এপ্রিল ৩০, ২০২২ ০২:২৩ Asia/Dhaka

‘ইরান এবং আরও কয়েকটি মুসলিম দেশ ছাড়া আল-কুদস মুক্তির আন্দোলনে তেমন কোনো দেশের ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না। দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, আরব আমিরাত,কুয়েত সৌদি আরব মুনাফেকের ভূমিকা পালন করছে। তারা আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের চেয়েও বস্তুবাদী এবং অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতির দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইসরাইলকে দেখছে।’

তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে। কিন্তু ইসরাইল যে প্রতিনিয়ত মুসলমানদের ক্ষতি করছে সে দিকটি তারা উপেক্ষা করে ঐসব দেশ ইসরাইলের পদলেহন করছে, তাদের দালালি করছে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলেছে। এর পরিণতি কি সেটা আমার জানা নেই! তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক মুসলমানদের জন্য।

সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবুদর রশীদ।

সুপ্রিয় শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ বিশ্ব কুদস দিবস। বিশ্ব মুসলিমের জাগরণের দিন। রমজানের শেষ শুক্রবার বিশ্বের দেশে পালিত হচ্ছে দিনটি। আমরা বিশ্ব কুদস দিবস নিয়ে কথা বলেছি, বাংলাদেশ আল কুদস কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসানের সঙ্গে। জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান, রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

মোস্তফা তারেকুল হাসান: আপনাকেও আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আল-কুদস দিবসে এই দিন সম্পর্কে আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেয়ার জন্য। 

রেডিও তেহরান: জনাব,মোস্তফা তারেকুল হাসান, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র) রজমান মাসের শেষ শুক্রবারকে আন্তর্জাতিক কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এত বছর পর এসে ইমাম খোমেনীর সেই ঘোষণাকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

ইমাম খোমেনী (র)

মোস্তফা তারেকুল হাসান: আমি সবাইকে শুরুতে সালাম জানাচ্ছি। ইরানের ইসলামি বিপ্লবের রূপকার, মহান নেতা মরহুম ইমাম খোমেনী (র) রজমান মাসের শেষ শুক্রবারকে যে আন্তর্জাতিক-কুদস দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন-এর গুরুত্ব অপরিসীম। এর গুরুত্ব এখনও রয়েছে একইভাবে। কারণ আল-কুদসকে মুক্ত করার জন্য পৃথিবীর অন্য কোনো মুসলিম দেশ কিংবা নেতাদের সেভাবে মাথা ব্যথা আছে এমনটি আমরা আজ পর্যন্ত দেখি নি। আর সেদিক থেকে মহান নেতা ইমাম খোমেনী (র) এর সেই ঘোষণা এবং একটি দিবস ঠিক করে দেওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একইসাথে অশেষ গুরুত্ব রাখে। দেখুন, আমরা তো প্রতিদিনই আল-কুদস মুক্তির জন্য আন্দোলন করি। আমাদের চেতনা এবং সামগ্রিক আলোচনায় বিভিন্ন মানুষের কাছে আল-কুদস এর কথা তুলে ধরি। আল-কুদস নিয়ে, ফিলিস্তিনিদের নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো লেখা, আলোচনা থাকে। আজকে যা কিছু হচ্ছে সবকিছুই কিন্তু ইমাম খোমেনী (র)এর সেই ঘোষণাকে কেন্দ্র করেই আজও আবর্তিত হচ্ছে। আমরা সেই চেতনায় উদ্ধুব্ধ হয়ে আজও জোরালোভাবে বলছি- আল কুদসকে মুক্ত করতে হবে। ইমাম খোমেনী (র) যে কুদস দিবস ঘোষণা করেছিলেন সেই দিবসকে সামনে রেখে কুদস মুক্তির আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ফলে তাঁর আল-কুদস দিবসের ঘোষণা যৌক্তিক এবং গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে।

রেডিও তেহরান: ইহুদিবাদীদের কবল থেকে বায়তুল আকসা ও আল-কুদস শহর মুক্ত করার জন্যই মূলত আল-কুদস দিবস ঘোষণা করা হয়। এই লক্ষ্য অর্জ্যনের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কুদস এ দিবসের অর্জন কী?

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন, একটি দিবসের তো অবশ্যই গুরুত্ব রয়েছে। সারা বছর এ বিষয়টি প্রচার, আলোচনা,সভা সেমিনার চললেও এই বিশেষ দিনটির গুরুত্ব এসব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়। কুদস দিবস কেন্দ্রীক যে আয়োজন সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিশেষ দিবসকে কেন্দ্র করে যা কিছু হয় বিশ্বজুড়ে তা ব্যাপক আকারে হয়ে থাকে। ফলে আপনি যেকথা জানতে চেয়েছেন এর অর্জন কি? অর্জন আসলে অনেক। ধরুন আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি বলি-এদেশের মানুষ এক সময় আল-কুদস কি এই জিনিষটাই বুঝত না। মুসলমানদের প্রথম কেবলা আছে সেটা অবরুদ্ধ হয়ে আছে, একে যে মুক্ত করতে হবে, এর আছে হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এসব বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের খুব বেশি জানাশোনা ছিল না।

পবিত্র কাবার যে গুরুত্ব আছে মুসলমানদের কাছে প্রথম কেবলা মসজিদুল আকসারও সেই একইরকম গুরুত্ব রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ এসব জানত না। কিন্তু আল-কুদস দিবস এই যে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর পালিত হচ্ছে এই পালন করাটাই কিন্তু গণমানুষের মধ্যে এক ধরণের চেতনা সৃষ্টি করছে এবং এই আন্দোলনটাকে আরও বেগবান করছে।

রেডিও তেহরান: আমরা দেখতে পাচ্ছি একদিকে ইরান কুদস দিবস ঘোষণা করেছে এবং আন্তর্জাতিকভাবে তা পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে কোনো কোনো আরব দেশ প্রকাশ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করছে। দুটি বিষয়কে আপনি কীভাবে দেখেন?

এবার রমজানে ফিলিস্তিনীদের ওপর ইসরাইলি সেনাদের হামলা

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন আরব দেশগুলোতে অবশ্যই মুসলমানরা থাকে। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে কিছু আরব দেশের ভূমিকা লজ্জাজনক। তারা মুনাফেকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। বিশেষ করে আরব আমিরাত,কুয়েত এবং সৌদি আরবের কথা যদি বলি-তারা আসলে কি করছে! এসব দেশ আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের চেয়েও বস্তুবাদী এবং অর্থনৈতিক লাভ ক্ষতির দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ইসরাইলকে দেখছে। তাদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে। কিন্তু ইসরাইল যে প্রতিনিয়ত মুসলমানদের ক্ষতি করছে সে দিকটি তারা উপেক্ষা করে ঐসব দেশ ইসরাইলের পদলেহন করছে, তাদের দালালি করছে এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সমর্থন জানিয়ে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলেছে। এর পরিণতি কি সেটা আমার জানা নেই! তবে বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক মুসলমানদের জন্য।

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! আপনারা বিশ্ব কুদস নিযে বাংলাদেশ আল কুদস কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসানের  সাক্ষাৎকার শুনছেন, ফিরছি খুব শিগগিরিই আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর আবারও ফিরে এলাম..পবিত্র আল-কুদস উদ্ধারের প্রচেষ্টা বাদ দিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে কোনে কোনো আরব দেশের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পরিণাম কী হতে পারে? এই উদ্যোগ কী চূড়ান্ত বিচারে আরব দেশগুলোকে সম্মানিত করছে?

মোস্তফা তারেকুল হাসান: না, এটা একদমই ঠিক হচ্ছে না। বরং আমি মনে করি পবিত্র আল-কুদস উদ্ধারের প্রচেষ্টা কিংবা মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে-তাদেরকে আমি কোনো প্রতিষ্ঠান বলব না। সেই অর্থে আমি বলব, আল-কুদস উদ্ধারসহ মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নেই! আমি আগেই বলেছি আবারও বলছি, আন্তর্জাতিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারে যেসব দেশ তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদী ইসরাইল এবং আমেরিকার তোষামোদ করে চলছে। সেক্ষেত্রে একমাত্র ইরানই কথা বলে সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে এবং আরও কয়েকটি দেশকে দেখি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পালন করছে। আমরা ইয়েমেনকে দেখি, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে দেখেছি মাঝে মাঝে এ বিষয়ে কথা বলতে। তবে এটি আসলে যথেষ্ট নয়। আমি মনে করি আরব লীগ নামে যে প্রতিষ্ঠানটি আছে সেই প্রতিষ্ঠানটিকে ভেঙ্গেচুরে গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে মুসলমানদের জন্য একটি সংগঠন করা উচিত। যেটি সাম্রাজ্যবাদী তোষণনীতির সম্পূর্ণ বাইরে থাকবে। সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর আগ্রাসনের বাইরে গিয়ে তারা সঠিক মতামত দিতে পারবে। তারা জোটবদ্ধ এবং ঐক্যবদ্ধভাবে ইসরাইলের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করতে পারবে। আর তাহলেই হয়তো আমরা আল কুদস উদ্ধারের একটি সম্ভাবনা হয়তো দেখতে পাব।

রেডিও তেহরান: আল-কুদস উদ্ধারে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা রয়েছে কিন্তু তা কী যথেষ্ট শক্তিশালী? এজন্য আরো কী করার আছে?

বাংলাদেশে কুদস দিবস পালন

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন, প্রতিবছরই রমজান মাসে ইসরাইল ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর আগ্রাসী হয়ে ওঠে। অত্যাচার নির্যাতন ধরপাকড় করে। এবছর ইসরাইলের সেই ভূমিকা আরও বেড়েছে। মুসলমানরা এবছর কোনোভাবেই আল-আকসা মসজিদে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেনি। তাঁদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালানো হয়েছে। মুসলমানরা সেখানে নামাজ পড়তে পারে নি, জুমা নামাজ আদায় করতে দেয় নি। এখন যেটি শোনা যাচ্ছে সেটি আরও ভয়ঙ্কর। আমি বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে দেখলাম- ইসরাইল আল-কুদস পুরোপুরি দখলে নিতে চাচ্ছে। এখানে মুসলমানদের কোনো অধিকার আছে বলে স্বীকারও করতে চাইছে না। ভবিষ্যতে মুসলমানদের এখানে নামাজ পড়া তো দূরের কথা ঐ চৌহদ্দির মধ্যে মুসলমানদের ঢুকতে দেবে না। এরকম একটা পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছে। ইসরাইলের এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জোরালো এবং শক্তিশালীভাবে প্রতিবাদের আওয়াজ তোলা দরকার। মুসলিম দেশগুলোর নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসরাইল এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দরকার। সব রকম তোষামোদি বাদ দিয়ে বিশ্বজুড়ে গণ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার।

রেডিও তেহরান: জনাব অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, সব শেষে আপনার কাছে জানতে চাইব, আপনি আল-কুদ্‌স কমিটি বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল। প্রতিবারের মতো এবারও আপনারা অনুষ্ঠান করেছেন। কেমন হলো এবারের অনুষ্ঠান?

মোস্তফা তারেকুল হাসান: দেখুন, এবার আসলে আমরা সেরকম বড় করে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারি নি আমাদের আল-কুদস কমিটি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। তবে পোস্টারিং করেছি। এনটিভিতে আমাদের একটি টক শো হয়েছে আল-কুদস এর ওপর। তাছাড়া একটি রেডিওতেও এ বিষয়ে একটি আলোচনা হয়েছে। আল কুদস আন্দোলনকে সফল করার জন্য আহ্বান জানিয়েছি। আমরা মনে করেছিলাম এবার একটি ভালো অনুষ্ঠান আমরা করতে পারব। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেটা করতে পারি নি। ইনশাআল্লাহ আগামীতে আমরা বড় অনুষ্ঠান করব বলে আশা করছি।

তো জনাব মোস্তফা তারেকুল হাসান বিশ্ব কুদস নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে আবারও অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মোস্তফা তারেকুল হাসান: আমি আমার পক্ষ থেকে এবং বাংলাদেশ আল-কুদস কমিটির পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে ইচ্ছে পোষণকারী এবং ফিলিস্তিনের মুক্তি যারা চায় বিশ্বে তাদের সবার প্রতি আমার মোবারকবাদ জানাচ্ছি ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি একইসাথে রেডিও তেহরানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৯

ট্যাগ