মার্চ ৩১, ২০২২ ২০:০৫ Asia/Dhaka

সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। তাঁর এমনই এক নাম হল ক্বাদির। এ নামের অর্থ সক্ষম ও শক্তিশালী। পবিত্র কুরআনে এ নাম সাত বার এসেছে। ক্বাদির শব্দ এসেছে ক্বাদারা নামক আরবি শব্দ থেকে।

এর অর্থ এমন শক্তির অধিকারী যে কেউই তাঁকে কাবু করতে পারে না, অন্যদিক ক্বাদির যখন যেখানে বা যার ওপর যা-ই করতে চান না কেন তা-ই করার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে এবং এজন্য কারো সাহায্য-সহায়তার মুখাপেক্ষী নন তিনি। সব কিছুরই ওপর রয়েছে তাঁর পরিপূর্ণ কর্তৃত্ব। 

পবিত্র কুরআনের ৬ নম্বর সুরা তথা সুরা আনআমের ৬৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : বলুন আল্লাহ ক্বাদির বা শক্তিশালী।

মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ এবং তাঁর মোকাবেলায়  কেউ দাঁড়াতেই সক্ষম নয়। মহান আল্লাহর অনুগত বা বিরোধী কেউই তাঁর অপরাজেয় কর্তৃত্বের বেষ্টনী থেকে বের হতে পারে না। সুরা ইয়াসিনের ৮২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, ‘হও’ তখনই তা হয়ে যায়।

মহান আল্লাহ চাইলেই যখন খুশি তখনই যা ইচ্ছা তা-ই সৃষ্টি করতে পারেন আবার যা খুশি তা ধ্বংসও করতে পারেন। আল্লাহ ছাড়া অন্যরা যে যত ক্ষমতা বা শক্তির অধিকারীই হোন না কেন তাদের ক্ষমতা সীমিত এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। মহান আল্লাহর ইচ্ছার কারণেই প্রবল পরাক্রান্ত জালিম নমরুদের প্রজ্জ্বলিত আগুন হযরত ইব্রাহিমের কোনো ক্ষতি করতে পারেনি এবং সামান্য মশার মাধ্যমে আল্লাহ নমরুদকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করিয়েছেন। মহান আল্লাহর ইচ্ছার কারণেই নীল নদী দুই ভাগ হয়ে মুসা নবী ও তাঁর সঙ্গে থাকা বনি-ইসরাইলকে রক্ষা করেছে এবং ফেরাউন ও তার দলবল সেই একই স্থানে ডুবে মরেছে।  মহান আল্লাহর নির্দেশে চরম কৃপণ কারুন তার সম্পদসহ তলিয়ে গেছে মাটির নীচে এবং যুগে যুগে বহু জাতি মহান আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসুলের বিরোধী হওয়ার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে কখনও প্রবল তুফান ও প্রস্তর বৃষ্টিতে ও কখনওবা মহাপ্লাবনে। তাই মানুষের বোঝা উচিত যে একমাত্র উপাস্যই হলেন মহান আল্লাহ এবং মহান আল্লাহর নির্দেশ নত শিরে ও সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেয়া উচিত। বিপদে আপদে একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য চাওয়া উচিত।

সুরা শুরার ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন সম্পর্কে বলা হয়েছে:

তাঁর এক নিদর্শন নভোমন্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টি এবং এতদুভয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীব-জন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি যখন ইচ্ছা এগুলোকে একত্রিত করতে সক্ষম।

আকাশের অসংখ্য তারকারাজি ও সেসবের ঘুর্ণনপথ মহান আল্লাহর ক্ষমতাই তুলে ধরে। মহান আল্লাহ'র ক্ষমতার কারণেই শীতকালে সব গাছপালার পাতা ঝরে পড়ে ও বসন্তকালে আবারও বৃষ্টির মাধ্যমে সবুজ পাতায় সুশোভিত হয় । মহান আল্লাহ না চাইলে কোনো গাছেই ফল ধরবে না এবং কোনো বীজ থেকেই চারা গজাবে না। মাতৃগর্ভে কে সন্তানকে জীবিত রাখেন?। কে মানুষকে জীবন দেন ও কে মানুষের মৃত্যু ঘটান? –এসব প্রশ্নেরই একমাত্র উত্তর মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআনের ৭৫ নম্বর সুরা তথা সুরা ক্বিয়ামাতের তৃতীয় ও চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

মানুষ কি মনে করে যে আমি তার হাড়গুলো একত্রিত করব না? পরন্ত আমি তার আঙ্গুলগুলোর রেখাসহ সব কিছু সঠিকভাবে সন্নিবেশ করতে সক্ষম।

মহান আল্লাহ ক্বাদির বা ক্ষমতাধর। ক্বাদির শব্দের আরেকটি অর্থ হল পরিমাণ বা পরিমাপ। মানুষ যখন কোনো কাজ করতে চায় তখন আগে তা নিয়ে গবেষণা করে ও মাপজোখ করে এবং এরপর ক্ষমতা বা শক্তির প্রয়োগ ঘটায়। মহান আল্লাহ প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট মাত্রা বা সীমানা নির্ধারণ করেছেন।  আর একটি প্রাণী বা সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনতে গিয়ে অন্য প্রাণী বা সৃষ্টির প্রতি কোনো জুলুম করেন না এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকেই দিয়েছেন পরিপূর্ণতা। কুরআনের ৭৭ নম্বর সুরা তথা সুরা মুরসালাত-এর ২০ থেকে ২৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ মানুষকে শুক্রাণু বা তুচ্ছ পানি থেকে সৃষ্টি করে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মাতৃগর্ভে তা সংরক্ষিত রাখার কথা উল্লেখ করে বলেছেন: আমি পরিমিত আকারে সৃষ্টি করেছি, আমি কত সক্ষম স্রষ্টা!

যারা মহান আল্লাহর ক্বাদির নাম সম্পর্কে সচেতন তারা মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার তথা খোদায়ি শাস্তির মুখোমুখি হওয়ার সাহস রাখেন না। তারা মহান আল্লাহর রহমতেরই প্রত্যাশা করেন এবং তারা জানেন যে আল্লাহ ন্যায়বিচারক ও কৌশলী বা মহাপ্রজ্ঞার অধিকারী। আল্লাহর কাছে চাইলে আল্লাহ সর্বোত্তম পন্থায় তাদের কাজ সুসম্পন্ন করতে সক্ষম।  মহান আল্লাহর ক্বাদির নামের স্মরণ মুমিনের হৃদয়ে যোগায় প্রশান্তি ও খোদাপ্রেমের চেতনা। ক্বাদির নাম মুমিনের অস্তিত্বের সর্বত্র জাগিয়ে তোলে শিহরণ। তারা সব কিছুর মধ্যে মহান আল্লাহর ক্ষমতার নিদর্শন প্রত্যক্ষ করেন।  তারা আল্লাহর ক্ষমতার বিষয়টি দেখা, শোনা ও বলাসহ সব ক্ষেত্রে অনুভব করেন। তারা যদি মজলুম হন তাহলে আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে অধিকার আদায়ে সক্রিয় হন এবং কখনও আল্লাহর আইন লঙ্ঘন করেন না।  মুমিন সুখে ও দুঃখে সব সময়ই মহান আল্লাহর ক্ষমতা উপলব্ধি করেন এবং বিপদের সময়ও এটা মনে রাখেন যা আল্লাহই তাকে অন্য সবার চেয়ে বেশি মাত্রায় সাহায্য করতে সক্ষম। বরং অন্যরা আল্লাহরই মুখাপেক্ষী। তাই মুমিন সব সময়ই মহান আল্লাহর ক্বাদির নামের প্রতি বিশ্বাসী ও আস্থাশীল এবং এই নামে তারা প্রশান্তি পান।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ৩১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।