অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার জরুরি
'বাংলাদেশে হিংসার রাজনীতির জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই'
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে চলছে নানাকথা, নানা আলোচনা। রাজনীতিবিদরা পরস্পরকে নিয়ে তীব্রভাবে কটু কথা বলছেন প্রতিনিয়ত। হিংসার আবহ বিরাজ করছে এখনও। তো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আজ আমরা কথা বলেছি, বিশিষ্ট সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান সাজুর সঙ্গে।
রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমাদের দেশের রাজনীতি এখনও হিংসামুক্ত হয়নি, তুষ্ট যে চক্র তা থেকে আমরা এখনও বেরিয়ে আসতে পারিনি। এ পরিস্থিতিতে একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে একমাত্র ওষুধ হচ্ছে একটা অবাধ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে সমস্ত অপশক্তির জবাবদিহিতা থাকবে।
বিশিষ্ট এ সাংবাদিক আরও বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতি হিংসামুক্ত না হওয়ার জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই। অন্য কেউ এরজন্য দায়ী নয়। তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক শব্দটি রাজনৈতিক। এদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। এখানে সাম্প্রদায়িক শব্দটা এসেছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকে।
সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপনা ও তৈরি করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
জনাব এলাহী নেওয়াজ খান সাজু-রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।
রেডিও তেহরান: জনাব এলাহী নেওয়াজ খান সাজু “আমাদের রাজনীতি এখনো হিংসামুক্ত হয়নি; রাজনীতিতে নষ্ট ধারা এখনো প্রবাহিত।” বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা ও সম্প্রীতি উৎসবে একথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার এ বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এলাহী নেওয়াজ খান সাজু: তার এই বক্তব্যকে আমি শতভাগ সমর্থন করি। কারণ উনি সঠিক কথা বলেছেন যে, আমাদের দেশের রাজনীতি এখনও হিংসামুক্ত হয়নি, দুষ্টু যে চক্র তা থেকে আমরা এখনও বেরিয়ে আসতে পারিনি। এ পরিস্থিতিতে একমাত্র ব্যবস্থা হচ্ছে একমাত্র ওষুধ হচ্ছে একটা অবাধ গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে সমস্ত অপশক্তির জবাবদিহিতা থাকবে। সমাজে যারাই খারাপ কাজ করবে তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক শক্তিশালী একটা সংসদ দরকার একইসঙ্গে একটা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা দরকার। যার কোনোটাই বর্তমানে বাংলাদেশে উপস্থিত নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যদি তার সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকারের ব্যবস্থা করেন তাহলেই কেবল আমরা একটি চমৎকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পাব।
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশের রাজনীতি যদি হিংসামুক্ত না-ই হয় তাহলে এক্ষেত্রে কার দায় কতটা?
এলাহী নেওয়াজ খান সাজু : দেখুন, বাংলাদেশকে তো বহুবছর ধরে রাজনীতিবিদরাই চালাচ্ছে। এখানে রাজনীতিই হচ্ছে একমাত্র কথা। সেক্ষেত্রে এর দায় দায়িত্ব রাজনীবিবিদদেরই নিতে হবে। একসময় এদেশে যখন সামরিক শাসন ছিল তখন দায় চাপানো হতো সামরিক শাসকদের কতৃর্ত্ববাদী শাসনের ফলে দেশে এই ধরণের ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু অনেক বছর ধরে এই দেশে গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে আর গত ১৪ বছর ধরে বাংলাদেশে বেসামরিক সরকার শাসন করছে। সুতরাং এর দায় রাজনৈতিক দলকেই নিতে হবে। অন্যকেউ এজন্য দায়ী না।
রেডিও তেহরান: অনেকে অভিযোগ করে থাকেন- সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি রাজনীতির এমন একটি উপজীব্য যা ব্যবহার করে রাজনীতিবিদদের অনেকেই সুবিধা আদায় করে থাকেন। এই অভিযোগকে আপনি কীভাবে দেখবেন?
এলাহী নেওয়াজ খান সাজু: একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি বাংলাদেশের জনগণকে জানি যে এদেশের মতো অসাম্প্রদায়িক মানুষ বিশ্বের খুব কম দেশেই আছে। আর সাম্প্রদায়িক শব্দটা হলো রাজনৈতিক। আমাদের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে এই দেশের প্রতিটি নাগরিক আইনের সামনে সমান। তাই যদি হয় তাহলে একজন মুসলিম অপরাধ করলে যে শাস্তি পাবে একজন সংখ্যালঘু সেই একই অপরাধ করলে একই শাস্তি পাবে। কিন্তু এখানে সাম্প্রদায়িক শব্দটা এসেছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি থেকে। আর রাজনীতির কারণেই আমাদের সমাজে সাম্প্রদায়িকতা ব্যাপকভাবে বিরাজ করছে। তবে আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক। আমি দেখেছি আমাদের গ্রামে গঞ্জে হোটেল রেস্টুরেন্টে একই টেবিলে বসে হিন্দু মুসলিমকে বসে চা খেতে আমি দেখেছি। ফলে এটিও রাজনীতিকদের সৃষ্টি।
রেডিও তেহরান: বাংলাদেশের রাজনীতিকে সত্যিকার অর্থে হিংসামুক্ত করার ক্ষেত্রে কী কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?
এলাহী নেওয়াজ খান সাজু: বাংলাদেশের রাজনীতিকে হিংসামুক্ত করতে গেলে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে একটা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে এমন একটা সরকার গঠিত হবে যে সরকার সবসময় মনে করবে আমি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। একইসঙ্গে আইনের শাসন লাগবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। স্বজনপ্রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আইনের শাসনকে এমন পর্যায়ে নিতে হবে যেখানে রক্তের সম্পর্কের নিজের ভাইও যদি অপরাধী হয় এবং আমি যদি বিচারক হই কিংবা শাসন ক্ষমতায় থাকি সেক্ষেতেও আইন অনুযায়ী বিচার হতে হবে। এটিকে যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলেই কেবলমাত্র হিংসার রাজনীতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। দেখুন আমাদের রাজনীতিবিদরা ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে আসেন, তারা সেখানকার শাসনব্যবস্থা দেখে আসে কিন্তু শিক্ষা সেখান থেকে শিক্ষা নেয়না। ওখানকার মতো ঐরকম একটা শাসনব্যবস্থা কায়েম হলেই আমরা হিংসামুক্ত একটা রাষ্ট্র কিংবা সমাজ পেতে পারি। কর্তৃত্ববাদী শাসনের মধ্য দিয়ে কখনই হিংসামুক্ত সমাজ সম্ভব না।
জনাব এলাহী নেওয়াজ খান সাজু বাংলাদেশের রাজনীতির চালচিত্র নিয়ে রেডিও তেহরানের আলাপন অনুষ্ঠানে আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৩