ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২২ ১৮:১৩ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! কথাবার্তার প্রাত্যহিক আসরে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আজ ২৭ ফেব্রয়ারি রোববারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। তারপর দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাব। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

ঢাকার কয়েকটি খবরের শিরোনাম

  • ইউক্রেন জ্বলছে-মানবজমিন
  • চার শহর রাশিয়ার দখলে, কিয়েভ ও খারকিভে লড়াই-প্রথম আলো
  • পুতিনের সরকারি দপ্তরে সাইবার হামলা-যুগান্তর
  • সরকারের সামনে সমস্যা-শ্যাম রাখি না কুল রাখি- আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী-ইত্তেফাক
  • শপথ নিল নতুন নির্বাচন কমিশন- কালের কণ্ঠ
  • নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে-যুগান্তর

কোলকাতার শিরোনাম:

  • পাওয়ার গ্রিড বিপত্তির জের, মুম্বইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা অন্ধকারে, ব্যাহত ট্রেন পরিষেবা-সংবাদ প্রতিদিন
  • বারাণসী না অযোধ্যা, মোদী না যোগী, দুই শহরের কিস্‌সা, কে ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’-আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার, পথে নামল তৃণমূল-আজকাল

এবারে বিশ্লেষণে যাচ্ছি। জনাব সিরাজুল ইসলাম কথাবার্তার আসরে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

বিশ্লেষণের বিষয়:

১. সাবেক সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে  নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ। কেমন হলো এই কমিশন?

২. ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলছে। এরমধ্যে আমেরিকা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে দেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে কিন্তু জেলেনস্কি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কীভাবে দেখছেন বিষয়টিকে?

বিশ্লেষণের বাইরের কয়েকটি খবর:

ইউক্রেন জ্বলছে

বিশ্বের নজর এখন ইউক্রেনে। যুদ্ধ চলছে রাজধানী কিয়েভে। কারফিউ জারি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ভারতসহ বিশ্বের সব মিডিয়া জুড়ে আছে যুদ্ধের নানামুখী খবর।এ সম্পর্কে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান প্রধান খবরে লেখা হয়েছে,ইউক্রেন জ্বলছে।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইইউ।কৃষ্ঞ সাগরে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজকে নিষিদ্ধ করবে তুরস্ক।ইউরোপজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছে। জার্মানি ইউক্রেনে একহাজার অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র ও পাঁচশ স্টিঙ্গার ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাবে।

প্রথম দিন ছিল দৃশ্যত বাধাহীন। দ্বিতীয় দিনে কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়ে রাশিয়ানরা। দিন শেষে এবং তৃতীয় দিনে রাজধানী কিয়েভে প্রচণ্ড প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। সেখানে তীব্র থেকে তীব্র হয়ে উঠেছে লড়াই। রাজধানীর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে ফেলতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা সহ সব রকম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। কিন্তু এতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। গুঞ্জন উপেক্ষা করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি। দেশ রক্ষায় লড়াই অব্যাহত রাখবেন।

ইউক্রেনের ক্যান্টনমেন্ট দখল( সংগৃহীত ছবি)

আত্মসমর্পণ করবেন না তিনি। অস্ত্রও সমর্পণ করবে না তার বাহিনী। একই সঙ্গে তিনি এখনই ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ অনুমোদন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ অবস্থায় ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৃটেন ও অন্য ২৫টি দেশ। ওদিকে রাশিয়ান সেনাদেরকে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। রাশিয়ান সেনারা যাতে রাজধানী কিয়েভে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য চারদিকে সেতু, সড়ক ধ্বংস করে দিয়েছেন ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। ফলে রাজধানী দখলে নেয়া খুব সহজ কাজ নয় রাশিয়ানদের জন্য। তবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মেলিতোপল শহর নিজেদের দখলে নেয়ার দাবি করেছে রাশিয়ান সেনারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এই যুদ্ধে উভয়পক্ষে কমপক্ষে ৩৭০০ নিহত হয়েছে। ইউক্রেন দাবি করেছে, এর মধ্যে রাশিয়ার ৩৫০০ সেনা নিহত হয়েছে। প্রায় ৩০০ ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন। রাশিয়ার নিহত সেনাদের লাশ উদ্ধার করে রাশিয়ায় ফেরত পাঠাতে রেডক্রসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেন। জাতিসংঘ বলছে, মস্কোর এই আগ্রাসন শুরুর পর থেকে কমপক্ষে এক লাখ ২০ হাজার নাগরিক ইউক্রেন ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। আগামী মাসে মস্কোতে রাশিয়ার সঙ্গে বিশ্বকাপ ফুটবল ম্যাচ বাতিল ঘোষণা করেছে পোল্যান্ড। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ফেসবুকে দেয়া পোস্টে দাবি করেছে, রাশিয়ান সেনারা রাজধানী কিয়েভে সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ইউক্রেনের সেনারা সেই হামলা প্রতিহত করেছে।  আলাদাভাবে ইন্টারফ্যাক্স ইউক্রেন বার্তা সংস্থা বলছে, রাশিয়ান সেনারা শহরের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর একটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার সেনাদের হামলার পর হামলা সত্ত্বেও ইউক্রেনের সেনারা গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাশিয়ান সেনারা রাজধানী কিয়েভে বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ করেছে। কিন্তু ইউক্রেনিয়ান আর্মড ফোর্সেস তাদের সামনে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

রাশিয়ার উৎখাত পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়েছে

Image Caption

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি ভিডিও মারফত ভাষণ দিয়েছেন। তাতে তিনি বলেছেন, রাশিয়ানদের পরিকল্পনা তার বাহিনী থামিয়ে দিয়েছে। রাশিয়ানদের পরিকল্পনা ছিল রাতারাতি জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করে কিয়েভে নিজেদের পছন্দমতো নেতা বসানো। এতে তিনি আগ্রাসন বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে রাশিয়ানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, তার পরিকল্পনা আমরা ভণ্ডুল করে দিয়েছি। কিয়েভ ও মূল শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণে আছে ইউক্রেনের বাহিনী। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে তার দেশ। বর্তমানে ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য নয়। কিন্তু এতে যোগ দেয়ার এখনই উত্তম সময় বলে মন্তব্য করেছেন জেলেনস্কি। তিনি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তাদেরকে এখনই সদস্য করে নেয়ার।

মস্কো থেকে দূতাবাসকর্মীদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে:মস্কোতে অবস্থিত ইউক্রেনের দূতাবাসের স্টাফদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লাতভিয়াতে। লাতভিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা: রাজধানী কিয়েভে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিটশ্চকো বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে এতে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুদ্ধ বন্ধের আহবান ( ছবি -সংগৃহীত)

ব্যারিকেড গড়ে তোলার আহ্বান: বেসামরিক জনসাধারণকে ব্যারিকেড গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। এ ছাড়া রাশিয়ার সেনাদের থামাতে পেট্রোল বোমা ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। যেকোনো মূল্যে রাশিয়ানদের প্রতিহত করার জন্য জনগণকে জেগে উঠতে বলা হয়েছে। ফেসবুকে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী একটি পোস্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে- গাছ কেটে ফেলুন। রাস্তায় ব্যারিকেড দিন। টায়ারে আগুন দিন। যা পারেন তাই দিয়ে রাশিয়ানদের প্রতিরোধ করুন। দখলদারদের অবশ্যই বুঝতে হবে, এই জনগণ তাদেরকে চায় না। তাদেরকে প্রতিটি সড়কে প্রতিরোধ করতে হবে।

ইত্তেফাক লিখেছে, ইউক্রেনে গ্যাস লাইন উড়িয়ে দিল রাশিয়া।

চার শহর রাশিয়ার দখলে, কিয়েভ ও খারকিভে লড়াই-প্রথম আলো

ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর দেশটির চারটি শহর দখল করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে আজ রোববার তিনটি শহর দখল করেন রুশ সৈন্যরা। এ ছাড়া ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে ঢুকে পড়ার পর দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে রুশ সেনাদের তুমুল লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। রাজধানী কিয়েভেও লড়াই চলছে।

গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট পুতিনের নির্দেশে জল, স্থল ও আকাশপথে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন রুশ সৈন্যরা। অভিযান শুরুর তৃতীয় দিন গতকাল ইউক্রেনের দক্ষিণের জাপোরিঝঝায় অঞ্চলের মেলিটপোল শহর দখল করে নেন রুশ সৈন্যরা। বাকি তিনটি শহর হলো নোভা কাখোভকা, খেরশন ও বারদিয়ানস্ক।

প্রতিরোধ গড়তে জনগণকে যেসব নির্দেশনা দিচ্ছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী-প্রথম আলো

রাশিয়ার সেনাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ইউক্রেনের সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। কীভাবে এ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যে নির্দেশনাও জারি করেছে তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইউক্রেন সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়, ‘আপনাদের কাছে অস্ত্র বা গোলাবারুদ থাকুক বা না থাকুক, সাধ্যমতো সব উপায় ব্যবহার করে লড়াই চালিয়ে যান।’

শপথ নিল নতুন নির্বাচন কমিশন-কালের কণ্ঠ

শপথ নিল নতুন নির্বাচন কমিশন

সদ্য নিয়োগ পাওয়া সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।

রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আকবর।সদ্য নিয়োগ পাওয়া সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তাঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।

রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে এই শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোহাম্মদ আলী আকবর।

নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে-যুগান্তর

ভোটের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফেরানোই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, বিদায়ী কমিশনের নেতৃত্বে গত ৫ বছরে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যে ভোট হয়েছে- তাতে মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বরং অনেক জায়গায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি এক ধরণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নবগঠিত ইসির প্রথম কাজ হবে মানুষের আস্থা ফেরানো। 

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, এটা আরেকটি হুদা কমিশন। এসব নিয়ে তাদের কোনো আগ্ৰহ নেই। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।

শনিবার যুগান্তরকে দেওয়া আলাদা প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। এর আগে সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান এবং সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। 

নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না তারা।

নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে কাজ করবে নতুন কমিশন- এমনটাই আমি আশা করছি।

সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার নির্বাচন কমিশনারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুপারিশকৃত দশজন উপযুক্ত ব্যক্তির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশন দেশের সংবিধান ও আইনকে সমুন্নত এবং নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে আগামীতে তাদের মেয়াদকালে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সাফল্য অর্জন করবেন। 

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, ‘কাজী হাবিবুল আউয়ালকে (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) চিনি, জানি। 

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠজন বলে বিবেচিত লোকদের দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে- এটাই বাস্তব সত্য। 

তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দুজনকে চিনি না, বাকি তিনজনকে ভালোভাবে চিনি। যাদের চিনি তারা সরকারেরই আস্থাভাজন বলে বিবেচিত। সাইফুল হক বলেন, প্রয়োজন ছিল মেরুদণ্ডসম্পন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন। সেরকমটা না করে সরকার অতীতের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে নিজেদের পছন্দের এবং আস্থাভাজন লোক দিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এতে করে ভবিষ্যতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

সরকার একটা ভালো কাজ করল: ডা. জাফরুল্লাহ-যুগান্তর

নিজের দেওয়া তালিকা থেকে নতুন সিইসি (কাজী হাবিবুল আউয়াল) বেছে নেওয়ায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে জাফরুল্লাহ বলেন, সরকার একটা ভালো কাজ করল। এখন সরকার যদি তাকে (নতুন সিইসি) বিরক্ত না করে, তাকে যদি তার মতো করে চলতে দেয়, তাহলে তিনি খারাপ করবেন না। তার অনেক সাহসী গুণাবলী আছে। 

সার্চ কমিটির কাছে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তার পছন্দের যে আটজনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন- সেই তালিকায় ৮ নম্বরে থাকা সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে বেছে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।

ডা. জাফরুল্লাহ আশা প্রকাশ করে বলেন, আমি আশা করব- উনি (সিইসি) নির্বাচনে কারো কথা শুনবেন না। উনাকে এখন সবার সমর্থন দেওয়া দরকার। আমি মনে করি, বহুদিন পরে আমরা একজন সহাসী লোক পেয়েছি। তিনি বললেন নতুন সিইসি সৎ লোক। তিনি সবার প্রতি আহবান জানালেন-তাঁকে মেনে নেয়ার জন্য।

গত ২৭ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রথমবারের মতো আইন প্রণয়ন করে সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করে দেন রাষ্ট্রপতি। এরপর সার্চ কমিটির প্রথম বৈঠকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ও সুধীজনের কাছ থেকে নাম আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করে সার্চ কমিটি। সরাসরি ও ইমেইলের মাধ্যমে সার্চ কমিটির কাছে প্রায় পাঁচশজনের নাম জমা পড়ে।

সরকারের সামনে সমস্যা-শ্যাম রাখি না কুল রাখি-ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন,বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা দিল্লিমুখী স্রোত শুরু হয়েছে। মন্ত্রীরা, পররাষ্ট্র দপ্তরের সেক্রেটারি, আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিসহ আরো কয়েক জন হোমড়া-চোমড়া ছুটে গেছেন দিল্লিতে। স্পষ্টতই বোঝা যায়, আগামী নির্বাচনে জেতার জন্য, দিল্লিকে তুষ্ট করতে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আগে এই প্রতিযোগিতা রেখে-ঢেকে করা হতো। এখন এটা স্পষ্ট।

বাংলাদেশে চীনকে একটু বেশি প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য ইদানীং ভারত যে রাগ করেছে, তার প্রমাণ আমেরিকার দ্বারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ। এটা ঝিকে মেরে বউকে শেখানোর মতো। ভারত এখন আমেরিকার সঙ্গে ‘কোয়াড’-এর সদস্য। ভারত এখন ইসরাইলের সঙ্গেও সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং ইসরাইলের সঙ্গে তাদের সামরিক সম্পর্কও বিরাট। ভারত-আমেরিকা-ইসরাইল যে ত্রিশক্তি এখন গড়ে উঠেছে, তা উপমহাদেশে চীনের অনুপ্রবেশ চায় না। অন্যদিকে ভারত চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী অথবা শত্রু।

এশিয়ায় এখন দুটি সাব-সুপারপাওয়ার—একটি ভারত, অন্যটি চীন। বাংলাদেশ এ দুই শক্তির স্নায়ুযুদ্ধের মাঝখানে পড়ে এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। বাংলাদেশে কয়েকটি বড় প্রজেক্ট চীনের বিপুল অর্থ সাহায্যে শুরু হয়েছে। চীন যদি এখন এই বিপুল সাহায্য প্রত্যাহার করে, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিরাট বিপর্যয় দেখা দেবে।

অন্যদিকে, ভারত আওয়ামী লীগের পেছনে না থাকলে আগামী নির্বাচনে দলটির জেতা সম্ভব হবে কি না, সন্দেহ। বাংলাদেশ এক ভয়াবহ সমস্যার আবর্তে পড়েছে। মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করার যে স্বপ্ন আওয়ামী লীগ দেখছিল, তা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিলীন হয়ে গেছে। ভারতকে তুষ্ট করার জন্য তাই এই দিল্লি ও আগরতলা দৌড়াদৌড়ি।

আমি নগণ্য ব্যক্তি। তবু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে ভালোবাসি। এজন্য বহু আগেই এই দল ও সরকারকে সতর্ক করেছিলাম চীনের দিকে বেশি ঢলে না পড়ার জন্য। চীন অথবা ভারত কারো সঙ্গেই বাংলাদেশের অতিরিক্ত মাখামাখির দরকার নেই। ভারতের সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থে যতটুকু সহযোগিতা করা প্রয়োজন, আমাদের তা-ই করা উচিত।

অন্যদিকে, চীনের সাহায্য গ্রহণেও আমাদের সতর্ক থাকা উচিত ছিল। ‘কোয়াড’ অথবা চীন কোনো শিবিরের সঙ্গেই বাংলাদেশের বেশি যুক্ত হওয়া উচিত নয়। আমেরিকা যে দেশেই সাহায্য দেয়, কার্যত সেই দেশকেই তাদের অনুগত বানিয়ে ফেলে। তারপর তাদের ইচ্ছামতো সরকার বদলায়, দরকার হলে সরকারপ্রধানকে খুন করে। অন্যদিকে, চীন এশিয়া-আফ্রিকার যেসব ছোট দেশে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য নিয়ে গেছে, সেই দেশকে কার্যত দখল করে ফেলেছে।

বিপদে বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভর করতে পারে, ভারত তার স্বাধীনতা সংগ্রামের বন্ধু, কিন্তু চীনকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। চীন ছিল পাকিস্তানের বন্ধু। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হওয়ার সময় পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টোকে চীন আশ্বাস দিয়েছিল, ভারত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সাহায্যের জন্য সৈন্য পাঠালে চীন হিমালয় সীমান্তে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করবে এবং ভারতকে সেই যুদ্ধে ব্যাপৃত রাখবে। ভারতীয় সৈন্য যখন বাংলাদেশে প্রবেশ করে, তখনো চীন হিমালয় সীমান্তে তার সেনাবাহিনীকে বসিয়ে রেখেছে, তবে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে নামায়নি।

পাকিস্তান এখন আমেরিকান দোস্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। ফলে আমেরিকা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রচারযুদ্ধ শুরু করেছে এবং আফগানিস্তানে চীন এখন তালেবানদের বন্ধু। ভিয়েতনামের স্বাধীনতাযুদ্ধে চীন বিরোধিতা করেছে, যেমন তারা বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ। সুতরাং চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি বিপজ্জনক। এদিক থেকে ভারতের ওপর নির্ভরতা বেশি টেকসই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ২০ হাজার সৈন্য প্রাণদান করেছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার ভাঙা অর্থনীতি মেরামত করার জন্য ভারতই প্রথম এগিয়ে এসেছিল, চীন নয়।

দিল্লিতে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব তারা ক্ষুণ্ন করেনি। এই অবস্থায় ভারতকে চটিয়ে চীনের দোস্তি আমাদের কাম্য হতে পারে না। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের ভেতরে কিছু নব্য ব্যবসায়ী ঢুকেছেন, যারা চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করতে চান। কারণ তাতে দুর্নীতিও করা যায় বেশি।

শোনা যায়, চীনের বড় ব্যবসায়ীরাও প্রয়োজনে দুর্নীতিতে কম যান না। আমি যত দূর জানি, এই সম্পর্ক রক্ষায় শেখ হাসিনা ভারসাম্যমূলক নীতি গ্রহণের অভিলাষী ছিলেন। কিন্তু তার এই ইচ্ছা পূরণ করতে পারেননি। আমলারা নব্য ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক। নব্য ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত চীনাপ্রীতিতে তারা বাধা দেননি, বরং প্রশ্রয় দিয়েছেন। সরকারও আর্থিক সাহায্যের লোভে চীনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। এখন এই বিপদের ফাঁদে তাদের পড়তে হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত একটি বড় ফ্যাক্টর। এই কথাটা অস্বীকার করা যাবে না। আবার ভারতেও যে ধরনেরই সরকার থাকুক, সেই সরকার ঢাকায় আওয়ামী লীগের সরকার আছে, তা দেখতে চাইবে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার তাদের যা সহযোগিতা দিতে পারে, তা বিএনপি সরকার পারবে না। বিএনপির রাজনীতির ভিত্তি ভারতবিদ্বেষ ও ভারতবিরোধিতা। সুতরাং দিল্লির সিংহাসনে কংগ্রেস থাকুক অথবা বিজেপি থাকুক, দুটি সরকারই ঢাকায় আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চাইবে। বিজেপির সরকারও ক্ষমতায় এসে তা-ই চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি চীনের সঙ্গে বেশি মাখামাখি করে, তারা সেটা চাইবে না। আওয়ামী লীগ সরকার এখন দুই নৌকায় পা দিয়ে এই বিপদে পড়েছ।

এমনও হতে পারে, লন্ডনে বসে তারেক রহমান ভারতকে সব উজাড় করে দেবে—এই দানছত্র লেখায় দিল্লির অবস্থান আওয়ামী লীগের দিকে নেই। তাহলে আগামী নির্বাচনে সর্বনাশ! এ কথা বুঝে মন্ত্রীরা দল বেঁধে কেউ দিল্লিতে, কেউ ত্রিপুরায় ছুটেছেন। আওয়ামী লীগকে এখন দিল্লির কাছে আরো বেশি মাথা নত করতে হবে। তাতেও তাদের আগামী নির্বাচনে জেতা খুব কঠিন হবে। আমি প্রার্থনা করি, আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের এই দিল্লি ও আগরতলা ছোটাছুটি সফল হোক এবং এই সরকার যেন চীন ও ভারতের সঙ্গে একটা ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রক্ষায় নির্ভরযোগ্য উপায় বের করতে পারেন।

আওয়ামী লীগ সরকার বহু দিন ধরেই তাদের আমলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গর্ব প্রকাশ করে আসছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটেছেও। কিন্তু তার ভিত্তি পচনশীল ধনতন্ত্র। ধনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এককালে জাপান অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তার ভিত্তিও ছিল ধনতন্ত্র, যে ধনতন্ত্র আমেরিকার সঙ্গে লেজে বাঁধা। ফলে মার্কিন অর্থনীতিতে পচন দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাপানের অর্থনীতিতেও পচন দেখা দেয়। বাংলাদেশের উন্নয়নও ধনতন্ত্রভিত্তিক। তার ফলে এই উন্নতি নব্য ধনীদের উচ্চাশা মিটিয়েছে।

কিন্তু জনগণের জীবনের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা মেটায়নি। ধনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের দ্রুত উন্নতি ঘটাতে গিয়ে তার পায়ের তলায় যে শিকড় গজায়নি, এটা এখন প্রমাণিত হচ্ছে। চীন তার অর্থনৈতিক সাহায্য প্রত্যাহার করলে বাংলাদেশের সর্বনাশ হবে। আবার সাহায্যদাতা দেশগুলোকে চটালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা অনিশ্চিত। বলা যায়, দেশ এক জাতীয় দুর্যোগের সম্মুখীন। প্রার্থনা করি, আওয়ামী লীগ সরকার এই সংকট থেকে বের হওয়ার জন্য একটি পন্থা যেন নির্ধারণ করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু ধনতন্ত্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বাস করতেন না। একদিন গণভবনে বসে কথা প্রসঙ্গে তিনি আমাদের কয়েক জন সাংবাদিকের কাছে বলছিলেন, ‘আমি ধনতান্ত্রিক উন্নয়নে বিশ্বাস করি না; সমাজতান্ত্রিক উন্নতিতে বিশ্বাস করি। তাতে উন্নতিটা টেকসই হয়; জনগণ উপকৃত হয়। ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চোখ ধাঁধানো উন্নতি হয়, তবে তা জনগণের জীবনকে স্পর্শ করে না। শুধু ধনীদের ঘরে আলো জ্বলে। সমাজতান্ত্রিক উন্নতির গতি ধীর। তাতে মানুষ অনেক সময় ধৈর্য হারায়।

আমি যদি এখন মার্কিন-সাহাঘ্যনির্ভর অর্থনৈতিক উন্নতির পথে যাই, তাহলে তোমরা দেখবে ঢাকা শহর রাতারাতি সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে। কিন্তু তাতে ঢাকায় আকাশছোঁয়া উঁচু বিল্ডিং উঠবে, তার নিচে চাপা পড়বে সাধারণ মানুষের বাড়িঘর। সাধারণ মানুষের মধ্যে জীবনযাপনের যে বৈষম্য দেখা দেবে, তা হবে পীড়াদায়ক। সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে সবার বিকাশ সমান হবে। সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। জীবনযাপনে ভালগার (Vulgur) অসাম্য দেখা দেবে না।

বঙ্গবন্ধুর এই কথা আজ সত্য হয়েছে। ভারত ও চীনের কাছ থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা এনে আমরা ঢাকাকে প্রায় সিঙ্গাপুর বানিয়েছি। কিন্তু বড় বড় উড়ালসেতু এবং আকাশছোঁয়া বিল্ডিংয়ের নিচে সামাজিক সাম্য ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তো এমন হয়েছে, সাহায্যদাতারা বিরাগ হয়ে তাদের সাহায্য প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিলে এই উন্নয়নের বালুঘর ভেঙে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারকে তাই বলি, পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ফিরে যাও। সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়—এই নীতিতে ফিরে যাও।

সামাজিক সাম্যের ভিত্তি ছাড়া যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, তা চোখ ধাঁধানো হতে পারে; কিন্তু দেশে আর্থিক সাম্য প্রতিষ্ঠা করে না এবং নাগরিক অধিকারও নিশ্চিত করে না। আওয়ামী লীগ যে আদর্শের জন্য সংগ্রাম করেছে, তা বিসর্জন দিয়ে ক্ষমতায় থেকে লাভ নেই।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

পাওয়ার গ্রিড বিপত্তির জের, মুম্বইয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা অন্ধকারে, ব্যাহত ট্রেন পরিষেবা-সংবাদ প্রতিদিন

পাওয়ার গ্রিড বিপত্তির জের। রবিবার দীর্ঘক্ষণ অন্ধকারে ডুবে থাকল মুম্বইয়ের একটা বড় অংশ। ব্যাহত হল লোকাল ট্রেন পরিষেবাও। যার ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল বাণিজ্যনগরীর বাসিন্দাদের। রবিবার সকালে হঠাৎই মুম্বইয়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল অন্ধকারে ডুবে যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে সিওন, মাটুঙ্গা, পারেল, দাদর, সিএসএমটি, বাইকুল্লা, চার্চগেট এলাকা। আন্ধেরি এবং চার্চগেটের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় থমকে যায় বহু লোকাল ট্রেন। রবিবার হওয়ায় অফিস যাত্রীদের তেমন ভিড় ছিল না। তা সত্ত্বেও বহু মানুষকে এদিন ভোগান্তির শিকার হতে হয়। নাগরিকদের সমস্যার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন বৃহন্মুম্বই পুরনিগমের কমিশনার ইকবাল সিং চাহাল। তাঁর বক্তব্য, মুম্বই শহরের প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থা বেস্টে কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় শহর অন্ধকারে ডুবেছে।

ইউক্রেনে হামলা রাশিয়ার, পথে নামল তৃণমূল-আজকাল

ইউক্রেন আক্রমণ রাশিয়ার। পথে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও আটকে থাকা ভারতীয়দের ফেরানোর দাবিতে মিছিল করল তৃণমূলের মহিলা সংগঠন। যদিও এই মিছিলকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।  তিনি বলেন, ‘এই সব করে কিছু লাভ হবে না। ভারতীয়দের ফেরানোর কাজ আগেই শুরু করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে পাল্টা দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘অবান্তর কথা। উত্তর দেওয়ার কোনও মানে হয় না। বিজেপি কী বলল না বলল তাতে কিছু যায় আসে না। তারা মানুষের আপদে বিপদে থাকে না। সব সময় তৃণমূল কর্মীরাই থাকেন।’‌

পুরভোটে অশান্তি, অভিযোগ ছাপ্পা ভোট, ইভিএম ভাঙচুর, প্রার্থীকে মারধরের-আনন্দবাজার পত্রিকা

রবিবার পশ্চিমবঙ্গের ২০ জেলার ১০৮ পুরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও সকাল থেকে বুথ দখল, ছাপ্পা, বোমাবাজির অভিযোগ উঠল। ইভিএম ভাঙচুর করা হয়েছে একাধিক জায়গায়। ভোটে আক্রান্ত বিরোধী প্রার্থীরা, তেমনি আক্রান্ত হয়েছেন শাসক দলের প্রার্থীও।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭

ট্যাগ