জুলাই ০৬, ২০২২ ১৮:০৯ Asia/Dhaka

বিয়ে করে পরিবার গড়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি আস্থা রাখা জরুরি। স্বামী ও স্ত্রী যদি পরস্পরের প্রতি আস্থাশীল ও বিশ্বাসী না হন তাহলে তাদের সংসার বেশি দিন টিকবে না।

গুরুজনেরা বলে থাকেন স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি আস্থা বা বিশ্বাস ও সহমর্মিতার পাশাপাশি পরিপূর্ণ সমঝোতা ও সহাবস্থান জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য। পরিবার গঠন বা বিয়ে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন রীতি। সব যুগে প্রচলিত এই প্রথা সংশ্লিষ্ট আচার-অনুষ্ঠানও দেশ ও জাতিভেদে বিচিত্রময়। ইরানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানের বিচিত্রময় নানা প্রথা ও রীতি তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোকে বেশ আকর্ষণীয় করে রেখেছে। ইরানি সমাজে বিবাহিত নারী ও পুরুষ বিশেষ শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। বিয়ের পর ইরানিরা বিশেষ সামাজিক দায়িত্বশীলতা অনুভব করেন। বিয়ের পর জীবনে নানা যোগ্যতা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ফলে সামাজিক নানা দায়িত্ব পালন তাদের জন্য সহজ হয়।

ইরানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো সহজ-সরল তবে বেশ আকর্ষণীয়। বিয়ের উৎসব ও বৌভাত জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো করার দায়িত্ব বর পক্ষের। বিয়ের মূল উৎসব হয় কনেকে বরের বাড়িতে নিয়ে আসা উপলক্ষে। অঞ্চলভেদে এইসব রীতি ও আচারে পার্থক্য দেখা যায়। বর্তমান যুগে বিয়ের অনুষ্ঠানের দিন বর ও কনে ভোরবেলায় সাজ-ঘরে যান। বর প্রস্তুত হওয়ার পর ফুল ও নানা সাজে সজ্জিত গাড়িতে চড়ে এবং ফুলের তোড়া নিয়ে কনের বাবার বাড়িতে আসেন। এরপর সাদা পোশাকে সজ্জিত বর ও কনে একসঙ্গে বিয়ের হলরুমে আসেন। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে উৎসব । পা মাটিতে ঠুকে আনন্দ প্রকাশ করেন বর ও কনে পক্ষের অনেকেই। উৎসবের শেষ পর্যায়ে কনে ফুলের তোড়া নিক্ষেপ করেন। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী উপস্থিত মেহমানের মধ্যে যেই অবিবাহিত যুবতী প্রথম কনের নিক্ষিপ্ত ওই ফুলের তোড়া খুঁজে পান বা কুড়িয়ে নেন এরপর তারই বিয়ে হবে বলে আশা করা হয়। উৎসব শেষ হলে উপস্থিত মেহমানরা বর ও কনেকে তাদের বাড়িতে নেয়া পর্যন্ত বিদায় সম্বর্ধনা জানান। কনের বাবা তার মেয়ে ও জামাইর হাত পরস্পরের হাতের ওপর তুলে দেন এবং তাদের সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন কামনা করেন।

ইরানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ওলিমা বা ভোজসভায় নানা ধরনের খাবারের মধ্যে গোশত থাকবেই। এ ছাড়াও এই ভোজসভায় কয়েক পদের খাবার ছাড়াও থাকে সালাদ, ফল ও পানীয়। ইরানিদের নানা গোত্রে বিয়ের উৎসব চলে তিন থেকে সাত দিন-রাত পর্যন্ত। বরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা এসব উৎসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন। কোনো কোনো অঞ্চলে বিয়ের সাত দিন আগে শুরু হয় উৎসবের কর্মকাণ্ড এবং এ উপলক্ষে তারা উৎসব আয়োজনের নানা কাজে বরের পরিবারকে সহযোগিতা করেন।

ইরানের গ্রাম অঞ্চলের বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রামবাসীরাই বিয়ের ভোজসভার জন্য রান্নাবান্না করেন। তারা এ জন্য মাটির বড় বড় চুলা তৈরি করেন এবং বন-জঙ্গল থেকে লাকড়ি এনে রাখেন।  যে পরিবারের সদস্যের বিয়ে হবে সেই পরিবারের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্য থেকে নারীরা বিয়ের সাত দিন আগ থেকে নানা কাজ করতে থাকেন। যেমন, সবজি ধুয়ে কেটে রাখা, বেগুনের ছাল উঠিয়ে ভেজে রাখা, মুরগির গোশত পরিষ্কার করে রাখা ইত্যাদি।

ইরানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ ও বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে সংগীত বাজানো বা গানের প্রচলনও রয়েছে। পুরুষ ও মেয়েদের নাচ আলাদা স্থানে হয়। মেয়েদের নাচের মহলে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। বর-কনের ঘর সাজানোও বিয়ের উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক। নানা ধরনের ফুলদানী ও মোমদানি ও কার্পেট বিছিয়ে বর-কনের ঘর সাজানো হয়। বাড়ির বারান্দায় থাকা পানির হৌজ বা পাকা অগভীর পুকুরের চারদিকেও এ ধরনের সাজ-সজ্জা দেখা যায়। কনের ঘরে প্রবেশের সময় বর পক্ষের মহিলা মেহমানরা উলু ধ্বনি দেন এবং কনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ারাও উলু ধ্বনি দিয়ে এর জবাব দেন।  এরপর বর পক্ষের মুরব্বি শ্রেণীর কেউ একজন কনেকে বরের বাড়িতে নিয়ে যেতে কনের বাবা মায়ের কাছে অনুমতি চান। কনে বাবা-মায়ের হাতে চুমু দেন এবং কনের মাথার ওপর কুরআন তুলে ধরা হয় যাতে কনে এই পবিত্র গ্রন্থের নিচ দিয়ে বরের বাড়ির দিকে তার শুভযাত্রা শুরু করেন। 

ইরানি বিয়ের রীতি অনুযায়ী কনে যখন বরের ঘরে ঢুকেন তখন একটি ট্রে আনা হয়। তাতেও থাকে পবিত্র কুরআনের কপি, শুকনো মিষ্টির একটি পাত্র ও সবজি বা ফুলের স্টিকসহ পানির জগ। এই ট্রে কনের সামনে আনা হলে তিনি কুরআনে চুমু দেন ও কুরআনের নিচ দিয়ে এগিয়ে যান।  এ সময় অন্যরা পাত্রে থাকা চিনির গুড়া দিয়ে বানানো চনাবুট সাইজের শুকনো মিষ্টির টুকরোগুলো ছিটাতে থাকেন কনের মাথার ওপর।  এরপর পানির ওই জগ- যাতে ভেসে থাকে ফুল বা সবজি- তা এনে ধরা হয় কনের পায়ের কাছে যাতে কনে বরের বাড়িতে তার জীবন শুরু করেন  ভালাবাসা, আশা ও আনন্দিত মন নিয়ে। 

বর্তমান যুগে বহু পরিবারে স্বামী ও স্ত্রীর দুজনেই কর্মজীবী, যদিও ইসলামের রীতি অনুযায়ী স্ত্রী সংসারের জন্য আয়-উপার্জন করতে বাধ্য নন। এক্ষেত্রে তারা উভয়ই কর্মজীবী হওয়া সত্ত্বেও যদি পরস্পরের সহযোগী হন তা খুবই ভালো। তবে বিষয়টা যদি প্রতিযোগিতার মধ্যে গড়ায় এবং এ নিয়ে স্ত্রীর মধ্যে স্বামীর প্রতি আকর্ষণ বা শ্রদ্ধাবোধ কমে যায় তা মোটেই কাম্য নয়।  

মহানবী সা. বলেছেন, স্ত্রী যদি বিশ্বের সব সোনা ও রূপা নিয়ে আসেন স্বামীর ঘরে এবং কোনো একদিন এ নিয়ে স্বামীকে খোঁচা দেন তাহলে তার সব ভালো কাজ বরবাদ হয়ে যাবে যদি না তওবা করেন ও স্বামীর কাছে ক্ষমা চান।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/আবুসাঈদ/ ৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ