ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২২ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (স.) বলেছেন, 'অন্যের কাছে যা আছে তার দিকে কখনোই লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

এ ধরণের কাজের কারণে মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং আফসোস-অনুতাপ বাড়তেই থাকে। এ ধরণের ব্যক্তি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতকে ছোট করে দেখে এবং আল্লাহর প্রতি খুব বেশি কৃতজ্ঞ হয় না। আপনার চেয়ে খারাপ অবস্থায় যারা আছেন সব সময় তাদের দিকে তাকান।'

সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মাদ (স.)'র এই হাদিসে অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা না করার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আজকের আসরে আমরা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার ক্ষতিকর নানা দিক এবং এই অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আলোচনা করব।

সাধারণভাবেই মানুষ অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে অভ্যস্ত। আমরা নানাভাবে নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করে থাকি। সম্পদ, সৌন্দর্য, পেশা, পরিবার- এসব নানা বিষয়ে আমরা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করি। কখনো নিজের মনের ভেতরে এই তুলনা চলে, কখনো আবার আমরা তুলনার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনি। আপনিও এই সমস্যায় ভুগছেন কিনা তা বুঝতে পারবেন খুব সহজেই। আপনি যদি এই বিষয়ে চিন্তিত হন যে, আপনার সহকর্মীর মতো আপনাকে সুন্দর দেখাচ্ছে কি না অথবা চারপাশের মানুষগুলোর জীবন আপনার চেয়ে অনেক সহজ কি না তাহলেই বুঝবেন আপনি নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করছেন। এইসব চিন্তা মাথায় আসা মানেই নিজেকে অন্যদের থেকে কম বা ফালতু মনে করা। এ ধরণের মানুষেরা মাঝে মাঝে নিজেকে নিকৃষ্ট বলে মনে করে। হীনমন্যতায় ভোগে। এটি যে নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানোর পর শুরু হয় এমন নয়। এটি খুব অল্প বয়সেও শুরু হতে পারে বা বড় বয়সেও শুরু হতে পারে। এছাড়া তুলনাটি পরিবারের কোনো নিকটস্থ সদস্য, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহকর্মী এবং অন্যান্য ব্যক্তির সঙ্গেও হতে পারে। অবশ্য এমন কিছু ব্যক্তিও আছেন যারা নিজেকে অপরিচিত কোনো ব্যক্তির সাথেও তুলনা করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ সারাক্ষণ অন্যের সাথে নিজের তুলনা করেন তাদের মধ্যে হিংসা, অপরাধবোধ ও অনুশোচনা বেশি থাকে। আমরা যেভাবেই তুলনা করি না কেন, তুলনার অভ্যাসটা আমাদের জন্য ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনে না। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার কারণে প্রথমেই যে ক্ষতিটি হয় তাহলো ক্রমেই মানসিক প্রশান্তি লোপ পেতে থাকে।  নিজেকে কারোর সঙ্গে তুলনা করার ফলে অনেক সময় হিংসাত্মক মনোভাব তৈরি হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় একজন ব্যক্তি এমন কারো সঙ্গে নিজেকে তুলনা করছেন যার সঙ্গে তুলনা করা কোনোভাবেই শোভনীয় নয়, এমনকি কখনোই তিনি সেই ব্যক্তি হয়ে উঠতে পারবেন না। এ কারণে তিনি সেই ব্যক্তির উপর হিংসা করা শুরু করতে পারেন। এ ধরণের আচরণ অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে দিতে পারে। এর ফলে তুলনাকারী ব্যক্তি নিজেই মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বেশিরভাগ মানুষই এটা জানেন যে, অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করা কোনোভাবেই উচিৎ নয় এবং এর ফলে নিজেরই ক্ষতি হয়। কিন্তু এরপরও এই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন না অনেকেই। ঘুরেফিরে মাথায় অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা চলতে থাকে। এই অভ্যাস থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। আর নিজের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে প্রথমেই নিজেকে সঠিকভাবে চিনতে হবে। পাশাপাশি থাকতে হবে আত্মবিশ্বাস। আত্মবিশ্বাস না থাকার কারণে অনেকেই এই সমস্যায় আটকা পড়ে।  একজন ব্যক্তির মধ্যে যখন আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয় তখন সব সময় তার মধ্যে এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে যে, সে কেন সফল হতে পারছে না, সে কেন অন্যের মতো পরিপূর্ণ নয়। অন্যেরা কেন বেশি সফল। এ ধরণের ব্যক্তি তার নিজের মানদণ্ডের ভিত্তিতে সফলতা ও ব্যর্থতার হিসাব কষে নিজেকে ব্যর্থ বলে মনে করে। অনেক সময় দেখা যায়, এ ধরণের ব্যক্তিরা প্রকৃতপক্ষে ব্যর্থ নন।

তারা আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রেই নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও সফলতা বুঝতে পারে না এবং নিজেকে ব্যর্থ হিসেবে মনে করে। এটা চিন্তা ও মনের দুর্বলতা। এই দুর্বলতার কারণে তুলনাকারী ব্যক্তি সব সময় অন্যকেই নিজের চেয়ে ভালো অবস্থানে দেখে, হীনমন্যতায় ভোগে। নিজের ভালো দিকগুলো তার নজরে আসে না। আবার অনেকেই অতিমাত্রায় পরিপূর্ণতাকামী। এ ধরণের ব্যক্তিরা সব সময় সব কাজকে সর্বোত্তম উপায়ে সম্পন্ন করতে চান। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে নিজের কাজের ব্যাপারে তারা কখনোই সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। নিজের সব কাজকেও অপূর্ণ ও ত্রুটিযুক্ত মনে হয়। এ ধরণের ব্যক্তিরা মনে করেন তিনি অন্যের তুলনায় অযোগ্য। নিজের শরীর-মনের সুস্থতা বজায় রাখার পাশাপাশি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনের জন্য নিজেকে ভালোবাসার পাশাপাশি নিজের কাজের ফলাফলের প্রতিও সন্তুষ্ট থাকার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। অবশ্য নিজেকে সর্বোত্তম মনে করার প্রবণতা থাকলে সেটাও ত্যাগ করতে হবে। অনেকে এই সমস্যাতেও ভোগেন। সে বিষয়ে অন্য কোনো আসরে আলোচনা হবে। আজ আমরা অন্যের সঙ্গে নিজের তুলনা সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখব।

কেউ যখন নিজের কাজের প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তখন সে অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করে কষ্ট পেতে থাকে। হীনমন্যতা ভুগতে থাকে। কোনো কাজ শতভাগ সুচারুভাবে  সম্পন্ন না হলেই তার মধ্যে এমন মনোভাব জেগে ওঠে। এই প্রবণতা ব্যক্তির মধ্যে ক্রমেই নিজের প্রতি অসন্তোষ বাড়িয়ে তোলে। এই অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ব্যক্তির উচিত প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকদের সাহায্য নেওয়া। মনে রাখতে হবে হাতের পাঁচটা আঙুলের মতোই সব মানুষের জীবন, কর্ম, যোগ্যতা, ক্ষমতা এক রকম হয় না। একজনের মধ্যে যে ক্ষমতা আছে তা হয়তো অন্যের মধ্যে নেই। এ কারণে অন্যের সাথে নিজেকে তুলনা করার আগে দুবার ভাবতে হবে। নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে, তাহলেই সাফল্য আসবে।

নিজেকে সবসময় অন্যের সাথে তুলনা করার ফলে নিজের ওপর মানসিক চাপ পড়ে এবং অনুশোচনা জন্ম নেয়। এর ফলে জীবন সংগ্রামে আরও বেশি পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কাজেই এখন থেকেই অন্যের সঙ্গে নিজেকের তুলনা করার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। #

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আবুসাঈদ/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ