এপ্রিল ০৩, ২০২৩ ১৯:০২ Asia/Dhaka

গত পর্বের আলোচনায় আমরা জেনেছি পার্থিব জীবনে মানুষ মরণশীল হলেও পরলোকে অমরত্ব লাভ করে বেহেশতে বা দোযখে।

তবে মানুষের বা অন্য যে কোনো সৃষ্টির যে অমরত্ব তা মহান আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণার ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মহান আল্লাহর চিরস্থায়িত্ব এবং অমরত্ব কারো ওপর নির্ভরশীল নয়। মানুষ যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করে তা স্থায়িত্ব লাভ করে। যে কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টি যত বেশি সে কাজের ফল বা প্রভাব তত বেশি স্থায়িত্ব লাভ করে।

মহান আল্লাহর নামগুলোর পরিচয় ও তাৎপর্য জানার মাধ্যমে আমরা সেইসব নাম বা গুণের রঙে রঙিন হতে পারি। ফলে আমরা অর্জন করতে পারবে খোদা-সচেতনতা যা পবিত্র রোজার প্রধান উদ্দেশ্য। আল আহাদ ও আলওয়াহিদ মহান আল্লাহর আরও দুই গুরুত্বপূর্ণ নাম। এ দুই নাম মহান আল্লাহর একত্ববাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।

মহান আল্লাহ 'এক' তথা আল আহাদ । কিন্তু তাঁর এই একত্ব সম্পূর্ণ অনন্য ও অন্য সব কিছু থেকে ভিন্ন। আর আল ওয়াহিদ বলতে বোঝায় তিনি এমন ধরনের 'এক' যার দ্বিতীয়টি নেই।

যখন বলা হয় আল্লাহ আহাদ তথা 'এক' এর অর্থ তাঁর কোনো শরীর নেই ও নেই কোনো অংশ। তাঁর এই একত্বের কোনো তুলনা নেই। কোনো কিছুই এই একত্বের সমকক্ষ নয়। অন্যদিকে আল ওয়াহিদ বলতে বোঝায় সব কিছুরই জোড়া থাকে কিন্তু মহান আল্লাহর কোনো জোড়া নেই। মহান আল্লাহ বলেছেন তিনি সব কিছু জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন। যেমন, নারী ও পুরুষ; ধনাত্মক বিদ্যুৎ ও ঋণাত্মক বিদ্যুৎ। কিন্তু একমাত্র আল্লাহরই কোনো জোড়া বা সমকক্ষ নেই। একত্ববাদ বোঝার জন্য এ দুই নামের তাৎপর্য বোঝা বেশ জরুরি।

 মহান আল্লাহর প্রভুত্বের, মালিকানার, প্রতিপালনের,  দয়ার ও ক্ষমার কোনো তুলনা নেই। মহান আল্লাহর সৃষ্টি-কৌশল বা সৃষ্টি-নৈপুণ্যেরও কোনো তুলনা নেই। মহান আল্লাহর ন্যায় বিচারেরও নেই কোনো তুলনা। মহান আল্লাহর জ্ঞান ও শক্তিমত্তাসহ সব গুণ বা বৈশিষ্ট্যেরই কোনো তুলনা নেই।

 কোনো বিষয়ে সন্দেহ দূর করার জন্য আলওয়াহিদ জিক্‌র করার সুপারিশ করা হয়। আর বলা হয় কেউ যদি এক হাজার বার আল আহাদ নামটি উচ্চারণ করে তাহলে রহস্যময় বিষয়গুলো তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে।  তবে এক্ষেত্রে একনিষ্ঠতা, ধৈর্য ও সাধনা জরুরি।

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হল আলআমিন। এ নামের সাধারণ অর্থ নিরাপত্তাদাতা, সৎ, বিশ্বস্ত ইত্যাদি। তবে এ নামে বোঝানো হয় যে মহান আল্লাহ হলেন এমন এক সত্ত্বা যার ওপর সব বিষয়ে নির্ভর করা যায়। সব মূল্যবান সম্পদ তাঁর জিম্মায় রাখা যায়। প্রতিদিন সকালে ঘর ছেড়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সময় বলতে পারেন যে হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আমার পরিবারকে ও আমার সম্পদকে আমানত হিসেবে রেখে গেলাম।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র উপাধি ছিল আলআমিন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সবার কাছে সত্যবাদী, বিশ্বস্ত ও আমানতদার হিসেবে সম্মান অর্জন করেছিলেন। জনগণই তাঁকে এ উপাধি দিয়েছিল। যিনি কখনও মিথ্যা বলেননি তিনি হঠাৎ করে ধর্মের নামে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন ও মিথ্যা কোনো প্রভুর আহ্বান প্রচার করবেন -এটা অত্যন্ত অযৌক্তিক। অথচ এমন এক মহামানবের সত্যের আহ্বান নাকচ করে দিয়েছিল মক্কার প্রভাবশালী সব কাফের-মুশরিকরা। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করার অর্থ এমন নয় যে ঘরে শুয়ে থেকে রিজিক আশা করা বা পোষা জন্তুকে অজানা স্থানে ছেড়ে দিয়ে তার নিরাপত্তা আশা করা। একবার এক ব্যক্তি মহানবীকে প্রশ্ন করেন এখন নামাজের সময় হয়েছে, আমি কি আমার উটকে ছাড়া অবস্থায় রেখে মসজিদে নামাজ আদায় করবো? মহানবী সা. বললেন না। আগে উটটাকে বেঁধে রাখ এবং এরপর আল্লাহর ওপর ভরসা করে নামাজের জন্য অগ্রসর হও।

 আমরা যেমন মহান আল্লাহর কাছে সব কিছু আমানত হিসেবে রাখছি মহান আল্লাহও আমাদের কাছে আমানত হিসেবে দিয়েছেন অনেক কিছু। ইসলাম ধর্ম ও ইসলামী বিধি-বিধানকে তিনি আমাদের কাছে আমানত হিসেবে দিয়েছেন। আমাদের চোখ, কান, নাক, দেহ ও বুদ্ধিমত্তা, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, সম্পদ - এসবই মহান আল্লাহর দেয়া আমানত। এসব আমানতকে পাপ ও হীন স্বার্থে ব্যবহার করা মানে আমানতের খিয়ানত। সূর্য তার দায়িত্ব পালন করে। সাগরের ঢেউও তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে। কিন্তু অনেক মানুষ তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা দেখায় তথা বিশ্বাসঘাতকতা করে। মহান আল্লাহ সুরা আহযাবে বলেছেন (৭২ নম্বর আয়াতে) : আমি আকাশ পৃথিবী ও পর্বতমালার সামনে এই আমানত পেশ করেছিলাম, অতঃপর তারা একে বহন করতে অস্বীকার করল এবং এতে ভীত হল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয়ই তারা এই আমনাত রক্ষা না করায় খুবই জালিম ও এ দায়িত্ব পালনে অবহেলার পরিণতি সম্পর্কে খুবই অজ্ঞ!

ইসলাম মানুষকে বিশ্বস্ত বা আমানতদার করতে চায়। মুমিনরা পরস্পরকে যদি বিশ্বাস করতে না পারে তাহলে বোঝা যায় যে ধর্ম তাদেরকে আমিনে উন্নীত করতে পারেনি। মুমিন যখন অন্য মুমিনকে সালাম দেয় তার অর্থ হল আমি আপনার দিক থেকে সব বিষয়ে নিরাপত্তা ও আন্তরিকতা অনুভব করি এবং আপনিও আমার দিক থেকে সব বিষয়ে নিরাপত্তা ও আন্তরিকতা অনুভব করতে পারেন। হে আল্লাহ! আমাদের সালাম যেন হয় আন্তরিক ও বাস্তবতার মাত্রায় পরিপূর্ণ।

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।