তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে সম্ভাব্য চুক্তি কি আফগানিস্তানে শান্তি আনতে পারবে?
তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার আলোচনায় যে চুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়েছে আফগান সরকার তার ধারাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে গেছে বলে নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির মুখপাত্র সিদ্দিক সিদ্দিকি। তিনি বলেছেন, কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবান ও আমেরিকার মধ্যে যে অষ্টম দফা শান্তি আলোচনা চলছে তার বিস্তারিত তথ্য কাবুল সরকারের হাতে রয়েছে। তবে বিষয়টির স্পর্শকাতরতার কথা বিবেচনা করে তা এখনই গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করতে চায় না আশরাফ গনি সরকার।
তালেবান-আমেরিকা শান্তি আলোচনা সম্পর্কে অবহিত সূত্রগুলো বলছে, দু’পক্ষের মধ্যে অর্জিত সমঝোতা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে চার মাস সময়ের মধ্যে পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ত্যাগ করবে। হাস্যকার ব্যাপার হচ্ছে, যে আফগান সরকারকে এই কথিত শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এই সমঝোতায় সেই আফগান সরকারের কর্তব্যও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, পাঁচ হাজার মার্কিন সেনা সরানোর বিনিময়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে আশরাফ গনি সরকারকে পাঁচ থেকে ১০ হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্ত করে দিতে হবে।
তালেবান ও মার্কিন সরকারের মধ্যে এই চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হলে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে আফগান পক্ষগুলোর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত বলে দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। ওই বৈঠকে আফগান সরকারের ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে যেখানে আফগানিস্তানের কোন পক্ষের কতটা অংশ থাকবে তা নির্ধারণ করা হবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তালেবান-মার্কিন সম্ভাব্য চুক্তির খসড়ার ধারাগুলো জেনে যাওয়ার যে দাবি আফগান সরকারের মুখপাত্র করেছেন তা সত্যি হয়ে থাকলে তা এই প্রথমবারের মতো কাবুলের পক্ষ থেকে এই আলোচনার তথ্য জেনে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করা হলো।
প্রায় এক বছর আগে আফগান সরকারকে পাশ কাটিয়ে আমেরিকা তালেবানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ আলোচনার বিষয়বস্তু জানা কাবুলে সরকারের পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং এ নিয়ে আশরাফ গনি সরকার প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে এসেছে। সর্বশেষ আফগান পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের স্পিকার ফজল হাদি মোসলেম ইয়ার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আফগান সরকারকে বাদ দিয়ে তালেবানের সঙ্গে আমেরিকার কোনো সমঝাতা দেশের জনগণ মেনে নেবে না বরং তাতে সংকট আরো ঘণিভূত হবে। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিও গতকাল (রোববার) হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কোনো বহিঃশক্তি আফগানিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে না।
পর্যবেক্ষকরা এখন এ প্রশ্ন করছেন যে, গত সাত দফা আলোচনার তথ্য সম্পর্কে যে কাবুল সরকারকে অন্ধকারে রাখা হলো সেই গনি সরকারকে কি তাহলে এবার হোয়াইট হাউজই সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া সম্পর্কে অবহিত করেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে বিশ্লেষকরা বলছেন, যে আমেরিকা আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে দেশটির সরকারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সেদেশের একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করতে পারে সেই মার্কিন সরকার সম্ভাব্য চুক্তির খুঁটিনাটি কাবুল সরকারকে জানিয়ে দেবে এমনটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।এ সম্পর্কে আফগানিস্তানের পার্লামেন্ট সদস্য আহমাদউল্লাহ মোভাহ্হেদ বলেছেন, তালেবান-মার্কিন আলোচনায় আফগান সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল না এবং মার্কিন সরকার কার্যত আশরাফ গনি সরকারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছে।
কাজেই সম্ভাব্য চুক্তির খসড়া সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় জেনে যাওয়ার যে দাবি প্রেসিডেন্ট গনির মুখপাত্র করেছেন তার উদ্দেশ্য হতে পারে এই যে, আফগান সরকার দেশটির পক্ষগুলোর মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের তুলনায় জনসমর্থনে এগিয়ে থাকার জন্য আশরাফ গনি সরকার এ দাবি তুলে ধরেছে।
বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট গনি সরকার গত চার বছরে তালেবানের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে এবং তালেবান আফগান সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে।
এ অবস্থায় আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে জনগণকে আশাবাদী করে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির পুনর্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সিদ্দিক সিদ্দিকি ওই দাবি করেছেন বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।#
পার্সটুডে/এমএমআই/১২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।