এপ্রিল ০৮, ২০২২ ০৬:৩০ Asia/Dhaka

আসলো আবার রোজা/ তাইতো আমার নতুন করে সোজা পথটি খোঁজা। রমজানের এই মাসে/অতীত দিনের গোনাহ যতো আমার চোখে ভাসে। চাইবো আমি ক্ষমা/আমল নামায় যতো গোনাহ লেখা আছে জমা।

রোজাকে আরবিতে সাওম বলা হয়। সাওম বা সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায়,সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার এবং কামাচার থেকে বিরত থাকাকে ‘সাওম’ বা রোজা বলা হয়। বিশ্ব প্রতিপালক আল কুরআনে ইরশাদ করেন,‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। আর এ জন্যই ফরজ করা হয়েছে যাতে তোমরা তাকওয়া হাসিল করতে সক্ষম হও।’ (সূরা বাকারা : ১৮৩)

এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে,আল্লাহ বলেছেন,তেমনিভাবে রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। এ বাণীটির দ্বারা মুসলিম জনগোষ্ঠীকে আল্লাহ তায়ালা সাহস প্রদান করেছেন। এরপর মহান প্রতিপালক বলেছেন,‘লায়াল্লাকুম তাত্তাকুন’। এ জন্য রোজা ফরজ করা হয়েছে যাতে তোমরা তাকওয়াবান হতে পার। এ বাণীর দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে,রোজা ফরজ করা হয়েছে এ জন্য যাতে ঈমানদারগণ তাকওয়াবান হয়। এই তাকওয়াবান হওয়াই হল রোজার অভীষ্ট লক্ষ্য।

আজ মানবজাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য যে নৈতিক মূল্যবোধ প্রয়োজন তা আজ আমাদের নেই। আজ আমরা জানি না শান্তি নামক সাদা পায়রাটি কোথায় বাস করে। উন্নত চরিত্রের ক্ষেত্রে কালের চক্রে আদর্শের ময়দানে আজ আমরা পরাজিত। আজ আমরা বিজ্ঞান প্রযুক্তির আবিষ্কারে সত্যিই এক অসাধারণ কৃতিত্বের দাবিদার; কিন্তু নীতি নৈতিকতায় আমরা ফিরে গেছি অন্ধকার যুগে।

মানবীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় না হলে এই উন্নতি আমাদের বসবাসযোগ্য একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিত। আমরা এই মাহে রমজানে সেহরি ইফতারিসহ সব বন্দেগির মাধ্যমে আমাদের জীবনকে আলোয় আলোয় ভরে তুলতে পারি। আজ আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মানবীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা। আর এ জন্য প্রয়োজন তাকওয়ার,যা অর্জন হয় সিয়াম পালনে। -

রোজা ফরজ করা হয়েছে তাকওয়াবান হওয়ার উদ্দেশ্যে আর এ উদ্দেশ্যে পৌঁছার মাধ্যম হল সেহরি খাওয়া,ইফতার করা,সব ধরনের প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু আমরা যদি এই সেহরি খাওয়া,ইফতার করা সব ধরনের প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে ফিরে থাকাকে সাওম মনে করি তাহলে আমাদের পক্ষে উদ্দেশ্যে পৌঁছা সম্ভব হবে না। এগুলোকে উদ্দেশ্য নয় উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম মনে করতে হবে। আর যখনই কোনো ব্যক্তি উদ্দেশ্য সাধনের মাধ্যম মনে করে এসব পালন করবে তখনই রোজা এবং কুরআন ওই ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে কাল কিয়ামতের ময়দানে।

রোজা বলবে,‘হে আল্লাহ! আমি তাকে পানাহার থেকে এবং সকল প্রকার প্রবৃত্তির চাহিদা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি অতএব ওই ব্যক্তির জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো।’ আর কুরআন বলবে,‘হে আল্লাহ! আমি তাকে রাতের নিদ্রা হতে বিরত রেখেছি। অতএব তার জন্য আমার সুপারিশ কবুল করো।’ এই রমজান মাসই হল তাকওয়া অর্জনের উত্তম মৌসুম। 

রাসূল (সা.) বলেছেন,‘যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। অপর বর্ণনায় এসেছে,জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলিত।’ অপর বর্ণনায় এসেছে,‘রহমতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়।

তাই আসুন,কুরআন নাজিলের এই মাসে কুরআন পড়ি,কুরআন শিখি এবং নিজেকে পূত-পবিত্র করে গড়ে তুলি। রোজার মাধ্যমে আল্লাহভীতি বা তাকওয়া সৃষ্টি করি,যা মানুষকে আত্মসংযমী ও আত্মশুদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করে,যা নৈতিক চরিত্রের জীবনীশক্তি। যার মাধ্যমে সমাজ ও ব্যক্তি এক মহান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ও কলুষমুক্ত হতে পারে। আমরা ক'টি টাকা হারিয়ে গেলে দিনভর আক্ষেপ করি ! কিন্তু প্রতিটি মুহূর্তে জীবন থেকে যে মূল্যবান সময় হারিয়ে যাচ্ছে সেজন্য কি আক্ষেপ করছি? যেকোনো সময় মৃত্যু চলে আসতে পারে। তাই জীবনের প্রতিটি দিনকেই জীবনের শেষ দিন মনে করতে হবে। আমাদের সবার বাড়ির দরজায় মৃত্যুর ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি ডাক দিলে আর প্রস্তুতি নেয়ার সময় পাওয়া যাবে না। তাই হাতে যে দিনটি আছে সেটিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের জীবনকে তাকওয়ার শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করিয়ে করে তুলতে হবে উন্নততর,মহত্ত্বর পবিত্রতর।

মহানবী (সা:) বলেছেন: রমযান মাস মহান আল্লাহর মাস এবং এ মাসটা হচ্ছে  গরীব দুঃখীদের বসন্ত কাল।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আ) বলেছেন, সব কিছুরই বসন্ত রয়েছে, আর পবিত্র কুরআনের বসন্ত হল রমজান মাস।

রমজানেই নাজিল হয়েছিল পবিত্র কুরআন- যা মানুষের জন্য সুপথ দেখায় এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকে স্পষ্ট করে দেয়। রমজানে কুরআন অধ্যয়ন ও তিলাওয়াতের রয়েছে অশেষ ফজিলত। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র কুরআন থেকে সর্বোচ্চ কল্যাণ লাভের তৌফিক দিন।

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবুসাঈদ/৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।