এপ্রিল ২১, ২০২৩ ১৯:১৬ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ'র আসমায়ুল হুসনার তালিকাভুক্ত আরও একটি নাম  خَیْرখাইর বা উত্তম। দুই বা আরও বেশি সংখ্যক ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের তুলনার সময় এই শব্দ ব্যবহার করা হয়।

যেমন পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে: ক্বদর বা মহিমান্বিত রাত হাজার রাতের চেয়েও উত্তম। মহান আল্লাহ হচ্ছেন সব বিষয়ে সর্বোত্তম। পবিত্র কুরআনে খাইর শব্দটি এসেছে মোট ১৭৬ বার। 


মহান আল্লাহ হচ্ছেন সব পরিপূর্ণতা ও সৌন্দর্যের উৎস। মহান আল্লাহ সব ধরনের ত্রুটি ও ঘাটতি থেকে মুক্ত এবং কল্যাণ ও মঙ্গল বা ভালো কিছু ছাড়া অন্য কিছু তাঁর সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তাই আল্লাহ হচ্ছেন নিরঙ্কুশ খাইর বা কল্যাণ। অন্য যে কোনো কিছু বা বিষয়ের তুলনায় তিনি সর্বোত্তম। সুরা ত্বাহার ৭৩ নম্বর আয়াতে খাইর শব্দ ব্যবহার করে বলা হয়েছে: মহান আল্লাহ সর্বোত্তম ও চিরস্থায়ী। তিনি সর্বোত্তম প্রজ্ঞাবান বা বিচারক, সর্বোত্তম সহায়তাকারী, সর্বোত্তম রিজিকদাতা, সর্বোত্তম দয়ালু, সর্বোত্তম বিজয়ী।

আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা 

 

 আসলে যে কোনো গুণ বা যোগ্যতার ক্ষেত্রে অন্য কেউই মহান আল্লাহর সঙ্গে কোনোভাবে তুলনার যোগ্যতাই রাখে না তা তারা যত বড় শক্তিমান, জ্ঞানী, সম্পদশালী, দয়ালু, সাহায্যকারী, বিজয়ী ও অভিজ্ঞ বিচারকই হোন না কেন।  আল্লাহ ছাড়া অন্য সবারই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে রয়েছে সীমাবদ্ধতা, ত্রুটি, ভুল ও ঘাটতি।  এ ছাড়াও অন্যদের যতটা গুণ বা যোগ্যতা আছে তাও মহান আল্লাহর কাছ থেকেই পাওয়া এবং তারা মুখাপেক্ষিতা হতে মুক্ত নয়। অন্যদিকে মহান আল্লাহ সব ধরনের মুখাপেক্ষিতা হতে মুক্ত। মহান আল্লাহ সব বিষয়ে নিখুঁত ও পরিপূর্ণ জ্ঞান রাখেন। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জ্ঞানও তিনি রাখেন। তাঁর ইচ্ছাই সবক্ষেত্রে চূড়ান্ত। তিনি যা চান তা-ই ঘটা অনিবার্য। তিনি যদি কোনো কিছু করতে বা নির্মাণ করতে ইচ্ছা করেন তাহলে তা 'হও' বলতেই হয়ে যায়। মহান আল্লাহ পিতা ও মাতা ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন হযরত আদম ও হাওয়া। তিনি মৃতকে জীবিত করেন ও জীবিতকে মৃত করতে পারেন। তিনি অস্তিত্বহীন বিষয় থেকে অস্তিত্ব সৃষ্টি করেন।–

মহান আল্লাহ'র ইচ্ছায় বিশাল অগ্নিকুণ্ড হযরত ইব্রাহিম নবীর জন্য নাতিশীতোষ্ণ ফুলের বাগান হয়েছিল। তিনি চাওয়ায় সাগর শুকিয়ে তাতে পথ বের হয় এবং এর মাধ্যমে তিনি মুসা নবী ও বনি-ইসরাইলকে উদ্ধার করেন ফেরাউনের নৃশংস নির্যাতনের হাত থেকে। অন্যদিকে একই দরিয়া বা সাগরে ডুবে মারা যায় ফেরাউন ও তার দল। তাই মহান আল্লাহর চেয়ে বড় ন্যায়বিচারক ও সাহায্যকারী কেউ নন এবং কোনো কিছুতেই কেউই আল্লাহ'র চেয়ে বড় হতে পারে না। মহান আল্লাহর মোকাবেলায় কেউই বিজয়ী হতে পারে না এবং মহান আল্লাহ যাকে সাহায্য করেন তার বিজয় অনিবার্য।  

আল্লাহ সর্বোত্তম সহায়তাকারী 

 

মহান আল্লাহ সর্বোত্তম রিজিকদাতা। এক রাজার প্রাসাদের পাশে দুই ভিক্ষুক ভিক্ষা করত। তাদের একজন বলত রাজা যাকে দেয় সেই সৌভাগ্যবান হয়। অন্যজন মোসাহেবি তো করতোই না বরং বলতো আল্লাহ যাকে দেয় সে-ই সৌভাগ্যবান কোনো রাজার বিন্দুমাত্রও কোনো ক্ষমতা নেই কারো কল্যাণ করার বা ভাগ্য বদলে দেয়ার! রাজা এ কথা শুনে ওই মোসাহেবকে পুরস্কৃত করতে তাকে একটি রান্না করা মুরগি দিলেন যার ভেতরে ছিল অত্যন্ত দামী এক পাথর বা হিরার টুকরো! ওই ভিক্ষুক সেদিন ক্ষুধার্ত না থাকায় ওই মুরগি দিয়ে দিল মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে অভ্যস্ত পাশের ভিক্ষুককে। ভিক্ষুক তা খেতে গিয়ে ওই দামি পাথর পায় ও বিক্রি করে ধনী হয়ে যায়। অন্যদিকে রাজার মোসাহেব ভিক্ষুক ভিক্ষুকই থেকে যায়! রাজা প্রকৃত ঘটনাটি জানতে পেরে বিস্মিত হয় ও আল্লাহর অশেষ ক্ষমতাই যে চূড়ান্ত তা স্বীকার করে। 

মানুষের কাছ থেকে সাহায্য পেতে হলে অনেক সময় অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয় ও অসম্মানজনক কথাও শুনতে হয়! উপকার করে অনেকেই উপকারের খোঁচা দেয় এবং বিনিময়ও আশা করে। কিন্তু মহান আল্লাহ এমন নন। তাই তিনিই সর্বোত্তম রিজিকদাতা। একবার বাগদাদের এক খলিফা দরবেশি জীবনে অভ্যস্ত ও নিজের প্রকৃত অবস্থা গোপন রাখতে অভ্যস্ত ফকির-বেশী জ্ঞানী বহলুলকে বলেন যে, তুমি আমার কাছে আস! আমি তোমার প্রতি দিনের রিজিক ও আয় নির্ধারণ করে দিব যাতে তোমাকে রিজিক নিয়ে আর চিন্তা করতে না হয়! বহলুল বলেন, আপনার কথা মেনে নিতাম যদি তাতে কয়েকটি ত্রুটি না থাকতো! প্রথমত আপনি জানেন না যে আমার কি কি জিনিস প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত আপনি জানেন না কখন আমার সেসব দরকার হবে। তৃতীয়ত আপনি জানেন না যে  সেসব আমার কতটুকু দরকার! চতুর্থত এমনও হতে পারে যে আপনি আমাকে যা দিয়েছেন কখনও বা কোনো দিন রাগ করে সে-সবই ফেরত নিতে পারেন!  কিন্তু আমার রিজিকদাতা আল্লাহর এইসব ত্রুটি নেই! এমনকি যেদিন আমি পাপ করি সেদিনও তিনি আমার জীবিকা বন্ধ করে দেন না!  

মহান আল্লাহ সর্বোত্তম বিচারক 

 

কিসে মানুষের বেশি কল্যাণ বা কোন্ বিষয়টি সর্বোত্তম অনেক সময় মানুষ তা বুঝতে পারে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় বা তিক্ত এমন অনেক বিষয় মানুষের জন্য কল্যাণকর, আবার বাহ্যিক দৃষ্টিতে পছন্দনীয় এমন অনেক বিষয় আসলে মানুষের জন্য অকল্যাণকর, কিন্তু মানুষ সাধারণত তা জানে না বা বোঝে না। (সুরা বাকারা,২১৬) অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন যে কোন্‌ কোন্‌ বিষয়গুলো মানুষের জন্য বেশি উপকারী বা সর্বোত্তম ও কোন্‌ বিষয়গুলো ক্ষতিকর।

মহান আল্লাহ মানুষকে সব সময় ভালো কাজের আহ্বান জানান। পবিত্র কুরআনের সুরা আলে ইমরানের ১১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে সৎকর্মশীল মুমিনরা ভালো কাজে একে অপরের চেয়ে এগিয়ে থাকে। সৎ ও ভালো কাজে মানুষের মধ্যে সবার চেয়ে অগ্রসর হলেন নবী-রাসুল ও ইমামগণ। আর এ জন্যই সুরা সোয়াদ-এর ৪৫ থেকে ৪৮ নম্বর আয়াতে খাইর শব্দ ব্যবহার করে হযরত ইব্রাহিম, ইয়াকুব, ইসহাক, ইসমাইল, আল ইয়াসায়া, জুল কিফ্‌ল-কে বিশিষ্ট সৎ, মনোনীত ও গুণী বলে উল্লেখ করেছেন। হযরত জাকারিয়া, তাঁর স্ত্রী ও হযরত ইয়াহিয়াও ছিলেন তদ্রূপ। সৎ কাজে তারা ছিলেন অগ্রগামী।   #

পার্সটুডে/এমএএইচ/২১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।