মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন
(last modified Fri, 13 Nov 2020 12:26:43 GMT )
নভেম্বর ১৩, ২০২০ ১৮:২৬ Asia/Dhaka

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তুমুল প্রতিযোগিতা ও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। বর্তমান রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেনের মধ্যে ওই নির্বাচনী লড়াই আমেরিকার নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে।

ট্রাম্প চলতি  নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ব্যাপারে ব্যাপক দুর্নীতি ও কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন। যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো মার্কিন গণতন্ত্রের এই দুরবস্থার মাঝেও মাইক পম্পেও অন্যান্য দেশকে গণতন্ত্রের সবক দিচ্ছেন।  

মার্কিন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট চলাকালে অন্যদেরকে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর সবক দেয়ার মতো ‌ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জন্য মাইক পম্পেওর সমালোচনা করেছেন। পম্পেও আরও বলেছেন: ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে আরো একবার ক্ষমতা আসবে।

স্যান্ডার্স গতকাল (বৃহস্পতিবার) পম্পেওর মন্তব্যের জবাবে ব্যক্তিগত টুইটার পেইজে লিখেছেন: "না, মিঃ পম্পেও! ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা হস্তান্তরের মতো কোনো ঘটনা ঘটবে না। ভোটের লড়াই শেষ হয়েছে এবং জো বাইডেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। কী করে তুমি অন্য দেশকে গণতন্ত্র ও জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর মতো বক্তব্য দাও যখন নিজেই জনতার রায়কে সম্মান করছো না"?

পম্পেও

এ বক্তব্যের মাধ্যমে মূলত ট্রাম্প এবং তার সরকারের দ্বিমুখি নীতির কথাই উল্লেখ করেছন স্যান্ডার্স। সম্প্রতি ট্রাম্প ব্যক্তিগত টুইটার পেইজসহ টিভি ক্যামেরার সামনেও সরাসরি দাবি করেছেন: 'ডেমোক্র্যাটরা তার ভোট চুরি করে নিয়েছে'। এই ঘটনা যদি সত্যি হয় মানে জনগণের ভোট নিয়ে কারচুপি করার সুযোগ যদি নির্বাচন পদ্ধতিতে থেকেই থাকে তাহলে বলতে হবে মার্কিন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে। ট্রাম্প নজিরবিহীনভাবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল অর্থাৎ জো বাইডেনের বিজয় মেনে নেন নি তাই নয়, বরং ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়ার পথেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ যে বাইডেনের বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে তাকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো পুনরায় ভোট গণনার দাবি জানিয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায় আমেরিকার জনগণের রায় এবং তাদের ইচ্ছাকে কোনোরকম তোয়াক্কা করেন না ট্রাম্প। অথচ এই ট্রাম্প এবং তার সরকার গত চার বছর ধরে অন্যান্য দেশ এমনকি তাদের বন্ধুপ্রতীম দেশের নির্বাচনসহ অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে রীতিমত হস্তক্ষেপ করে এসেছে। এখন ট্রাম্প এবং তার সরকার নিজেদের দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলছেন। ট্রাম্পের চাটুকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে বলেছেন: 'ক্ষমতা হস্তান্তর হবে তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের সরকারের কাছে'। সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার এই দাবি কেবল আইনের বিরুদ্ধেই অবস্থান নেয়া নয় বরং কারচুপির অভিযোগের মতো অমীমাংসিত বিষয়ে ট্রাম্পের দাবির সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্বাচনে তার বিজয় ও সরকার গঠন করার মতো ভিত্তিহীন দাবিও তুলেছেন। মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সাইবার সিকিউরিটি সংস্থা এবং নির্বাচন সমন্বয় পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছে: ৩ নভেম্বর নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপির  কোনও দলিল-প্রমাণ নেই। সুতরাং এ থেকে প্রমাণ হয় যে ট্রাম্প পরাজয় মেনে নিতে রাজি নন যা জনগণের রায়ের পাশাপাশি দেশের সকল গণতান্ত্রিক আইন কানুনের বিরোধী।

আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামাসহ আরও অনেকেই নির্বাচনে জালিয়াতির ব্যাপারে ট্রাম্পের অভিযোগকে গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন: এই অভিযোগ কেবল বাইডেন প্রশাসন নয়, বরং সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার পথে একটি বিপজ্জনক পদক্ষেপ।

এখন যে প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই সামনে আসে তা হলো, যারা নিজেদের দেশের নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল নয় তারা কি বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচন ও গণতন্ত্র সম্পর্কে কথা বলার অধিকার রাখে?

পার্সটুডে/এনএম/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।