মে ০৮, ২০২২ ২১:০৫ Asia/Dhaka

সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। মহান আল্লাহর এমনই এক নাম হল তাও্‌ওয়াব। এর অর্থ অত্যন্ত বেশি মাত্রায় পাপীর তওবা গ্রহণকারী তথা অনুতপ্তদের প্রতি অত্যন্ত বেশি ক্ষমাশীল।

তওবার আভিধানিক অর্থ পাপ করার পর অনুতপ্ত হৃদয়ে আর পাপ না করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া তথা তাঁর দিকে ফিরে যাওয়া। যারা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে তাদের পাপ আল্লাহ ক্ষমা করেন। তওবা করার পর আবারও যদি পাপে জড়িয়ে পড়ে কেউ এবং আবারও অনুতপ্ত হৃদয় নিয়ে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তাহলে আল্লাহ আবারও তার তওবা কবুল করেন। এভাবে পাপী বার বার পাপ করেও যদি অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় আল্লাহ তাঁর ব্যাপক করুণা ও ক্ষমাশীলতার কারণে ওই পাপীকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কুরআনের ৩৯ নম্বর সুরা তথা সুরা জুমারের ৫৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:

বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর জুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

ইসলাম ধর্ম মহান আল্লাহর ক্ষমাশীলতার বিষয়ে হতাশাকে মহাপাপ বা কবিরা গোনাহ বলে উল্লেখ করেছে।  মহান আল্লাহ তওবাকারীদের খুবই ভালোবাসেন। তবে শর্ত হল তওবা হতে হবে বাস্তব, আন্তরিকতাপূর্ণ এবং পুনরায় পাপ করার ইচ্ছা করা যাবে না। আর এমন অবস্থায় মানুষ তওবা কবুল হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী হতে পারে। পাপের কারণে মানুষ আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যায়। আর তওবার মাধ্যমে মানুষ আবারও আল্লাহর দাসত্ব ও আনুগত্যের ধারায় ফিরে আসে। তাই  মহান আল্লাহর তাও্ওয়াব নাম এটা বোঝায় যে আল্লাহ তাঁর রহমতের দিকে ব্যাপক বা বিপুল মাত্রায় ফেরত আনয়নকারী।  সুরা বাকারার ৩৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

অতঃপর হযরত আদম (আঃ) নিজ পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন তথা তাঁর তওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাওয়াবুর রাহিম তথা মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।

পবিত্র কুরআনের অনেক মুফাসসিরের মতে তওবা মহান আল্লাহ ও তাঁর বান্দাহ'র মধ্যে অভিন্ন শব্দ। বান্দাহ তওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। পাপের মাধ্যমে সে তাঁর প্রতিপালক হতে দূরে পালিয়ে গিয়েছিল। আর তওবার মাধ্যমে সে আবার তাঁর দিকে ফিরে আসে। বান্দা তথা আল্লাহর দাস হিসেবে মানুষ সব সময়ই আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাই পাপের অন্ধকার থেকে বাঁচতে হলেও আল্লাহর রহমত পাওয়া জরুরি। আর তওবা করার সুযোগ লাভও আল্লাহর রহমত ছাড়া সম্ভব নয়। বান্দাহ যখন তওবা করে তখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে আরও একটি তওবার মুখাপেক্ষী সে। আর তা হল তওবা কবুল করা।

সুরা তওবার ১১৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:

এবং (তাবুকের যুদ্ধে যোগ না দেয়ায়) অপর সেই তিনজনকে- যাদেরকে পেছনে রাখা হয়েছিল (মুসলমানরা তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায়,) যখন পৃথিবী বিস্তৃত হওয়া স্বত্বেও তাদের জন্য সঙ্কুচিত হয়ে গেল এবং তাদের জীবন দূর্বিসহ হয়ে উঠলো; আর তারা বুঝতে পারলো যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল নেই-অতঃপর তিনি সদয় হলেন তাদের প্রতি যাতে তারা ফিরে আসে বা তওবা করতে পারে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাও্‌ওয়াব ও রাহিম তথা ক্ষমাশীল ও করুণাময়।– লক্ষ্যণীয় যে এখানে মহান আল্লাহর তাও্ওয়াব নামের পর রাহিম নামও এসেছে। 

পার্থিব জীবনে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ নানা ধরনের পাপে জড়িয়ে পড়ে। অসচেতনতা, অলসতা, অসতর্কতা বা গাফিলতি ও হতাশার ফাঁদে ফেলে শয়তান মানুষকে পাপে জড়িয়ে ফেলে ও খোদার পথ থেকে দুরে সরিয়ে নেয়।  এ অবস্থায় মহান আল্লাহ মানুষের এসব দুর্বলতার কারণে তাদেরকে বার বার তওবা করার সুযোগ দেন। আর মহান আল্লাহ বার বার পাপে জড়িয়ে পড়া মানুষের তওবাও বার বার কবুল করেন বলে তাও্ওয়াব নামের অধিকারী।

মহান আল্লাহ অত্যন্ত করুণাময় ও দয়ালু বলে বার বার অনুতপ্ত মানুষকে ক্ষমা করেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীদের ভালবাসেন। (বাকারা-২২২) ইমাম বাকির –আ. বলেছেন: কেউ মরুভূমিতে নিজ পরিবার-পরিজনকে হারিয়ে ফেলার পর অনেক প্রচেষ্টা ও খোঁজাখুঁজির মাধ্যমে হঠাৎ যদি আবারও তাদের দেখতে পায় তাহলে যেমন খুশি হয় তেমনি মহান আল্লাহও বান্দা যখন তওবা করে তখন এর চেয়েও বেশি খুশি হন। প্রকৃত তওবাকারীকে মহান আল্লাহ এত ভালবাসেন যে তিনি ইহকাল ও পরকালে তার সব পাপ গোপন রাখার ব্যবস্থা করেন, ফলে ফেরেশতারা, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও পাপের আরও যত সম্ভাব্য সাক্ষী যেমন, জমিন- এরা সবাই আল্লাহর নির্দেশে তওবাকারীর পাপ গোপন রাখে।

মহান আল্লাহ তাও্ওয়াব হওয়ার কারণে মানুষের মধ্যে এই আশার ব্যাপক দোলা থাকে যে পাপ করার পরও আল্লাহর দিকে আবারও ফিরে যাওয়া সম্ভব এবং আল্লাহ তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। তাই প্রত্যেক বান্দার উচিত এ মহাঅনুগ্রহের ব্যাপারে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা এবং এই কৃতজ্ঞতারই প্রকাশ হিসেবে অন্য মানুষদের ক্ষমা প্রার্থনাকেও মেনে নেয়া। 

হযরত ইমাম হুসাইন (আ) বলেছেন, মানুষ যদি আমার ডান কানে গালি বর্ষণ করে এবং এরপরই বাম কানের কাছে এসে ক্ষমা চায় আমি তাদের ক্ষমা প্রার্থনায় সাড়া দেব। আমার বাবা আমিরুল মু'মিনিন আমার নানা থেকে এই বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে রাসুলে খোদা(সা) বলেছেন, হাউজে কাউসার বা কাউসার সরোবরে তারা প্রবেশাধিকার পাবে না যারা অন্যের ক্ষমা প্রার্থনায় সাড়া দেয় না তা তার সেই ক্ষমা প্রার্থনা যথাযথ হোক বা না হোক।#

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।