সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২ ২০:১৫ Asia/Dhaka

কারবালায় শহীদ সম্রাট ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের চেহলাম-বার্ষিকী সম্প্রতি পালিত হয়েছে। আরবাইন পালন করতে এই পবিত্র শহরে সমবেত হয়েছিলেন সারা বিশ্বের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ শোকার্ত মুসলমান।

বাংলাদেশ ও ভারতের শিক্ষার্থী যারা ইরান ও ইরাকের নাজাফে পড়াশুনা করছেন তারা অনেকে এবার আরবাইন উপলক্ষে কারবালায় ইমাম হুসাইন আ.র মাজার জিয়ারতে গিয়েছিলেন। রেডিও তেহরানের সাথে আরবাইনের বিভিন্ন দিক নিয়ে তারা কথা বলেন। আমাদের সঙ্গে কথা বলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুশাব্বির খান। তিনি নাজাফে পড়াশুনা করছেন। আনোয়ারুজ্জামান নাজাফি তিনিও নাজাফে অধ্যায়নরত। এ ছাড়া মোহাম্মাদ মেহেরাজুল ইসলাম- বাংলাদেশি, মাশহাদে পড়ছেন এবং সাব্বির হোসেন রাহুলও বাংলাদেশি, তিনি কোমের আল মোস্তফাতে অধ্যায়ন করছেন। তো চলুন তাদের বক্তব্য শোনা যাক।

মুশাব্বির খান, আনোয়ারুজ্জামান নাজাফি, মোহাম্মাদ মেহেরাজুল ইসলাম ও সাব্বির হোসেন রাহুল আপনাদের সবাইকে রেডিও তেহরানে স্বাগত জানাচ্ছি।

রেডিও তেহরান:  জনাব মুশাব্বির খান, আপনি নাজাফে পড়াশুনা করছেন। এবার আরবাইন উপলক্ষে কারবালায় গিয়েছেন। তো ইমাম হাসান আ. এর চেহেলাম বার্ষিকী নিয়ে আপনার অনুভূতি বলুন।

আরবাইনে কোটি মানুষের জমায়েত

মুশাব্বির খান: চল্লিশা বা আরবাইনের বিশেষ গুরুত্ব আছে ইসলামে। বিশেষ করে চল্লিশ দিনের গুরুত্ব অনেক। হযরত মূসা আ. যে তুর পাহাড়ে গিয়েছিলেন –আল্লাহতায়ালা তাঁর জন্য ৪০ দিনকে নির্ধারণ করেছিলেন। মিশরে যাদেরকে মমি করে রাখা হত সেখানে ৪০ দিন পর দাফন করা হতো। আরও বিভিন্ন জায়গায় চল্লিশ সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আর এখানে জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারির কথা বলা হয়, তিনি ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের চল্লিশ দিন পর জিয়ারাতে এসেছিলেন। আর সে জন্যেই আমরা আরবাইনে ইমাম হুসাইন আ. এর মাজার জিয়ারাতে এসেছি। হাদিসে আছে, মোমিনদের কয়েকটি চিহ্ন রয়েছে, তার মধ্যে একটি চিহ্ন হচ্ছে-জিয়ারাতুল আরবাইন।

রেডিও তেহরান: জনাব আনোয়ারুজ্জামান নাজাফি আরবাইন বা চেহেলাম নিয়ে আপনি কি বলবেন, আপনার কাছে কি মনে হয়?

আরবাইন

আনোয়ারুজ্জামান নাজাফি: ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন, ইমাম হুসাইন আ.এর শাহাদাতের পর মুমিনদের অন্তরে এমন একটি আগুন বা এমন একটি গরম সৃষ্টি হবে যাকে কখনও অন্য কোনো জিনিষ দিয়ে নেভানো যাবে না। এই হাদিসের ব্যাখ্যা অনুযায়ী এটা বোঝা যায়-ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের শোকের আগুন কখনও নিভবে না। সাধারণত দেখা যায় আমরা  কোনো শোকের কথা হয়তো এক বছর কিংবা দুবছর অথবা তিন বছর মনে রাখি তারপর ঐ শোকের বিষয়টি কমতে থাকে কিন্তু ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের শোক আজও আমরা পালন করছি একইভাবে। আজ আরবাইনে আমরা কারবালায় উপস্থিত হয়েছি তার একটিই কারণ  সেটি হচ্ছে ইমাম হুসাইন আ. শাহাদাতের যে শোক সেই শোক পালন করা।

রেডিও তেহরান: জনাব মোহাম্মাদ মেহেরাজুল ইসলাম, আপনি আরবাইন উপলক্ষে নাজাফ হয়ে কারবালায় গিয়েছিলেন। আরবাইনের গুরুত্ব নিয়ে আপনি যদি কিছু বলেন।

কারবালামুখী জিয়ারাতকারীদের ঢল

মেহেরাজুল ইসলাম: আপনাদেরকে ধন্যবাদ। দেখুন, আরবাইন উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় তিন থেকে চার কোটি মানুষ জিয়ারতে আসেন প্রতিবছর। প্রতিটি মানুষ নানা কষ্ট স্বীকার করে হযরত ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের চেহেলাম পালনে এই কারবালায় হাজির হন। সবচেয়ে বড় বিষয় নাজাফ থেকে কারবালা পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার পথ –এই পথ মানুষ পায়ে হেঁটে যান। এমন ঘটনা পৃথিবীতে সত্যিই বিরল। পৃথিবীতে কারও জন্য পায়ে হেঁটে এতটা পড় পাড়ি দেয়ার নজির নেই। শুধুমাত্র ইমাম হুসাইন আ. এর জন্য মানুষ এমন ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করে থাকেন। যারা এই পথে ইমাম হুসাইনের জন্য আসবে, আহলে বাইতের জন্য আসবে আল্লাহতায়ালা তাঁদের জন্য অনেক সওয়াবের ব্যবস্থা রেখেছেন। ইমাম হুসাইনের প্রতি মহব্বতের কারণে আল্লাহ তাদেরকে উচ্চ মর্যাদার ব্যবস্থা করবেন।

রেডিও তেহরান: সবশেষে জনাব সাব্বির হোসেন রাহুল আপনার কাছে জানতে চাইব- আরবাইনের এসে আপনার কাছে কি মনে হয়েছে, এর ঐতিহাসিক দিক এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আপনি কিছু বলুন।

ইমাম হুসাইন প্রেমিদের পদযাত্রা-কারবালার উদ্দেশ্যে

সাব্বির হোসেন রাহুল: ইমাম হুসাইন আ.এর শাহাদাতের চল্লিশ দিনকে আরবাইন বা চল্লিশা বলা হয়। ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের দিন থেকেই  আরবাইন পর্যন্ত পৃথিবীর সব জায়গা থেকে তাঁর মহব্বতে সেখানে উপস্থিত হন কোটি কোটি মানুষ। মহব্বত বা এশকে হুসাইন যাঁদের অন্তরে আছে তাদের কাছে  আরবাইনের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে এত দূর পাড়ি দেয়ার কষ্ট কোনো কষ্ট মনে হবে না। তিন দিন  পর্যন্ত আমি নিজে অপেক্ষার পর অবশেষে এই কারবালায় আসতে পেরেছি। ইমাম হুসাইন আ. ছেয়েছেন বলেই শেষ পর্যন্ত আমি এখানে এসে জিয়ারতের সুযোগ পেলাম। এখানে কেউ বিষয়টিকে অন্যকোনোভাবে নেবেন না। ইমাম হুসাইন আ. এর প্রতি ভালোবাসা যে মুসলমানের অন্তরে আছে তারাই এখানে কারবালায় জিয়ারতে এসেছেন। যাঁরা এখনও আসতে পারেন নি তাঁদেরকে আহ্বান জানাব একবার হলেও কারবালায় আরবাইনে আসুন।

তো আপনাদের ৪ জনকেই আবারও অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য।

তো শ্রোতাবন্ধুরা, ইমাম হুসাইন আ. এর শাহাদাতের চেহেলাম বার্ষিকীতে কারবালায় জিয়ারাতে গিয়েছিলেন এমন ৪ জন শিক্ষার্থীর বক্তব্য শুনলেন। #

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৮

ট্যাগ