ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২ ২১:২৫ Asia/Dhaka

নতুন এই প্রদেশটির নাম সেমনান। বেশ সুন্দর একটি প্রদেশ এটি। আবহাওয়াগত বৈচিত্র যেমন রয়েছে তেমনি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক অনেক স্থাপনাও রয়েছে দেখার মতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথা তো বলাই বাহুল্য।

সেমনান প্রদেশে বিশ হাজার হেক্টরের বেশি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। এছাড়াও এখানে রয়েছে বন্য পশুপাখির জন্য নিরাপদ এলাকাও। এই এলাকা বেশ বড়সড়ো। পুরো প্রদেশের শতকরা তেইশ ভাগেরও বেশি এলাকাই নিরাপদ বা সুরক্ষিত এলাকায় পরিণত হয়েছে।

এর বাইরেও আনুমানিক আট মিলিয়ন হেক্টরের মধ্যে চারটি ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে জাতীয় উদ্যান, জাতীয় প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলি, বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এবং সুরক্ষিত এলাকা। ইরানের পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থা এসব অঞ্চলের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। এই যে বিশাল অঞ্চলের কথা বললাম এর অন্তত পঁচিশ ভাগই পড়েছে সেমনান প্রদেশের ভেতর। এই বিশাল অঞ্চলে রয়েছে 'পারভার' সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকাটি সেমনান শহরের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আবার শাহরুদ শহরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলেও রয়েছে 'তুরান' নামের একটি সংরক্ষিত এলাকা। এই এলাকাটি বুনো প্রাণীর অভয়ারণ্য। শাহরুদের উত্তর-পূর্বদিকে রয়েছে 'খোশ-ইলাক' নামের আরেকটি সুরক্ষিত অঞ্চল। এতোগুলো প্রাকৃতিক অঞ্চল যেখানে সে এলাকাটি যে কীরকম সুন্দর হবে তা তো ভাবাই যেতে পারে।

সেমনানের জাফরান

এখানকার রুমালগুলো দেখতে ছিল যেমন সুন্দর, গুণ এবং মানের দিক থেকেও ছিল শীর্ষে। আর এইসব খ্যাতি ও বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার রুমালের উচ্চমূল্যের বিষয়টি যে অস্বাভাবিক ছিল না তা বোধ হয় মনে করাই যায়। না, কেবল রুমালই নয় এই গোমেস শহরে ফলের সমাহারও রয়েছে। এসব ফল পার্শ্ববর্তী এলাকায় রপ্তানি করা হয়ে থাকে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে গোমেস প্রদেশটি বিভিন্ন কারণে রাজনীতি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় ইত্যাদি সকল দিক থেকেই সেই প্রাচীনকাল থেকেই সমৃদ্ধ। এ কারণে এখানে বহু মাজহাব বা ধর্মীয় চিন্তাধারারও উদ্ভব ঘটেছে যুগে যুগে। যেমন যেইদি সম্প্রদায়, ইসমাইলি সম্প্রদায় কিংবা সার্ব্দরন সম্প্রদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কটি সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।

গোমেসের ভৌগোলিক নামের সঙ্গে কাজারি শাসনামল পর্যন্ত সবারই পরিচয় ছিল।বরং বলা ভালো সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হতো গোমেসের নাম। তবে ষোল শ একষট্টি খ্রিষ্টাব্দের দিকে গোমেস প্রদেশটি ইরানের নয়া ভূ-বন্টনের ফলে প্রাচীন নাম হারায় এবং নতুন নাম বৃহত্তর সেমনানে পরিণত হয়। গোমেসের অন্তর্ভুক্ত সেমনান, দমগন, শাহরুদ, বাস্তম, সাঙ্গসার এবং শাহমিরজাদ প্রভৃতি শহর ছিল। এগুলোর মধ্যে সেমনানকেই বেছে নিয়ে কেন্দ্রিয় প্রশাসনের জন্য ওই শহরকে নির্বাচন করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে সেমনান প্রদেশ বাগান এবং কৃষি ও হর্টিকালচারাল পণ্য উৎপাদনের জন্য ব্যাপক উপযোগী। আবহাওয়াগত সেরকম অবস্থা এই এলাকায় বিরাজ করে। এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাইরে এমনকি দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়।

সেমনান প্রদেশের আবহাওয়াগত বৈচিত্র্য ও কৃষিপণ্যের কথা। যেসব কৃষিপণ্য এখানে উৎপাদিত হয় সেগুলোর মধ্যে উল্লেখ করার মতো কয়েকটি হলো: গম, যব, তরমুজ, আলু, সূর্যমুখি, তুলা, বিট, খরবুজা ইত্যাদি। আবার বাগানে যেসব ফলফলাদি উৎপন্ন হয় সেসবের মধ্যে রয়েছে: পেস্তা বাদাম, আঙুর, জার্দালু, আনার বা ডালিম, আপেল, চেরি, আখরোট, ডুমুর ইত্যাদি। এই প্রদেশে রয়েছে প্রচুর খনিজ সম্পদ।  সেগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বহু শিল্প এলাকা। আবার কৃষিশিল্প ও গবাদি পশুর খামার ব্যাপকভাবে গড়ে ওঠায় পুরো এলাকাটিই ইরানের অন্যতম শিল্পাঞ্চলের মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে। এসবের বাইরেও এখানকার হস্তশিল্প সামগ্রী অতুলনীয়।

সেমনান শহর সেমনান প্রদেশের কেন্দ্রিয় শহর। এই শহরটি ইরানের প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। ভূগোল নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন এবং করছেন বিশেষ করে মুসলিম ভূগোলবিদ তাঁরা এই সেমনান শহরটি প্রাগৈতিহাসিক কালের পিশদাদি বাদশাহ তাহমোরেসের সময় গড়ে উঠেছে বলে মতামত দিয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই সুদীর্ঘ ইতিহাসধারী শহর হিসেবে বহু চড়াই উৎরাই দেখেছে সেমনান। যুদ্ধ-বিগ্রহ, জয়-পরাজয় সব রকমের ইতিহাসে সমৃদ্ধ শহরটি। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য দুই মেরুর শত্রুই সেমনানের ওপর বারবার আক্রমণ করেছে। সেমনানবাসীদের হুমকিগ্রস্ত করেছে। সেইসব ঐতিহাসিক কালের স্মৃতিচিহ্ন আজও সেখানে দেখতে পাওয়া যাবে। বিশেষ করে সেখানকার সামরিক দূর্গগুলো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে আজও।

প্রাচীন  সব সমৃদ্ধ  ইতিহাসের বাইরে সেমনানের অপর সুন্দর দিকটি হলো এখানকার প্রকৃতি। সেমনানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে আজও দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক বেড়াতে যান প্রদেশটিতে। সবুজ প্রকৃতি আর বন-বনানি,সাজানো গোছানো পার্কগুলো প্রকৃতিপ্রেমিদের আকৃষ্ট না করে পারে না। সপ্তম শতকের বিখ্যাত ভ্রমণবিদ ইয়াকুত হামাভি তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে সেমনান সম্পর্কে লিখেছেন: আমি এই শহরটি দেখেছি। বাগিচা বাগিচায় ভর্তি সেমনান। পানির প্রবাহ যেমন রয়েছে তেমনি পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে মনে করা হয় শহরটিকে।

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে কাজার শাসনামল পর্যন্ত সময়পর্বের বিচিত্র ঐতিহাসিক নিদর্শনে সমৃদ্ধ এই শহর। কাজার শাসনামলের বিখ্যাত একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো “দারওয়াজে আর্গ” মানে আর্গ গেইট।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ