এপ্রিল ০৫, ২০২৩ ১৮:৫৪ Asia/Dhaka

খোদা-সচেতন হওয়ার জন্য মহান আল্লাহর বিখ্যাত নামগুলোর অর্থ ও তাৎপর্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা জরুরি।

তাই বিগত বেশ কয়েকটি আলোচনায় আমরা মহান আল্লাহর বিখ্যাত কয়েকটি নামের অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেছি। পবিত্র রমজানের এ পর্যায়ে আমরা মহান আল্লাহর দুই বিখ্যাত নাম আল আউয়ালু ও আল আখিরু সম্পর্কে কথা বলব।  এর অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহই প্রথম ও তিনিই শেষ। মানুষের পক্ষে একই ব্যক্তি প্রথম ও শেষ হতে পারে না। কিন্তু মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রথম ও শেষ হওয়ার বিষয়টি পরস্পর-বিরোধী নয়।

পবিত্র কুরআনে সুরা হাদিদ-এর তিন নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহর পরিচয় প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: হুয়াল আউয়ালু ওয়াল আখিরু... । এর আক্ষরিক অর্থ তিনি প্রথম ও অন্ত বা শেষ...। এভাবে বলার কারণ হল আল্লাহ সব সমসয়ই ছিলেন, আছেন ও থাকবেন এবং আল্লাহ কখনও পরিবর্তিত হন না ও হবেন না। মানুষ যেমন শিশু থেকে কিশোর ও যুবক হয় এবং  বুড়ো হয় আল্লাহর ক্ষেত্রে এমন ধরনের কোনো পরিবর্তনই কখনও ঘটেনা।

অন্য কথায় আল্লাহ হচ্ছেন অনাদি ও অনন্ত। কারণ আল্লাহকে আক্ষরিক অর্থে প্রথম বললে কেউ কেউ মনে করতে পারেন প্রথমের আগেও শূন্যতা বা অন্য  কিছু একটা ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহর প্রথম হওয়ার বিষয়টা কখনও এমন নয়।

 আল্লাহ এমন এক প্রথম যার আগে আর কোনো প্রথম ছিল না এবং এমন এক শেষ যার পরে কোনো শেষ নেই। ক্লাসে কোনো এক ছাত্রকে প্রথম বলা হলে এমনও হতে পারে তার আগেও হয়তো অন্য কেউ ভর্তি হয়ে আবার চলে গিয়েছিল। পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকেও এমন হতে পারে যে আগে অন্য কোনো ছাত্র প্রথম হয়েছিল বা যৌথভাবে প্রথম হয়েছিল! কিন্তু মহান আল্লাহর প্রথম হওয়ার বিষয়টা কখনও এমন নয়।

মহান আল্লাহ আখের তথা শেষ বা অন্ত হওয়ার অর্থ সব কিছু ধ্বংস হলেও মহান আল্লাহ চিরকাল টিকে থাকবেন। মহান আল্লাহকে কুরআনে 'প্রথম' বলার অর্থ এটাও যে সব সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে তাঁর নিদর্শন। তিনিই প্রথম বলে সব কিছু তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তাই আপনি সৃষ্টিকুলের যা-ই দেখবেন তখনই স্মরণ করা উচিত আল্লাহকে প্রথম সত্ত্বা ও স্রস্টা হিসেবে এবং সর্বশেষ সত্ত্বা হিসেবে। আমিরুল মু'মিনিন হযরত আলী  (আ) বলেছেন, আমি যা কিছুই দেখি তার আগে বা তার সূচনাতে আল্লাহকে দেখি, তার মধ্যেও আল্লাহকে দেখি ও শেষেও আল্লাহকে দেখি!-আমাদের এটা মনে রাখা উচিত আল্লাহ আউয়াল ও আখের অর্থ সবকিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে বা শুরু হয় এবং সব কিছুর শেষও হবে আল্লাহর মাধ্যমে। তাই বিশ্বাসী ব্যক্তি বিপদ-আপদকেও আল্লাহরই দেয়া নেয়ামত মনে করেন এবং তাতেও সৌন্দর্য দেখেন। এজন্যই তারা কখনও মুক্তির বিষয়ে আশাহত হন না।  

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা মহান আল্লাহ থেকে এসেছি ও মহান আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব। - এ বাক্যের মধ্যেও আসলে মহান আল্লাহ'র প্রথম ও শেষ হওয়ার তথা আউয়াল ও আখের হওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে।

মহান আল্লাহ'র এ দুই নাম তথা আউয়াল ও আখের-এর  রঙে রঙিন হতে হলে আমাদের উচিত সব ভালো কাজে বা গুণে সেরা বা প্রথম হওয়ার চেষ্টা করা। জিহাদের মাঠে মহানবী (সা) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের মত সবচেয়ে সাহসী ও অগ্রণী হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সংগ্রামের ময়দানে শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অবিচল থাকার চেষ্টা করতে হবে এই মহাপুরুষদের মতই। মানব-সেবা ও দানের ক্ষেত্রেও তাঁদের মত সেরা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ভালো বা সৎ কাজে প্রতিযোগিতা করা খোদা-সচেতন মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মহানবী ও তাঁর আহলে বাইতের অনুসারী  খোদা-সচেতন ব্যক্তিকে তাঁর প্রতিষ্ঠানে বা তাঁর লোকালয়ে সবচেয়ে ভালো আচরণকারী, সবচেয়ে যোগ্য কর্মী বা পরিচালক এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী হিসেবে বাস্তব পরিচিতি অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।

মহান আল্লাহর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নাম আলবারি। মহান আল্লাহর আরো দুই নাম খালিক্ব ও মুসাওয়িরু'র সঙ্গে এই নামের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র। কারণ এই তিন নামই মহান আল্লাহ'র সৃষ্টিকর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। খালিক্ব শব্দের সাদামাটা অর্থ স্রস্টা। তবে মহান আল্লাহ খালিক্ব বলতে বোঝায় তিনি এমন কিছুর স্রস্টা যার নমুনা বা দৃষ্টান্ত অতীতে কখনও ছিল না।  বারি শব্দের অর্থও স্রস্টা তবে ভিন্ন মাত্রা রয়েছে এতে। এ শব্দের অর্থ পৃথককারী বা উদ্ভাবক। পবিত্র কুরআনে এ শব্দটি চার বার এসেছে। মহান আল্লাহ বারিয়ু। কারণ তিনি সৃষ্টিকুলকে অস্তিত্বহীনতা থেকে পৃথক করেন। 

যিনি উদ্ভাবক তিনি যা উদ্ভাবন করেন তাতে অতীতের কোনো কিছু বা বস্তু থাকে না। অর্থাৎ উদ্ভাবিত কিছুতে অতীতে পাওয়া যেত এমন কোনো উপাদান যেমন, পানি, মাটি, আগুন ও বাতাসের মত কিছুই নেই। কিন্তু যিনি খালিক্ব বা স্রস্টা  তিনি সৃষ্টির সময় অতীতে পাওয়া যেত এমন কিছুও ব্যবহার করেন। যেমন, মহান আল্লাহ মানুষকে কাদা-মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ একাধারে উদ্ভাবক ও স্রস্টা। মহান আল্লাহ এমনই উদ্ভাবক যে প্রত্যেক মানুষের আঙুলের ছাপ বা ফিঙারপ্রিন্ট ভিন্ন।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ কাফির ও মুশরিকদেরকে নিকৃষ্টতম সৃষ্টি বলতেও বারি নাম তথা 'শাররুল বারিয়া' শব্দযুগল ব্যবহার করেছেন। কুরআনে মুমিন ও সৎকর্মশীলদেরকে খাইরুল বারিয়া তথা শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। মহান আল্লাহ আঙ্গুলের অভিনব ছাপের মত প্রত্যেক মানুষকে দিয়েছেন অভিনব কিছু দিক ও যোগ্যতা। তাই আসুন আল্লাহর প্রেমিক হই। #

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/ ১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ