নভেম্বর ২৭, ২০২২ ১৫:৩৪ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতাবন্ধুরা! আজ ২৭ নভেম্বর রোববারের কথাবার্তার আসরে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। এরপর গুরুত্বপূর্ণ দুটি খবরের বিশ্লেষণে যাবো। বিশ্লেষণ করবেন সহকর্মী সিরাজুল ইসলাম।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • এই অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়?-ইত্তেফাক
  • পদ্মা ও মেঘনা বিভাগ হচ্ছে না-যুগান্তর
  • পাবনার গ্রেপ্তার ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন -প্রথম আলোকাদের সঙ্গে সংলাপ, গ্রেনেড
  • হামলাকারীদের সঙ্গে? –শেখ হাসিনা-কালের কণ্ঠ
  • বিএনপির সরকার পতনের স্বপ্ন কর্পূরের মতো উবে যাবে: ওবায়দুল কাদের -মানবজমিন
  • বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না: রওশন - বাংলাদেশ প্রতিদিন

কোলকাতার শিরোনাম:

  • মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করার হুমকি, সৌজন্য সাক্ষতের পরই ভোল বদল শুভেন্দুর -সংবাদ প্রতিদিন
  • যোগাসন,পরিমিত আহার দীর্ঘজীবনের রহস্য, বললেন ১২৬ বছরের স্বামী শিবানন্দ -আজকাল
  • কেন্দ্রের হিন্দি আগ্রাসন মানবেন না কিছুতেই, মাতৃভাষার জন্য মৃত্যু বরণ ৮৫ বছরের বৃদ্ধের -আনন্দবাজার পত্রিকা

শ্রোতাবন্ধুরা! শিরোনামের পর এবার দু'টি খবরের বিশ্লেষণে যাচ্ছি- 

কথাবার্তার বিশ্লেষণের বিষয়:

১. বড় ঋণখেলাপি রেখে চুনোপুঁটি ধরায় ব্যস্ত দুদক: হাইকোর্ট। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার শিরোনামকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি?

২. দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীরা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর হাতের পুতুল- একথা বলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?

বিশ্লেষণের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবর

‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ বিভাগ করার প্রস্তাব স্থগিত-প্রথম আলো/যুগান্তর

আপাতত ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ হচ্ছে না। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে দুই নদীর নামে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত সরে এল সরকার। আজ রোববার অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) সভায় এই দুটি বিভাগ অনুমোদনের প্রস্তাব আলোচ্যসূচিতে থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। সরকারের দুজন মন্ত্রী প্রথম আলোকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

জানতে চাইলে নিকারের সদস্য ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা’ ও ‘মেঘনা’ নামে নতুন বিভাগ করার দুটি প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়েছে। এটা এখন অগ্রাধিকারমূলক বিষয় নয়। কারণ, এখন সারা পৃথিবীতে সংকট চলছে। এখন একেকটি বিভাগ করতে গেলে এক হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ হবে। তাই এখন এটি স্থগিত রাখা হয়েছে। 

ঋণসংক্রান্ত মামলা-পাবনার গ্রেপ্তার ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন-প্রথম আলো

পাবনার ঈশ্বরদীতে ঋণসংক্রান্ত গ্রেপ্তার ১২ জনসহ ৩৭ কৃষকের জামিন মঞ্জুর হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মো. শামসুজ্জামান এই আদেশ দেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে ৩৭ জন প্রান্তিক কৃষকের একটি দলকে বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালে ব্যাংকের পক্ষে তৎকালীন ব্যবস্থাপক সৈয়দ মোজাম্মেল হক মাহমুদ বাদী হয়ে ৩৭ জনের নামে মামলা করেন। ২৩ নভেম্বর পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন। ২৫ নভেম্বর দুপুর পর্যন্ত পরোয়ানাভুক্ত ৩৭ জনের মধ্যে ১২ জনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠায়।

কৃষক ও তাদের পরিবারের দাবি, ঋণ গ্রহণের পর এক বছরের মাথায় অধিকাংশ ঋণগ্রহীতা তাদের ঋণ পরিশোধ করেছেন। তার পাস বই ও জমা স্লিপও আছে। অথচ সেই অর্থ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। ফলে তাদের এই হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে।

প্রথম আলোর এ সংক্রান্ত এক মতামত কলামের শিরোনাম এরকম-পারলে একজন বড় ঋণখেলাপিকে জেলে নিয়ে দেখান। এ মতামত কলামে বলা হয়েছে, দেশের ঋণখেলাপিরা ভীষণ ভয় পেয়েছেন। তাঁরা রীতিমতো গ্রেপ্তার–আতঙ্কে ভুগছেন। কোমরে রশি বেঁধে পুলিশ জেলে নিয়ে যাচ্ছে, এই দৃশ্য কল্পনা করে তাঁরা এই হালকা শীতেও ঘামছেন। কেউ কেউ রাজনীতির সঙ্গে যোগাযোগটা কাজে লাগাতে ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছেন। কিন্তু খুব একটা সাড়াও পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে ঋণখেলাপি মহলে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা ও আতঙ্ক।

সকালে একটা সংবাদ পড়ার পরেই আসলে এত সব ঘটনা। প্রথম আলোতেই আজ ছাপা হয়েছে সংবাদটি। শিরোনাম হলো: ১২ কৃষক জেলে ২৫ হাজার টাকা ঋণের মামলায়। ঘটনাটি পাবনার ঈশ্বরদীর। সংবাদটি হলো: ঈশ্বরদী উপজেলায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার অভিযোগে ১২ জন কৃষককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাবনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ৩৭ জন কৃষকের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে পুলিশ দ্রুত দায়িত্ব পালন করে। গ্রেপ্তার ১২ জন কৃষককেই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি করেছিল বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিমিটেড নামের একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

 ২৫ হাজার টাকা ঋণের মামলায় ১২ কৃষক জেলে কারাগার-প্রথম আলো

পরিস্থিতি দেখে বলাই যায় সরকার অবশেষে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথা মানলে প্রকৃত খেলাপি ঋণ আরও অনেক বেশি, তিন লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ প্রকৃত খেলাপি ঋণের হার ২০ শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে বেশ আগেই। আওয়ামী লীগ সরকার টানা তিনবার ক্ষমতায়। ২০০৯ সালে যখন দায়িত্ব নেয় তখন খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। এ নিয়ে নানা মহল থেকে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। এ কারণেই সরকার এবার কঠোর অবস্থানে গেল। তারই প্রক্রিয়ায় জেলে গেছেন ১২ ঋণখেলাপি কৃষক। এতেই বড় ঋণখেলাপিরা ভুগছেন গ্রেপ্তার–আতঙ্কে।

এ পর্যন্ত যাঁরা পড়েছেন তাঁদের জন্য বলি, বড় ঋণখেলাপিদের গ্রেপ্তার–আতঙ্কে থাকার কথাটা নিছকই কল্পনা, রূপকথার গল্পের মতো। বিষয়টা এমনই অবাস্তব যে ঠাকুরমার ঝুলি নতুন করে লেখা হলেও এটি তাতে স্থান পাবে না। তবে একেবারেই যে কেউ আতঙ্কে নেই, তা নয়। গ্রেপ্তার–আতঙ্কে আছেন ১২ জনের বাইরে বাকি ২৫ কৃষক, তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে।

প্রকৃত সত্য হচ্ছে, সকালের সংবাদপত্রে নিউজটি দেখে দেশের ঋণখেলাপিরা হয়তো একচোট হেসেই নিয়েছেন। কারণ, তাঁরা জানেন, তাঁদের কিছুই হবে না। কেননা, রাষ্ট্র আসলে বড় ঋণখেলাপিদের একধরনের দায়মুক্তি দিয়েই রেখেছে। সেটা কীভাবে? দুটি উদাহরণ দেওয়া যায়। ২০১৯ সালের ২৫ এপ্রিল এক প্রাক্‌–বাজেট আলোচনায় বর্তমান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘ঋণখেলাপি হলেই যদি সব ব্যবসায়ীকে জেলে পাঠানো হয়, তাহলে দেশ চলবে না।’ তিনি সেদিন নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘ভালো উদ্যোক্তা যাঁরা ঋণখেলাপি হয়েছেন, তাঁদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমরা ব্যাংক এবং আর্থিক খাতে কিছু সংস্কার করতে চাই। আর ব্যাংকঋণে সুদের হার কমালে তা শিল্পায়নের পাশাপাশি ঋণখেলাপি কমাতে ভূমিকা রাখবে। পৃথিবীর কোনো দেশে ১৭–১৮ শতাংশ সুদ নেই। এত সুদ দিয়ে কোনো শিল্প টিকতে পারে না। সুদহারও অনেক কমাতে হবে। বাজারভিত্তিক সুদহার করা হবে। তখন কেউ খেলাপি হবে না।’

অর্থমন্ত্রী দুটি কথা অবশ্য রেখেছেন। যেমন, ঋণখেলাপিদের তিনি আর জেলে নেননি। বরং ঋণখেলাপিদের জন্য নতুন নতুন সুবিধা দিয়েছেন। তিনি ঋণের সুদহার কমানোর কথাটাও রেখেছেন। সুদহার কমিয়ে ৯ শতাংশ করা হয়েছে। এতে সস্তায় ঋণ পাওয়া আরও সহজ হয়েছে। আর একশ্রেণির ব্যবসায়ী সহজে ঋণখেলাপিও হচ্ছেন।

এই অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার শেষ কোথায়? ইত্তেফাকের সম্পাদকীয়

মনুষ্যত্বের শিক্ষাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন’—কবিগুরুর এই অমিয় বাণী কি আমরা আত্মস্থ করিতে পারিয়াছি? চারিদিকে প্রতিদিন যেই হারে অমানবিকতার স্তূপ জমা হইতেছে, তাহাতে মনে হয় না মনুষ্যত্ব নামক কোনো কিছু এই সমাজে আছে! দুঃখজনক সত্য হইল, মানুষের যাহা কল্পনারও বাহির, স্বয়ং মানুষের দ্বারাই ঘটিতেছে তাহা! সত্যিকার অর্থেই, আজও আমরা ‘মানুষ’ হইয়া উঠিতে পারি নাই। দেশ জুড়িয়া বিরতিহীনভাবে এমন সকল ঘটনা ঘটিতে দেখা যাইতেছে যে, যাহাকে ‘অস্বাভাবিকের চাইতেও অস্বাভাবিক’ বলিলেও কম বলা হয়! চট্টগ্রামে ছোট্ট শিশু আয়াতকে যেই নারকীয়ভাবে হত্যা করা হইয়াছে তাহা বর্ণনাতীত। এই বিভীষিকাময় ঘটনায় আমরা যাহার পর নাই ব্যথিত, স্তম্ভিত।

সত্যি বলিতে, এই জাতীয় ঘটনাগুলি আজিকার সমাজে প্রতিদিনকার চিত্র হইয়া উঠিয়াছে। রুটিন বিরতিতে মানুষ হত্যা এমনকি অবুঝ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটিতেছে। শুধু হত্যা নহে, ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরির মতো ঘৃণ্য অপরাধ। এমনকি অতি তুচ্ছ বিষয়ও বৃহত্ সংঘর্ষ-সহিংসতার রূপ পরিগ্রহ করিয়া বড় অপরাধকে ডাকিয়া আনিতেছে। এক কথায় বলিতে গেলে, সমাজ হইয়া উঠিয়াছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। আর এই অপরাধরাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থান করিয়া একের পর এক অপরাধ করিয়া চলিয়াছে একশ্রেণির তরুণ প্রজন্ম। এমন কোনো অপরাধ নাই, যাহাতে তাহাদের নাম যুক্ত হয় নাই। বিশ্বায়নের যুগে যেইখানে তাহাদের আলোকিত মানুষ হইবার কথা, সেইখানে তাহারা হাঁটিয়া চলিয়াছে অন্ধকারের পথ ধরিয়া। যেইখানে তাহাদের সভ্য সংস্কৃতিকে আঁকড়াইয়া ধরিবার কথা, সেইখানে তাহারা ‘গ্যাং কালচার’ গড়িয়া তুলিয়া ক্রমাগতভাবে লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড ঘটাইয়া চলিয়াছে। কী সাংঘাতিক কথা!

সত্যি বলিতে, এই জাতীয় ঘটনাগুলি আজিকার সমাজে প্রতিদিনকার চিত্র হইয়া উঠিয়াছে। রুটিন বিরতিতে মানুষ হত্যা এমনকি অবুঝ শিশু হত্যার ঘটনা ঘটিতেছে। শুধু হত্যা নহে, ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইয়াছে ধর্ষণ, ডাকাতি, চুরির মতো ঘৃণ্য অপরাধ। এমনকি অতি তুচ্ছ বিষয়ও বৃহত্ সংঘর্ষ-সহিংসতার রূপ পরিগ্রহ করিয়া বড় অপরাধকে ডাকিয়া আনিতেছে। এক কথায় বলিতে গেলে, সমাজ হইয়া উঠিয়াছে অপরাধের স্বর্গরাজ্য। আর এই অপরাধরাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থান করিয়া একের পর এক অপরাধ করিয়া চলিয়াছে একশ্রেণির তরুণ প্রজন্ম। এমন কোনো অপরাধ নাই, যাহাতে তাহাদের নাম যুক্ত হয় নাই। বিশ্বায়নের যুগে যেইখানে তাহাদের আলোকিত মানুষ হইবার কথা, সেইখানে তাহারা হাঁটিয়া চলিয়াছে অন্ধকারের পথ ধরিয়া। যেইখানে তাহাদের সভ্য সংস্কৃতিকে আঁকড়াইয়া ধরিবার কথা, সেইখানে তাহারা ‘গ্যাং কালচার’ গড়িয়া তুলিয়া ক্রমাগতভাবে লোমহর্ষক কর্মকাণ্ড ঘটাইয়া চলিয়াছে। কী সাংঘাতিক কথা!

অবশ্য অপরাধ বাড়িয়া যাওয়ার বিষয়ে অন্ধকারে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—এমন কথা আমরা বলিতে চাহি না। অপরাধ বিশেষজ্ঞরাও কাজ করিতেছেন বলিয়া আমাদের বিশ্বাস; কিন্তু কোনো প্রচেষ্টাই যেন কাজে দিতেছে না! বলা হইয়া থাকে, ‘হিউম্যান সাইকি (মানুষের মন-প্রবৃত্তি)’ সঠিকভাবে ধরিতে পারিলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাজ সহজ হইয়া যায়; কিন্তু প্রশ্ন হইল, অবস্থা কি এতটাই আয়ত্তের বাহিরে যে, সমাধানের রাস্তা খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছেন না? পরিবারকে বলা হয় ‘শাশ্বত বিদ্যালয়’—তথাকথিত আধুনিক যুগে এই মাতৃসদনও কি তাহা হইলে দায়িত্ব পালন করিতে ব্যর্থ হইতেছে! পারিবারিক অনুশাসন কিংবা সামাজিক শিষ্টাচারও কি সমাজজীবন হইতে চিরবিদায় লইল! আমরা আসলে আশাবাদী হইতে চাই। সমাজজীবন হইতে অপরাধের শিকড় তুলিয়া ফেলিবার সক্ষমতার সংবাদ শুনিতে চাই। প্রতিনিয়ত যেইভাবে অমানবিকতার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হইতেছে তাহাতে এই বঙ্গের চিরাচরিত মানবিকতার উদাহরণগুলি যেন চাপা পড়িয়া যাইতেছে। অথচ আমাদের শতসহস্র মানবিকতার গল্প আছে, মনুষ্যত্বের একেকটি মহাকাব্য রহিয়াছে এই বাংলার। পাশবিকতার নিকট মানবিকতার ধরাশায়ী হওয়া বাঙালি সংস্কৃতির নিয়মবিরুদ্ধ। সুতরাং, অমানবিকতার মূলোৎপাটনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজ নিজ জায়গা হইতে কাজ করিয়া যাইতে হইবে।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করার হুমকি, সৌজন্য সাক্ষতের পরই ভোল বদল শুভেন্দুর-সংবাদ প্রতিদিনের এ খবরে লেখা হয়েছে, মমতার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পরেই বিস্ফোরক শুভেন্দু। হুঁশিয়ারি মমতাকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করার। রাজ্যে CAA কার্যকর করা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ বিরোধী দলনেতার।

তৃণমূলকে হারাতে হতেই পারে কৌশলী রাম-বাম জোট। পঞ্চায়েতের প্রচারে দাবি মিঠুন চক্রবর্তীর। ‘বিজেপির একা লড়ার ক্ষমতা নেই। মিঠুন-সওয়ালের পালটা খোঁচা কুণালের। দলবদল নিয়ে খোদ মমতাকে কটাক্ষ মিঠুনের। পালটা জবাব দিল তৃণমূল। ‘সমস্যায় পড়েই মিঠুন বিজেপিতে, তোপ দেগে অভিনেতার গ্রেপ্তারি চাইলেন কুণাল। একহাত নিলেন শুভেন্দুকেও।

কেন্দ্রের হিন্দি আগ্রাসন মানবেন না কিছুতেই, মাতৃভাষার জন্য মৃত্যু বরণ ৮৫ বছরের বৃদ্ধের-আনন্দবাজার পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, জোর করে হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রায়শই ওঠে। তারই প্রতিবাদে এবার চূড়ান্ত পদক্ষেপ করলেন এক বৃদ্ধ। আগ্রাসনের প্রতিবাদে গায়ে পেট্রল ঢেলে অগ্নিসংযোগ করেন তিনি। নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই আগ্রাসন বিরোধী চূড়ান্ত বার্তা দিলেন ওই বৃদ্ধ।

হিন্দি ভাষা জোর করে চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। কেন্দ্রীয় স্তর থেকে যখনই এই প্রয়াস দেখা যায়, প্রতিবাদে সরব হয় বিভিন্ন রাজ্য। তামিলনাড়ু এক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। সেখানেই আগ্রাসন বিরোধী বার্তা দিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিলেন ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধ।

জানা গিয়েছে, মৃত ওই বৃদ্ধের নাম থাঙ্গাভেল। ডিএমকে-এর একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন তিনি। অতীতে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলেছিলেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই দলেরই সদস্য ছিলেন বৃদ্ধ। দল হিসাবে ডিএমকে বরাবরই কেন্দ্রীয় হিন্দি আগ্রাসনের বিরোধিতা করেছে। কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাজের ভাষা হিসাবে হিন্দিকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরামর্শের বিরোধিতা করে এর আগে প্রতিবাদ-ধরনারও আয়োজন করেছেন দলীয় কর্মীরা। ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিন একাধিক বার এ বিষয়ে বার্তা দিয়েছেন। তবে দলেরই একনিষ্ঠ কর্মী যে এমন ঘটনা ঘটাবেন, তা বোধহয় অনুমান করতে পারেননি শীর্ষ নেতারা।

এদিন ডিমকে পার্টি অফিসের সামনে বেলা এগারোটা নাগাদ পৌঁছান ওই বৃদ্ধ। তাঁর হাতে ছিল ব্যানার। সেখানে স্পষ্টই হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বার্তা দিয়েছিলেন বৃদ্ধ। মোদি সরকারের উদ্দেশে ব্যানারে বৃদ্ধ লিখেছিলেন, হিন্দি তাঁরা চান না, কেননা হিন্দি নয়, তাঁদের মাতৃভাষা তামিল। আর তাই জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, তাঁদের অর্থাৎ আগামী প্রজন্মের এবং ছাত্রদের ভবিষ্যৎ প্রভাবিত করা। তাঁরা এর থেকে মুক্তি চান। তবে শুধু এই প্রতিবাদই নয়, এরপরই চরম কাণ্ড ঘটান তিনি। গায়ে পেট্রল ঢেলে মুহূর্তে অগ্নিসংযোগ করেন। বৃদ্ধকে উদ্ধার করার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত হবে বলেও জানানো হয়েছে।

‘মেয়েটা খিদেয় কাঁদছিল, পয়সা ছিল না তাই মেরে ফেললাম’! পুলিশকে বয়ান গুজরাতি ইঞ্জিনিয়ারের-আনন্দবাজার পত্রিকা

খিদের জ্বালায় আড়াই বছরের মেয়েটি কেঁদেই চলেছিল। পকেটে যা টাকা ছিল তা দিয়ে বিস্কুট, চকোলেট কিনে এনে দিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু তাতে খিদে না মেটায় তার পরেও কাঁদছিল মেয়েটি। শেষমেশ ওকে বুকের মধ্যে জোরে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলেছিলেন। নিজেও আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। পুলিশকে এ কথা বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।

রাহুল পারামার। মেয়েকে খুনের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরুর কোলার থানার পুলিশ। বছর পঁয়তাল্লিশের রাহুল গুজরাতের বাসিন্দা। কিন্তু কর্মসূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু সেই কাজ চলে যায়। বিটকয়েনে বিনিয়োগও করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাতেও বিপুল ক্ষতি হয়েছিল। ফলে বাজারে প্রচুর ধারদেনা করতে হয়েছিল।

পালিশ সূত্রে খবর, রাহুল আরও দাবি করেছেন যে, দেনার পরিমাণ এতটাই ছিল যে, সোনার গয়নাও বিক্রি করতে হয়েছিল রাহুলকে। নিত্য দিন পাওনাদাররা বাড়িতে হানা দিতেন। ফলে সব মিলিয়ে দিশাহারা হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন।

মেয়ে জিয়াকে স্কুলে দিতে যাওয়ার নাম করে তাকে নিয়ে গাড়িতে করে ১৫ নভেম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন রাহুল। কিন্তু সারাদিন কেটে যাওয়ার পরেও স্বামী-সন্তান না ফেরায় রাহুলের স্ত্রী ভব্য বাগালুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু তার পর দিনই বেঙ্গালুরু-কোলার হাইওয়ের ধারে একটি হ্রদে জিয়ার দেহ উদ্ধার হয়।

জেরায় পুলিশকে রাহুল জানিয়েছেন, ১৫ নভেম্বর সকালে বেঙ্গালুরুর আশপাশে মেয়েকে গাড়িতে নিয়ে ঘোরেন। কী ভাবে আত্মহত্যা করবেন স্থির করতে পারছিলেন না। বিশেষ করে মেয়ের সামনে আত্মহত্যা করবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলে না। অন্য দিকে, সময়ও পেরিয়ে যাচ্ছিল। ফলে আরও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন রাহুল। তিনি বলেন, “বেশ কিছু ক্ষণ এ দিক-ও দিক গাড়ি চালিয়ে ঘোরার পর শেষমেশ বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু পাওনাদারদের অশ্রাব্য গালিগালাজ, হেনস্থা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। তার পরই হ্রদের ধারে সন্ধ্যাবেলায় গাড়ি থামিয়েছিলাম।”

পুলিশকে তিনি আরও জানিয়েছেন, হ্রদের কাছে গাড়ি পার্ক করে সামনেরই একটি দোকান থেকে মেয়ের জন্য বিস্কুট এবং চকোলেট কিনে এনেছিলেন। পকেটে আর টাকা ছিল না তাঁর। মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে কিছু ক্ষণ খেলেনও। কিন্তু মেয়ে আবার খিদের জ্বালায় কেঁদে ওঠে। সেই জ্বালা সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে বুকের মধ্যে জোরে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে খুন করেন বলে দাবি রাহুলের। এর পরই মেয়েকে নিয়ে হ্রদের জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কিন্তু জল কম থাকায় বেঁচে যান।

রাহুলের কথায়, “হ্রদের জলে ঝাঁপ দিয়েও যখন কিছু হয়নি, মেয়েকে ওখানে ফেলে রেখে রাস্তায় উঠি। এক ব্যক্তিকে বলি, আমাকে বাঙ্গেরপেট স্টেশনে ছেড়ে দিতে। ভেবেছিলাম ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করব। কিন্তু তা-ও সাহসে কুলোয়নি। শেষে তামিলনাড়ুগামী ট্রেনে উঠে পড়ি।” রাহুলের দাবি কতটা সত্য, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/২৭