদর্শন
এই সফরের সময় ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদল ইসরায়েলের প্রধান কয়েকটি অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান—এলবিট, রাফায়েল এবং ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ পরিদর্শন করেছে। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠান “অ্যারো ইন্ডিয়া ২০২৫” প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম এবং উন্নত দূরনিয়ন্ত্রিত সরঞ্জাম প্রদর্শন করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত আগস্ট মাসে “মিশন সুদর্শন চক্র” নামে একটি বৃহৎ সামরিক কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দিয়েছেন, এতে ইসরায়েলি সামরিক শিল্পের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতে পারে।
দীর্ঘদিনের সামরিক সহযোগিতা
২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ভারত ছিল ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ক্রেতা। ভারত যেসব সমরাস্ত্র কিনেছে তার মধ্যে রয়েছে- উন্নত রাডার, যুদ্ধ ড্রোন, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক ক্ষেপণাস্ত্র। নয়া দিল্লি একটি বড় চুক্তির আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথভাবে কারবাইন রাইফেল তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভারত এই পরিকল্পনার আওতায় নিজেই ৪ লাখ ২৫ হাজারের বেশি কারবাইন রাইফেল কিনবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও এই সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্লেষকদের মতে, একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত–মার্কিন নিরাপত্তা চুক্তিগুলোর পাশাপাশি ভারত–ইসরায়েলের সামরিক সহযোগিতা প্রভাব রাখবে। এর ফলে দখলদার ইসরায়েলের পাশাপাশি আমেরিকাও লাভবান হবে। যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিতে, চীনের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক শক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে তা ওয়াশিংটনের কৌশলগত স্বার্থ জোরদার করবে। অন্যদিকে, ইহুদিবাদী ইসরায়েলের বিনিয়োগ এবং সামরিক প্রযুক্তি গ্রহণ করে ভারত স্থানীয় প্রতিরক্ষা উৎপাদনকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।#
পার্সটুডে/এসএ/১৬