সৌদি কনস্যুলেট-প্রধান কেন রাতের আঁধারে তুরস্ক ত্যাগ করলেন?
(last modified Wed, 17 Oct 2018 13:10:29 GMT )
অক্টোবর ১৭, ২০১৮ ১৯:১০ Asia/Dhaka

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেট-প্রধান মুহাম্মাদ আল উতাইবি রাতের আঁধারে রিয়াদে ফিরে গেছেন।

তুরস্কের এই কনস্যুলেটেই সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি প্রবেশ করেছিলেন গত ২ অক্টোবর, কিন্তু তাকে সেখান থেকে আর কখনও ফিরতে দেখা যায়নি। জীবন্ত অবস্থায় সেখানেই তাকে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

সৌদি সরকারের সমালোচক এই সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে রিয়াদের শাসকগোষ্ঠী স্বীকার করেছে। তবে এ জন্য কে বা কারা দায়ী তা এখনও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি।

খাশোগি হত্যায় উতাইবি সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় উতাইবি কার্যত একজন অবাঞ্ছিত বা বিতর্কিত কূটনীতিক হয়ে পড়ায় বহিষ্কারের খড়গ নেমে আসার আগেই তুরস্ক ত্যাগ করলেন। বেশ কয়েকদিন থেকেই তুর্কি সংবাদ ও গণ-মাধ্যমগুলো সৌদি কনস্যুলেট-প্রধানকে খাশোগির হত্যার জন্য দায়ী অবাঞ্ছিত ব্যক্তি হিসেবে তুরস্ক থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছিল। তুর্কি নিরাপত্তা বাহিনী সৌদি কনস্যুলেট-প্রধানের বাসভবনে প্রবেশ করে সেখানে তদন্ত চালাবে বলেও কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই রাতের আঁধারে তুরস্ক ত্যাগ করলেন উতাইবি। 

সৌদি সরকার দাবি করছে যে সাংবাদিক খাশোগি দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হয়েছেন! কিন্তু কনস্যুলেট-প্রধান হিসেবে উতাইবার কাছেই এ বিষয়ে সবচেয়ে বেশি তথ্য থাকার কথা। তাই তাকে স্বদেশে আনা হয়েছে যাতে সৌদি শাসকগোষ্ঠী মার্কিন সরকারের সহায়তা নিয়ে দুর্বৃত্ত তত্ত্ব প্রচারের কাজ জোরদার করতে পারে।

অবশ্য খাশোগি হত্যায় সৌদি সরকারের ভূমিকা ম্লান করার এই চেষ্টা পণ্ডশ্রম হবে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ, বিশ্ব-জনমত ও এমনকি ইউরোপের অনেক রাজনৈতিক নেতার কাছে এটা স্পষ্ট যে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানের নির্দেশেই হত্যা করা হয় প্রতিবাদী সাংবাদিক খাশোগিকে। এরই প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বহু সংবাদ-মাধ্যম, বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ মরুভূমির ড্যাভোস নামে খ্যাত সৌদি বিনিয়োগ-সম্মেলন বয়কট করেছে যা বিন সালমানের জন্য বড় ধরনের পরাজয়।

এ ছাড়াও ইয়েমেনের বিরুদ্ধে বর্বর সৌদি আগ্রাসন, লেবাননের প্রধানমন্ত্রী সা'দ হারিরিকে রিয়াদে আটকে রাখা এবং গত সাড়ে তিন বছর ধরে সৌদি প্রতিবাদীদের ওপর নৃশংস দমন-পীড়ন সৌদি যুবরাজের পাপের পেয়ালাকে এতটাই ভরপুর করে তুলেছে যে সৌদি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে তার বিদায় অত্যাসন্ন হতে পারে। 

বিন সালমানের ক্ষমতা-মদমত্ত নৃশংসতা ও ক্রমবর্ধমান স্বেচ্ছাচার ও দুরাচারের অবসান ঘটানোর জন্য এরই মধ্যে আওয়াজ তুলেছেন মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। তিনি বলেছেন, বিন সালমানকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। কারণ তিনি কোনোক্রমেই বর্তমান যুগে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের একজন নেতা হতে পারেন না।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৭