মে ০১, ২০২২ ১৪:৫১ Asia/Dhaka

আজ যদি হয় রমজানের শেষ দিন কাল ভোরেই আসবে প্রিয়তম খুশির ঈদ আরও একটি বছর থাকবো তোমার প্রতীক্ষায়, হে প্রিয় রমজান প্রিয়তম সুহৃদ! এ রমজানই যেন না হয় আখেরি-রমজান! হে রহমান কবুল কর মোদের এ তাগিদ!

রমজান দোয়া কবুল ও পুণ্য অর্জনের মাস। আত্মশুদ্ধির এ মাসে অবারিত রহমত-বরকতের পাশাপাশি দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে নিজেকে পাক-সাফ করে নেয়া যায়। মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য এবং যে কোনো বিপদ-মসিবত থেকে উত্তরণে দোয়ার বিকল্প নেই। আমাদের ওপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটা এক বড় ধরনের নিয়ামত ও অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের তাঁর কাছে দোয়া করার অনুমতি দিয়েছেন এবং দোয়া কবুলেরও ওয়াদা করেছেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আমার কাছে দোয়া কর, আমিই তোমাদের দোয়া কবুল করব। (সুরা মুমিন : ৬০)

রমজানে দোজখের দরজাগুলো বন্ধ এবং বেহেশতের দরজাগুলো খোলা থাকে। শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে চারদিকে, যার ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবার হৃদয়-মন হয় বিগলিত ও ইবাদতপ্রবণ। গোনাহ কম হয়, পুণ্যের কাজে অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে আল্লাহতায়ালার করুণার বারি বর্ষণ মানুষকে বিনয়ী, সহানুভূতিশীল ও অহঙ্কারমুক্ত করে তোলে, যার ফলে অন্যের মঙ্গল কামনা ও সমবেদনায়ও মন আকুল হয়ে যায়, কায়মনে দোয়ার উচ্চারণ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। তার এ দোয়া আল্লাহতায়ালা ব্যর্থ মনোরথে ফেরত দেন না। কারণ রমজানের পুরো সময়েই রহমতের আবহ বইতে থাকে।

রমজান মাসের নফল নামাজ, তাহাজ্জুদ, সাহরি ছাড়াও ইফতারে দোয়া কবুল হয়।

হাদিসে তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়ার কথা এসেছে, তার একটি হলো রোজাদারের ইফতারের আগ মুহূর্তের দোয়া।  রমজানে মহানবী (সা.) বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। দোয়ার মাধ্যমেই তাঁর নৈকট্য হাসিল করা সহজ। তাই দোয়াকে শুধু আনুষ্ঠানিকতার রূপ দেয়া উচিত নয়, বরং দোয়াকেও ইবাদত মনে করতে হবে। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদ্দুআ-উ হুয়াল ইবাদাহ অর্থাৎ দোয়াই ইবাদত। এ ছাড়াও তিনি দোয়াকে সর্বোত্তম ইবাদত ও ইবাদতের সার-নির্যাস বলেছেন।তিনি আরও বলেছেন, দোয়া হচ্ছে মুসলমানদের হাতিয়ার ও দীন ইসলামের স্তম্ভস্বরূপ এবং আসমান-জমিনের নূরময় আলো, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই। আল্লাহ যখন বান্দাকে দোয়া করার অনুমতি দেন, তখন তার জন্য রহমতের দ্বার খুলে যায়। কেননা, দোয়ার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হতে পারে না। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (হে নবী!) আমার বান্দা যদি আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তবে তাদের বলে দিন, আমি তাদের অতি কাছে। আমাকে যে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং তা কবুল করি। (সুরা বাকারা : ১৮৬)

যখন দোয়াকারী ব্যক্তি হালাল খাবার গ্রহণ করে উপযুক্ত সময়ে দোয়ার শর্তাবলি মেনে প্রাপ্তির আশা-ভরসা, নাজাতের প্রত্যাশা ও দোজখের শাস্তির ভয় নিয়ে কায়মনোবাক্যে এবং চোখে অশ্রু ও মনে পরম আকুতিসহ দোয়া করে, তখন দোয়া কবুলের সম্ভাবনা থাকে। -যারা আল্লাহর সামনে বিনীত হতে লজ্জাবোধ করে, লোকলজ্জায় দোয়া করে না, দোয়ায় অন্যমনস্ক ও উদাসীন থাকে কিংবা গর্ব ও অহঙ্কারে দোয়া-মোনাজাত এড়িয়ে যায়, তার শাস্তি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, যারা গর্ব ও অহঙ্কারে নিমজ্জিত হয়ে আমার ইবাদত করা থেকে বিমুখ থাকে, তারা সত্বরই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অন্যত্র বলেছেন, তার জন্য আল্লাহর কোনো দায়দায়িত্বই নেই। ইরশাদ হয়েছে, (হে নবী!) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে না ডাক তোমাদের ব্যাপারে আমার প্রতিপালকের কী প্রয়োজন পড়েছে? (সুরা ফুরকান : ৭৭)

আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) এবং আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। দোয়া, কান্নাকাটি ও অনুনয়-বিনয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনই ছিল তাদের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া। শুধু রমজানে নয়, সারা বছর তাদের দৈনন্দিন আমলি জিন্দেগিতে অজিফা, জিকর, দোয়া ও মোনাজাত রুটিন কাজ ছিল।আমাদেরও উচিত রমজানে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে নিজেদের গোনাহখাতা মাফ করিয়ে নেয়া।

 মহানবী (সা.) বলেছেন, রমজানে যে ব্যক্তি নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারে না, তার চেয়ে হতভাগ্য আর নেই। আমরা যেন আন্তরিক দোয়ার মাধ্যমে এই বিপদ থেকে যেন রেহাই পেয়ে যাই এবং দীন-দুনিয়ার তাবৎ কল্যাণে যাতে কাজ করে যেতে পারি, মহান আল্লাহর কাছে সেই তাওফিক কামনা করছি।

মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে বলেছেন, হে দাউদ! জমিনে থাকা আমার বান্দাহদের বলুন: আমি তাঁর বন্ধু যে আমাকে ভালোবাসে। আমি তাঁর সহাবস্থানে থাকি যে আমার সঙ্গে থাকে। আমি তাঁর সঙ্গে একাত্ম হই যে আমাকে স্মরণ করতে ও আমার নাম নিতে ভালোবাসে। আমি তাঁর সফর-সঙ্গী যে আমার পথে চলে। আমি তাঁকে বেছে নেই যে আমাকে বেছে নেয় ও আমি তাঁর কথা শুনি যে আমার নির্দেশ মেনে চলে। যে আমাকে অন্তর থেকে ভালোবাসে আমি তাতে নিশ্চিত হই। আর সেক্ষেত্রে আমি তাঁকে নিজেই গ্রহণ করি ও তাঁকে এতো ভালবাসি যে অন্য কোনো বান্দাহ তাঁর চেয়ে এগুতে পারে না তাঁর চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায় না আমার কাছে। যে সত্যিকার অর্থে আমাকে খোঁজে সে আমাকে পায়, আর যে আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে খোঁজে  সে আমাকে পাবে না। তাই হে জমিনের অধিবাসীরা! তোমরা দুনিয়ার এইসব প্রতারণা ও মিথ্যা ত্যাগ কর; বরং আমার দয়া, আমার সাহচর্য, আমার সহাবস্থান ও আমার সঙ্গে মিলনের দিকে ছুটে আস এবং আমাকে ভালবাস যাতে আমিও তোমাদেরকে ভালবাসি ও তোমাদেরকে ভালোবাসার দিকে ছুটে যাই।’ 

এবারে শোনা যাক অর্থসহ ২৯তম রমজানের দোয়া:

পার্সটুডে/এমএএইচ/মো.আবুসাঈদ/২৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ