আসমাউল হুসনা (পর্ব-৭১)
সব সুন্দর নাম কেবলই মহান আল্লাহর। মহান আল্লাহর এমনই এক নাম হল আফুয়্উ। এর অর্থ মহান আল্লাহর ক্ষমা, দয়া ও দান-দাক্ষিণ্য ইত্যাদি।
মহান আল্লাহর ক্ষমাশীলতা এমনিই সুন্দর যে তা মন্দ কাজের চিহ্ন বা সব প্রভাবগুলোও মুছে দেয়। ক্ষমা যদি হয় এর উল্লেখের খোঁচাযুক্ত ও অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাযুক্ত তাহলে ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ক্ষমা লাভের পরও লজ্জা অনুভব করবেন। কিন্তু মহান আল্লাহ এমনভাবে ক্ষমা করেন যে অতীত পাপের সব কালিমাও পাপীর হৃদয় থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। মহান আল্লাহর ক্ষমাশীলতা এমনই সুন্দর হওয়ায় বান্দা হতাশামুক্ত থাকেন এবং ক্ষমা লাভের পর অত্যন্ত দৃঢ় বিশ্বাস বা ইয়াক্বিন নিয়ে আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত শুরু করেন।
আফুয়্উ নামের মূল আভিধানিক অর্থ ছেড়ে দেয়া বা হিসাব ও বিবেচনার বাইরে রাখা কিংবা এড়িয়ে যাওয়া! আর এ জন্যই পাপের শাস্তির চিন্তা না করার অর্থে আফুয়্উ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়। যেমন, যে কাজের জন্য কাউকে তিরস্কার করা যায় বা শাস্তি দেয়া যায়, কিন্তু তা সত্ত্বেও শাস্তি দেয়ার অধিকারী ব্যক্তি যদি তাকে শাস্তি না দেন বা তিরস্কারও না করেন তাহলে এই ক্ষমাশীল ব্যক্তিকে বলা হয় আফুয়্উ। কিংবা ধরুন আপনি কাউকে কোনো জিনিস আমানত হিসেবে দিলেন, কিন্তু ওই জিনিসের সুরক্ষার দায়িত্ব ওই ব্যক্তি পালন না করায় জিনিসটি নষ্ট হয়ে যায়। এ অবস্থায় আমানতের খিয়ানতকারী ব্যক্তি আপনার কাছে ক্ষমা চাইলে আপনি যদি ক্ষমা করে দেন ও কোনো তিরস্কারও না করেন তাহলে আপনাকেও আফুয়্উ বলা যাবে। মহান আল্লাহর ব্যাপারে মুমিন ও মুসলমান ব্যক্তিরা এমন ধারণাই রাখেন যে ভুল করার পর বা পাপের পর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে আল্লাহ আমাদের শাস্তি দেয়ার অধিকার রাখা সত্ত্বেও ক্ষমা করে দিবেন, কারণ মহান আল্লাহ হলেন আফুয়্উ।
মহান আল্লাহর এই নাম তাঁর গ্বাফুর বা আবৃতকারী নামের খুবই কাছাকাছি। গ্বাফুর হিসেবে মহান আল্লাহ পাপ ঢেকে রাখেন তথা গোপন রাখেন। মহান আল্লাহ পাপ এমনভাবে গোপন রাখেন যে পাপী নিজেও কখনও মনেও করতে পারবে না যে সে ওই পাপ জীবনে কখনও করেছিল! এমনকি ওই পাপের কোনো প্রভাবও তার মনন, চরিত্র ও ভবিষ্যত বা ভাগ্যের ওপর পড়ে না!
সব ভুল ও বিচ্যুতিরই কিছু নেতিবাচক প্রভাব থাকে। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভালো কাজের বরকত ও প্রভাব বন্ধ হয়ে থাকা। মহান আল্লাহ আফুয়্উ হওয়ার কারণে মানুষ পাপের দূষণ থেকে মুক্ত হওয়ার পাশাপাশি ইহকালে অনেক কল্যাণ এবং পরকালেও অনেক নেয়ামত ও পুরস্কারের অধিকারী হয়।
মহান আল্লাহর আফুয়্উ নামের প্রভাবে মুমিন বান্দাহরা অন্যদের খুব সহজেই ক্ষমা করে দেন। মানুষ যত বেশি আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি অর্জন করে ততই তার মধ্যে মহান আল্লাহর আফুয়্উ নামের প্রভাব দেখা যায়। সুরা নুরের ২২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,
তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্মীয়-স্বজনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।
এই আয়াত থেকে এটা স্পষ্ট যে আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের ভুল যেন আমরা ক্ষমা করে দেই এবং আমরা যেন তাড়াহুড়ামূলক ও অযৌক্তিক কোনো সিদ্ধান্ত না নেই। অন্য কথায় আমাদের উচিত একে অপরকে ক্ষমা করে দেয়া। কারণ আমরা কেউই ভুলের উর্ধ্বে নই। আমরা যখন অন্যদের অপরাধকে ক্ষমা করব কেবল তখনই আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা লাভের আবেদন জানানোর মত নৈতিক ভিত্তি অর্জন করব।
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের ৬৪ নম্বর সুরা তথা সুরা তাগ্বাবুনের ১৪ নম্বর আয়াতে বলেছেন:
হে মুমিনগণ, তোমাদের কোন কোন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি তোমাদের দুশমন। অতএব তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাক। যদি মার্জনা কর, উপেক্ষা কর, এবং ক্ষমা কর, তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। -
আমরা কখনও কখনও অন্যের অপরাধ বা ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিলেও মনের মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষ বা প্রতিহিংসা লালন করে থাকি। কিন্তু আমরা যদি ব্যাপারটা পুরোপুরি ভুলে গিয়ে মনের মধ্যে কোনো ক্ষোভও জিইয়ে না রাখি তাহলেই সেটা হবে মহান আল্লাহর ক্ষমাশীলতার মত উদারতাপূর্ণ বিষয়।
আর যে আমার ক্ষতি করেছে আমি যদি তাকে শাস্তি না দিয়ে বরং তার কল্যাণে কিছু করি তাহলে সেটাও হবে মহান আল্লাহর গুফরান নামক গুণের প্রতিফলন। ক্ষমাশীলতা ও দয়া মানবিকতার চরম প্রকাশ এবং তা ধৈর্যের মত অত্যন্ত উন্নত নৈতিক গুণ।
মহান আল্লাহর আফুয়্উ নামের রঙে রঙিন হতে হলে অন্যদের ভুল বা অপরাধ ক্ষমা করতে হবে এবং ক্রোধ দমন করার পাশাপাশি ক্ষতিপূরণ আদায় করার বিষয়টিও ভুলে যেতে হবে। পবিত্র কুরআনে সুরা শুরার ৪০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আর মন্দের প্রতিশোধ নেয়া তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয়ই তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন না।–
অর্থাৎ ক্ষমাকারীর জন্য রয়েছে অবর্ণনীয় মাত্রার অশেষ পুরস্কার।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী-আ. বলেছেন, দু'টি বিষয়ের পুরস্কারের ব্যাপকতা কখনও মাপা বা গণনা করা সম্ভব নয়: এ দুটি বিষয় হচ্ছে ক্ষমা করা ও ন্যায়বিচার করা।#
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/ মো: আবু সাঈদ/ ০১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।