নভেম্বর ১৬, ২০২২ ১৮:২৪ Asia/Dhaka

শ্রোতা/পাঠকবন্ধুরা! রেডিও তেহরানের সাপ্তাহিক সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান আলাপনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আজও আমরা ভারত থেকে আসা শেখ মুস্তাক আহমদের সাথে ইরান সফর নিয়ে কথা বলব। তিনি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলবেড়িয়াতে থাকেন। 'সত্যের পথে' পত্রিকার সম্পাদক ও শিক্ষক। প্রথম পর্বের আলোচনার শেষ দিকে ইরানের কোথায় কোথায় গেছেন সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম আমাদের অতিথির কাছে। কিন্তু শেষ হয়নি সেদিনে তাল পুরো উত্তর। তাই আজ সেখান থেকেই শুরু করব।

জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ, রেডিও তেহরানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

শেখ মুস্তাক আহমদ: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: শেখ মুস্তাক আহমদ-ইরানে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানোর কথা বলছিলেন প্রথম পর্বের শেষ দিকে।  কিন্তু তখন আমাদের হাতে সময় না থাকায় আপনার বক্তব্য শেষ করা সম্ভব হয়নি। তো আজকের শুরুতে বলুন ইরানের আর কোথায় কোথায় আপনারা বেড়াতে গেছেন?

আয়াতুল্লাহ মারাশি নাজাফি গ্রন্থাগার

শেখ মুস্তাক আহমদ: আয়াতুল্লাহ মারাশি নাজাফি সাহেবের নামে বিশাল গ্রন্থাহার দেখলাম। এই বিশাল গ্রন্থাহার পরিদর্শনে গিয়ে একটি নতুন জিনিষ শিখলাম। সেটি হচ্ছে বইয়ের হসপিটাল আছে এখানে এবং বইয়ের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ সুন্দর করে তোলা হয়। তারপর আবার গ্রন্থাগারের শেলফে সাজানো হয়। এটি জানলাম গ্রন্থাকারের সাথে সংশ্লিষ্ট যাঁরা আছেন তাঁরা জানালেন। এমনটি নাকি পৃথিবীর আর কোথায় নেই। এরকম একটি বিষয় আমি আমার জীবনে কোনোদিন শুনিনি। বিষয়টি শুনে আমার কাছে খুবই আশ্চর্যের মনে হয়েছে। এটি নতুন একটি অভিজ্ঞতা। এছাড়াও আরও বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। গোলজারে শোহাদা যেখানে শহীদদের কবর আছে। সেখানে আমরা দীর্ঘক্ষণ ছিলাম। জোহরের নামাজ আদায় করেছি ওখানে।

সিওসে পোল-ইস্ফাহান

রেডিও তেহরান: শেখ মুস্তাক আহমদ, ইস্ফাহানের বিখ্যাত সিওসে পোল দেখেছেন, গোলজারে শোহাদা-যেখানে শহীদদের কবর আছে সেখানে গেছেন। অপূর্ব সুন্দর লাগে সন্ধ্যের দিকে সিওসে পোলের আশপাশের পরিবেশ। তো আর কোথাও কি গিয়েছিলেন? রেডিও তেহরানে তো এসেছিলেন-সে সম্পর্কে কিছু বলুন?

ইমাম খোমেনী র. এর মাজার

শেখ মুস্তাক আহমদ: রেডিও তেহরানে গিয়েছিলাম। এই রেডিও তেহরান আমাদের কাছে স্বপ্নের একটি জায়গা। এই রেডিও তেহরানের মাধ্যমে আমরা ইরানকে জেনেছি ছোটবেলা থেকে। রেডিও তেহরানের গুণী সাংবাদিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তারা আমাদের আলিঙ্গন করেছেন। আমাদেরকে অনেক উপহার সামগ্রী দিয়েছেন। কথা মতো সময়ে আমরা পৌঁছতে না পারলেও রেডিও তেহরানের ভাইয়েরা আগেই রিসিপশনে এসে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রেডিও তেহরানকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই।

ইমাম খোমেনী র. এর মাজার

এরপর আমরা ইমাম খোমেনী (র.) এর মাজারে গিয়েছিলাম।  ইরানের স্বপ্নপুরুষ, ইসলামি ইরানের রূপকার। যাঁরজন্যে ইসলামি বিপ্লব সম্ভব হয়েছিল। যাঁর মাজার জিয়ারতের জন্য সেই চারহাজার কিলোমিটার দূরের ভারতবর্ষ থেকে আমরা ইরানে এসেছি। ছোটবেলা থেকেই ইমাম খোমেনী (র.) সম্পর্কে জেনেছি। না দেখেও সেই মহান নেতাকে জানতাম। সেই মহান নেতা ইমাম খোমেনী (র.) এর মাজারে গিয়ে জিয়ারাত করলাম। বেশ কিছু সময় সেখানে কাটালাম। আমাদের চোখের পানি আমরা ধরে রাখতে পারিনি। চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু এসেছে। যাঁকে এত ভালোবাসি তাঁর রওজায় আমরা পৌঁছতে  পেরে মনটা অন্যরকম হয়ে গেল।

রেডিও তেহরান: জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ, আপনারা ইরানের বিভিন্ন জায়গায় গেছেন, ঘুরেছেন, দেখেছেন তো এখানে সামাজিক নিরাপত্তা বিশেষ করে বলতে চেয়েছি মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি সেটি কেমন দেখলেন আপনারা?

শেখ মুস্তাক আহমদ: জ্বী, আমরা ইরানে আসার পর এখানকার সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হলো। খুব ভালো লাগলো এখানকার নারী, শিশুসহ মানুষের চমৎকার সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি দেখে। এখানকার রাস্তা ঘাট এত সুশৃঙ্খল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং ট্রাফিক পদ্ধতি তাতে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। আমাদের কোলকাতার রাস্তায় ট্রাফিক জ্যামে ব্যাপক সময় নষ্ট হয়-দীর্ঘক্ষণ গাড়ির সারিতে অপেক্ষা করতে হয়। এখানে ট্রাফিক জ্যাম কিংবা ট্রাফিক পুলিশকে দেখলাম না। এখানকার ট্রাফিক সিস্টেম নিয়ন্ত্রিত হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। এটিও আমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয়। এখানে শৃঙ্খলা ও আইন মেনে চলা এবং তা বাস্তবায়ন করার ব্যাপারে ইরান সরকার এবং দায়িত্বশীলরা অত্যন্ত সতর্ক। এসব সুন্দর বিষয়ের জন্য আমরা যারা পর্যটনে এসেছি ইরানে তাদের পক্ষ থেকে এখানকার সরকার ও দায়িত্বশীলদের ধন্যবাদ জানাই।

শ্রোতা/পাঠবন্ধুরা! ভারত থেকে ইরান সফরে আসা সাংবাদিক ও শিক্ষক শেখ মুস্তাক আহমদের সাক্ষাৎকার শুনছেন। ফিরছি খুব শিগগিরি। আমাদের সাথেই থাকুন।

রেডিও তেহরান: মিউজিক বিরতির পর আবারও ফিরলাম, জনাব মুস্তাক আহমদ, সামাজিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গটি ধরেই জানতে চাইব, আপনারা যখন ইরান সফর করছেন ঠিক তখন- ইরানের একজন তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে নানা ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের নামে জাতীয় সম্পত্তি বিনষ্ট, সহিংসতার মতো ঘটনা ঘটেছে। ইস্যু বানানো হয়েছে হিজাব। তো আপনারা যে এখানে দেখেছেন নারীরা হিজাব পরছে। কেমন লাগছে, আপনাদের কাছে কি মনে হয়েছে নারীদের জোরকরে হিজাব পরানো হচ্ছে? নাকি নারীরা তাদের স্বাভাবিক ইচ্ছায় নিজের পছন্দে পরছে? নারীর সৌন্দর্যরক্ষায় এবং ইসলামের বিধানের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে তারা হিজাব পরছে?

শেখ মুস্তাক আহমদ: দেখুন, হিজাব নিয়ে যে বিতর্কের বিষয়টি আমরা ইরানে আসার আগে মিডিয়াতে দেখছিলাম। তখন মিডিয়াতে যেভাবে বলা হচ্ছিল এখানে এসে দেখলাম সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। কারণ আমরা কোম, তেহরান, ইস্ফাহানসহ বিভিন্ন শহর ঘুরলাম কিন্তু কোথায় কোনো আন্দোলন আমাদের চোখে পড়েনি। ফলে যেভাবে অপপ্রচার চালানো হয়েছে সেটি আসলে সম্পূর্ণ ভুল। মিডিয়া আগ্রাসনের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে। কারণ আমরা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখলাম ইরানের মহিলারা, নারীরা স্বেচ্ছায় পর্দা বা হিজাব পালন করেন। আমাদের মনে হয়েছে-এতে তারা খুশি এবং আনন্দিত। যখন কোনো দর্শনীয় স্থানে, মাজার কিংবা রওজায় যাচ্ছেন সেখানে তারা হিজাব পরিহিত অবস্থায় যাচ্ছেন। সেখানে পারিবারিকভাবে আনন্দের সাথেই তারা এটা করছেন বলে মনে হয়েছে। যদি হিজাব অন্তরায় হতো তাহলে তাদেরকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে দেখতাম না। তাদের আবেগের বহিঃপ্রকাশে বাঁধা হতো। কিন্তু আমরা সেটা দেখিনি। স্বপ্রণোদিতভাবে ইরানের নারীদের হিজাব পালনের বিষয়টি দেখে আমাদের খুব ভালো লেগেছে। ফলে হিজাব নিয়ে মিডিয়ার মাধ্যমে যেসব কথা শুনেছিলাম এখানে আসার পর দেখলাম সেটি সম্পূর্ণ বিপরীত।

রেডিও তেহরান: জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ, সবশেষে আপনাদের ইরান সফর নিয়ে রেডিও তেহরানের শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

শেখ মুস্তাক আহমদ: প্রথমে রেডিও তেহরানের শ্রোতাদেরকে আমি আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিক ভালোবাসা মহব্বত জানাই এবং যাঁরা নিয়মিত রেডিও তেহরান শোনেন তাঁদের উদ্দেশ্যে আমার মতো অধমের বক্তব্য এটাই যে, যদি সম্ভব হয় আপনারা ইরান ভ্রমণে আসেন। এখানে এলে দেখতে পাবেন-তাঁদের শৃঙ্খলা, সময়জ্ঞান, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কত সুন্দর। বিশেষ করে ইরানে সেই আদিকাল থেকে এ পর্যন্ত যেসব মহাজ্ঞানীরা জন্ম নিয়েছেন তাঁদের সম্পর্কে কাছ থেকে অনেক কিছু জানতে পারবেন। ঐসব মহাজ্ঞানীদের ইরানে জন্ম নেয়ার পূর্বকথা বা উৎসসুত্র জানতে পারবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছিলেন, আনা মাদিনাতুন এলম আলি বাবুহু-অর্থাৎ আমি জ্ঞানের নগর, আলী তার দরজা। এই কথাটির যথার্থতা কিংবা এই হাদিসটির দু'টি লাইনের অর্থ ইরানে এলেই সম্যকভাবে জানা সম্ভব হবে। রাসুল্লাহর কথার তাৎপর্য কত তা  ইরানে এসে আমি বুঝতে পেরেছি।  

তো জনাব শেখ মুস্তাক আহমদ ইরান সফর নিয়ে রেডিও তেহরানের সাথে কথা বলার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শেখ মুস্তাক আহমদ:  আপনাকেও ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৬

ট্যাগ