সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে ধারাবাহিক
সুন্দর জীবন (পর্ব-১)
সুঅভ্যাস গড়ার উপায় নিয়ে নতুন ধারাবাহিক অনুষ্ঠান 'সুন্দর জীবন'-এ শীর্ষক আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। স্বাভাবিকভাবেই আমরা প্রত্যেকেই সুস্থ-সুন্দর জীবন প্রত্যাশা করি। আর এই সুস্থ-সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজন কিছু সুঅভ্যাসের, যা আমাদের নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। সুঅভ্যাস গড়ে তোলার উপায় নিয়েই নতুন ধারাবাহিকে পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।
প্রথমেই বলে রাখছি এই নতুন ধারাবাহিকে আমরা যেসব পরামর্শ দেব তা সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জীবন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন হতে পারে।
সুন্দর জীবনের জন্য শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রে সুস্থতা জরুরি। সুস্থতার জন্য প্রয়োজন শৃঙ্খলা। ব্যক্তি জীবনে শৃঙ্খলা থাকলে যেকোনো কাজই হয়ে ওঠে আরো সুন্দর ও আকর্ষণীয়। এছাড়া নিজের কাজের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষ চাইলেই সুশৃঙ্খল হতে পারে। এজন্য কিছু অনুশীলন দরকার হয়। শৃঙ্খলা জোরদারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নতুন কিছু অভ্যাস রপ্ত করা, অর্থাৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যথাসময়ে কর্ম সম্পাদন। তবে নতুন অভ্যাস গড়ে তুলতে ও জীবনে শৃঙ্খলা বাড়াতে এর পেছনে সময় ব্যয় করতে হয়। তবে সুশৃঙ্খল হওয়ার অভ্যাস একবার গড়ে তুলতে পারলে জীবন আরও সুন্দর ও সফল হয়ে ওঠে এবং এর প্রভাব পড়ে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আসলে শৃঙ্খলা মেনে চলার অর্থ হলো আপনার পরিকল্পনায় একটি ধারাবাহিকতা থাকবে, আপনি নিজের দায়িত্বগুলো পালনের ক্ষেত্রে আন্তরিক হবেন। তবে এসব পরিকল্পনা কেবল মনস্তাত্ত্বিক হলে চলবে না বরং পরিকল্পনাকে সম্ভবে রূপায়িত করতে হবে।
শৃঙ্খলা মেনে চলার অংশ হিসেবে যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হবে এবং গুরুত্ব অনুযায়ী কাজের তালিকাও সাজিয়ে নিতে হবে। আমরা যদি সফল মানুষদের জীবনযাপন পদ্ধতির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাই তারা সময়কে সঠিক ও সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছেন। সময় ও সুযোগকে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করেছেন। আর এটা কেবল শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমেই সম্ভব। পবিত্র ইসলাম ধর্মেও শৃঙ্খলা মেনে চলার ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.) সবাইকে বলেছেন, 'তাকওয়া অর্জন করবে এবং কাজের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা মেনে চলবে।' ইসলাম ধর্মে সময়কে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে সময়ের কসম করেছেন। কুরআনের সূরা আয-যুমারের ৫৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, যাতে কাউকেও বলতে না হয়, ‘হায়! আল্লাহর প্রতি আমার কর্তব্যে আমি তো শৈথিল্য করেছি।
শৃঙ্খলা ছাড়া জীবনে সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়। জীবনে শৃঙ্খলা বাড়াতে নানা উপায় অবলম্বন করতে হবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শৃঙ্খলাবোধের সঙ্গে সময়ের সঠিক ব্যবহারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। একজন ব্যক্তির যখন কোনো লক্ষ্য ও পরিকল্পনা থাকে না তখন তার জীবন হয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। এ কারণে সবারই কাজের একটি তালিকা নির্ধারণ জরুরি। এরপর এসব কাজের লক্ষ্য স্পষ্ট করতে হবে। যদি কাজের লক্ষ্য সঠিক বলে মনে হয় তাহলে এই লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যা যা করা দরকার তারও একটি তালিকা প্রণয়ন করতে হবে। লক্ষ্য স্বল্প মেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। কোন লক্ষ্যটি স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি তা ডায়রিতে লিখে নিলে ভালো হয়। এরপর সেই তালিকা সব সময় সাথে রাখতে হবে। সম্ভব হলে নিজের চেয়ার-টেবিলের সামনে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে সব সময় আমাদের চোখে পড়ে।
যখনের কাজ তখনি করে ফেলতে হবে। এসব কাজ ছোট-বড় যাই হোক না কেন তা গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। নিজের কক্ষ পরিস্কার করার কাজটিকে অত্যন্ত তুচ্ছ মনে হতে পারে এবং এ কারণে কাজটি পরে করব এমন মনোভাব নিজের মনে বাসা বাধতে পারে। কিন্তু এমন অলসতাকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। যেকোনো কাজের ক্ষেত্রেই এটা পরে করব-এমন একটা মনোভাব সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে মানুষের জীবনে। এমন মনোভাবের কারণে কাজ একটা একটা করে জমে কাজের পাহাড়ে পরিণত হতে পারে এবং জীবনের শৃঙ্খলাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ধরণের মনোভাবের সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, ব্যক্তির মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি। প্রফুল্ল থাকতে চাইলে নিজের টেবিল-চেয়ারসহ কর্মস্থলকে সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। যেকোনো জিনিসপত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এমনটা ভাবলে চলবে না যে,, বড় বড় কাজ ও লক্ষ্যের জন্যই কেবল পরিকল্পনা জরুরি। আপনি যদি জীবনে শৃঙ্খলা চান তাহলে আপনাকে পোশাক পরিধান ও খাবার খাওয়ার মতো বিষয়গুলোতেও পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। পরিকল্পনা মেনে সামনের দিকে এগোতে হবে।
আপনি যদি অনেক বেশি সুশৃঙ্খল হতে চান তাহলে নিজের ইচ্ছা ও প্রেরণাকে জোরদার করতে হবে। জগাখিচুড়ি টাইপের পরিকল্পনা করা যাবে না। পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকলে এর ফলাফল উল্টো হতে পারে। অনেকেই একটা ভুল ধারনায় ভোগেন, তারা ভাবেন তার স্থলে অন্য কেউ কাজটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না। এ কারণে এ ধরণের ব্যক্তিরা সব দায়িত্ব নিজের কাধে নিয়ে নেন। সব কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে কিছু কাজ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া জরুরি। এর ফলে নিজের ওপর চাপ কমবে এবং নিজের দায়িত্বগুলো সুন্দরভাবে সময়মতো সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
যাইহোক সুস্থ-সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে সব ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। ব্যক্তিজীবনে শৃঙ্খলা থাকলে তা মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করে। এর ফলে সব ধরণের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকা যায়। শৃঙ্খলাপূর্ণ ও নিয়মানুবর্তী হওয়ার জন্য অনুশীলন জরুরি। এক লাফে এটা অর্জন সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে সব কাজে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করুন। আপনি যদি জীবনে শৃঙ্খলা আনতে পারেন তাহলে নিশ্চিত থাকুন আপনি যা চাইছেন তা পেয়ে যাবেন সহজেই। এর ফলে জাগ্রত হবে আপনার আত্মসম্মানবোধ।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আশরাফুর রহমান/২৫
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।