ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২২ ২১:৪৩ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করার নানা ক্ষতিকর দিক এবং এই অভ্যাস থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে খানিকটা আলোচনা করেছি। অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাস ত্যাগ করতে ব্যক্তির মধ্যে আত্মবিশ্বাস জরুরি। অনেকেই আছেন যারা সব কাজ নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে চান।

কিন্তু যখনি দেখেন তিনি নিজের কাজগুলো নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে পারছেন না তখনি নিজের ওপর তার আস্থা-বিশ্বাস কমতে শুরু করে। কিন্তু অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে নিজেকে এবং নিজের কাজকে ভালোবাসতে শিখতে হবে। তবে আত্ম-অহংকারী হওয়া যাবে না।

অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি একমুখী। এ কারণে তারা সাফল্য ও উন্নতির জন্য কেবল একটি নির্দিষ্ট পথকেই উপযোগী বলে মনে করে। তারা কখনোই এটা বিবেচনায় নেন না যে, সব মানুষের অবস্থান, পরিবেশ-পরিস্থিতি ও সক্ষমতা এক নয়। কিন্তু এসবের ওপর ব্যক্তির সাফল্যের সম্পর্ক রয়েছে। প্রত্যেককে তার নিজস্ব পন্থায় এগোতে হবে। কিন্তু কেউ যখন কোনো সমাধানের জন্য কেবল একটি পন্থার পেছনেই ছুটতে থাকে তখন সাফল্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়ে। এ ধরণের ব্যক্তি সাফল্য অর্জনের পথ অতিক্রম করার ক্ষেত্রে সব সময় অন্যের সঙ্গে তুলনায় ব্যস্ত থাকেন। তার দৃষ্টিতে যিনি সফল হয়েছেন কেবল তার পন্থাটিই তিনি অনুসরণ করতে থাকেন। কিন্তু নিজের অবস্থান ও সক্ষমতার প্রতি দৃষ্টি দেন না। এ ধরণের পরিস্থিতি কোনো মানুষের জন্য কল্যাণকর নয়। এর ফলে তুলনাকারী ব্যক্তি ক্রমেই শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমরা আজ কিছু উপায় বাতলে দিতে চাই। 

প্রথম উপায়টি হলো, কেবল নিজের দুর্বল দিকগুলোর সন্ধান না করে নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনার শক্তিশালী দিকগুলো কী? দুর্বল দিকগুলোর চেয়ে নিজের শক্তির বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করুন। এর মধ্যদিয়ে অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাসের ওপর একটা আঘাত করতে সক্ষম হবেন। এরপর আপনাকে এই বাস্তবতা মেনে নিতে হবে যে, বর্তমানে পৃথিবীর কোনো মানুষই পরিপূর্ণ নয়। সবার মধ্যেই কোনো না কোনো দুর্বলতা রয়েছে। আপনার মধ্যে যেসব দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। অন্যের মধ্যেও তা রয়েছে। আপনি হয়তো অন্যের দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে অবহিত নন। অন্যেরা তাদের দুর্বলতা আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করে না অথবা তারা তা নিয়ে আপনার মতো খুব একটা ভাবেন না। যাইহোক আপনাকে নিজের দুর্বলতা নয় বরং নিজের শক্তি নিয়ে ভাবতে শুরু করতে হবে। কেউই আপনার কাছে এটা প্রত্যাশা করে না যে, আপনি হবেন শতভাগ নিখুঁত। আপনি কেবল নিজের শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোত্তম উপায়ে কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যান।

অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসার আরেকটি উপায় হলো, ফেইসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় ব্যয় না করা। দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় যখন আপনি ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে পড়ে থাকেন এবং অন্যের চাকচিক্যময় জীবন-চিত্র দেখতে থাকেন তখন আপনার মধ্যে তুলনার প্রবণতা আরও বাড়তে থাকে। আসলে আপনি অনবরত অন্যের জীবনের সঙ্গে নিজের তুলনা করতে থাকেন। আপনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যে মানুষের যে জীবনচিত্র দেখেন তার সঙ্গে বাস্তবতার খুব একটা মিল নেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণত সবাই তার সবচেয়ে সুন্দর ও নিখুঁত ছবি ও ভিডিও শেয়ার করেন। জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দি করে প্রকাশ করেন, সবাই নিজের সর্বোত্তম কর্ম, অর্জন বা শিল্পকে আরও বেশি চমকপ্রদ করে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত অন্যের জীবন-চিত্র দেখে কেউ যদি তার স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করতে থাকে তাহলে তা কখনোই যৌক্তিক হবে না। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব দম্পতি সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়মিত তাদের পারিবারিক জীবনের সুখ-আনন্দের মুহূর্তগুলো শেয়ার করে তারা বাস্তব জীবনে আসলে খুব একটা সুখী নন, তাদের জীবন তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়েও বেশি সমস্যাপূর্ণ।

আপনি যখন ক্রমেই অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছেন তখন নিজের জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে ভালো কোনো মানুষকে বেছে নিতে পারেন। এমন এক-দুইজন ব্যক্তিকে নির্বাচন করুন যাদের চিন্তা ও জীবন-পদ্ধতি আপনার মধ্যে প্রশান্তি যোগায়। আপনি যাদের জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নেবেন তাদেরকে যে খুব বিখ্যাত ব্যক্তি হতে হবে তা কিন্তু নয়। এমন কাউকে বেছে নিন যারা মানুষের কল্যাণ চায়। এর পাশাপাশি আপনাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রবণতা গড়ে তুলতে হবে। যা কিছু আছে তা নিয়ে খুশি থাকার চেষ্টা জোরদার করতে হবে। এজন্য প্রতিদিন আপনি আপনার ভালো দিকগুলো স্মরণ করুন। আপনার কাছে যেসব ভালো জিনিস রয়েছে সেগুলোর দিকে তাকান। এরপর সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। যখনি মনে হবে আপনি আবার অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে যাচ্ছেন তখনি আপনার ভালো প্রাপ্তিগুলোর কথা স্মরণ করুন। এর ফলে আপনার মধ্যে সুখানুভূতি জাগ্রত হবে। শরীর-মনকে সুস্থ রাখতে তা সহায়তা করবে।

অন্যের সঙ্গে নিজেকে তুলনার অভ্যাস ত্যাগ করা যে আপনার জন্য জরুরি সে বিশ্বাসটাও থাকতে হবে। এর ফলে এই অভ্যাস ত্যাগ করে নিজের ভালো দিকগুলো মূল্যায়নের সুঅভ্যাস গড়ে তুলতে পারবেন সহজেই। মনে রাখবেন আপনি যাদেরকে বাহ্যিকভাবে আপনার চেয়ে অনেক বেশি সফল মনে করছেন তাদের মধ্যেও হয়তো রয়েছে অপ্রাপ্তির অনেক হতাশা যা আপনি বাইরে থেকে কখনোই বুঝতে পারবেন না। আপনি যদি মনে করেন কোনোভাবেই এই অভ্যাস ত্যাগ করতে পারছেন না এবং এই অভ্যাস আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করেই যাচ্ছে তাহলে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই, আপনার শারীরিক-মানসিক সুস্থতার জন্য এটা খুবই জরুরি।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/আবুসাঈদ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ