পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরান সফর: আঞ্চলিক বিষয়াদি গুরুত্ব পাবে
-
শাহ মেহমুদ কোরেশি
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশির ইরান সফর নিয়ে বেশ জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করাই হবে তার এ সফরের প্রধান উদ্দেশ্য। তিনি ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে সাক্ষাত করবেন বলে কথা রয়েছে।
ইরান ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত ৫ জানুয়ারি এক টেলিফোন সাক্ষাতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে মতবিনিময় করেছিলেন। ইরান ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এমন সময় সাক্ষাতে মিলিত হতে যাচ্ছেন যখন আমেরিকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অযাচিত হস্তক্ষেপ এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে। গত শুক্রবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় ইরানের আইআরজিসি'র কুদস ব্রিগেডের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং ইরাকের জনপ্রিয় হাশদ আশ-শাবির উপ প্রধানকে হত্যা করে। ইরাক সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সোলাইমানি বাগদাদ সফরে গিয়েছিলেন।
আমেরিকার ওই সন্ত্রাসী হামলার জবাবে ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী আইআরজিসি ইরাকে মার্কিন দুটি সামরিক ঘাটিতে হামলা চালিয়ে পাল্টা প্রতিশোধ নেয়। ইরানের হামলায় আমেরিকার বহুসংখ্যক সেনা হতাহত হয়।
বাস্তবতা হচ্ছে, ইরান কখনোই এ অঞ্চলে যুদ্ধ চায় না। ইরান তার কাজেকর্মে প্রমাণ করেছে তারা নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে এবং পশ্চিম এশিয়ায় আইএস সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। এ অবস্থায় এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক তৎপরতা এবং তাদের বেআইনি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমানে এ অঞ্চলের দেশগুলো এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে যে, বিরাজমান নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতা বাইরে থেকে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
গত কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য বলদর্পী শক্তিগুলো একদিকে প্রতিযোগিতায় নেমেছে ও হস্তক্ষেপ করছে এবং অন্যদিকে এ অঞ্চলের জাতিগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমেরিকা সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তারা আলকায়দা ও আইএস সন্ত্রাসী গড়ে তোলা, মুসলিম দেশগুলোকে খণ্ডবিখণ্ড করা, দেশগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা প্রভৃতি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের মাধ্যমে এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
এ প্রসঙ্গে আফগানিস্তানে মার্কিন জবর দখলের কথা উল্লেখ করা যায় যেখানে তাদের উপস্থিতির ফলে সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিস্তার ছাড়া আর কোনো ফল বয়ে আনেনি। ইরাক ও সিরিয়ার ঘটনায়ও প্রমাণিত হয়েছে, ওই দেশ দুটিকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে আমেরিকা কেবল দখলদার ইসরাইলের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, আমেরিকা যেখানেই উপস্থিত রয়েছে সেখানেই নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই দ্রুত এ অবস্থার অবসান ঘটা জরুরি। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী তেহরানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেয়া সাক্ষাতে ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের সন্ত্রাসী গ্রুপের প্রতি কয়েকটি দেশের সমর্থনে আফসোস করে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
যাইহোক, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিদেশিরা এসে এ অঞ্চলে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না বরং আঞ্চলিক দেশগুলোকেই সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতে হবে। এ অবস্থায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ইরান সফরকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে অভিন্ন হুমকি মোকাবেলায় নিজস্ব সুযোগকে কাজে লাগানো এবং সম্মিলিতভাবে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় এ দেশগুলো পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারে।#
পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১২