জুন ০৩, ২০২৩ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

আধুনিক যুগে মুসলিম দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে শিল্পায়ন ও নগরায়নের নানা নেতিবাচক প্রভাব। বিশেষ করে এ যুগে পশ্চিমা সংস্কৃতি বা জীবন-দর্শনের প্রভাবে অনেক পরিবার সন্তান নিতে অতীতের মত আর আগ্রহী নন।

অনেকেই কেবল একটি সন্তান নেয়াকেই যথেষ্ট বলে মনে করেন। এক্ষেত্রে সন্তানের শিক্ষা ও প্রতিপালনের ব্যয় বৃদ্ধিকে তারা অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে থাকেন। এর ওপর সরকারগুলোর পক্ষ থেকে জনসংখ্যা সীমিত রাখার প্রচারণাগত চাপ তো আছেই। কিন্তু জনসংখ্যা সীমিত করার নীতি যে আসলে ইসলামী চিন্তাধারা ও সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান এবং কোনো কোনো পশ্চিমা অর্থনীতিবিদদের ভুল হিসাব-নিকাশের প্রভাব তা মুসলিম দেশগুলোর নীতি-নির্ধারকসহ অনেক শিক্ষিত জনগণও বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি ইসলামী চিন্তাবিদদেরও কেউ কেউ পশ্চিমা ওই চিন্তাধারার প্রভাবে এই ভুল নীতিকে সঠিক বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। 

পরিকল্পিত পরিবার ও জনশক্তির যথাযথ ব্যবহার জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক। যে সন্তান পৃথিবীতে আসে সে পরিবারের রিজিক বা আয়ের অংশ কেড়ে নেয়- এমন ধারণা ঠিক নয়, সে কাজের হাতও নিয়ে আসে তথা সৌভাগ্যও নিয়ে আসে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত মনীষী পরিবারের প্রথম বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় কিংবা তৃতীয় সন্তান ছিলেন না বরং ছিলেন চতুর্থ কিংবা পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম কিংবা অষ্টম বা আরও পরের সিরিয়ালে জন্ম নেয়া সন্তান! আসলে মা ও বাবার স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সন্তানদের জন্মদানের ক্ষেত্রে সময়ের যৌক্তিক বিরতি মেনে চলার ভিত্তিতে একটি পরিবার দুই সন্তান বা তারও বেশি সন্তান গ্রহণ করলে তা পরিবার ও রাষ্ট্রের ওপর তেমন কোনো চাপই সৃষ্টি করতে পারে না।  কারণ সন্তানের রিজিকদাতা হলেন মহান আল্লাহ। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ রিজিকের ভয়ে সন্তান-নিধন না করার নির্দেশ দিয়েছেন। জোর করে স্বাভাবিক জনসংখ্যাকে কমিয়ে রাখার ব্যবস্থা অনেক সময় বুমেরাংও হয়। ফলে আমরা অনেক সময় এমন সংবাদও শুনি যে একজন নারী একই সঙ্গে বেশ কয়েকজন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন! 

প্রত্যেক জীবই তার বংশধর রেখে যেতে চায়। মানুষের মূল বা অবিকৃত প্রকৃতিও এর ব্যতিক্রম নয়। দেখা গেছে সন্তান গ্রহণ করেনি এমন পরিবারের চেয়ে সেসব পরিবারই বেশি সুখি যেসব পরিবার সন্তান গ্রহণ করেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় তালাক বা বিচ্ছিন্নতার একটা বড় কারণই হল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে সন্তানের অধিকারী না হওয়া। ইরানে পরিচালিত গবেষণায়ও দেখা গেছে সন্তানহীন পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়ার বা বিলুপ্ত হওয়ার মুখে রয়েছে। ইসলামী শিক্ষায় সন্তানকে মা-বাবার হৃদয়ের ফল বা নয়নমণি, সুগন্ধি বেহেশতী ফুল, জীবনের ফসল ইত্যাদি সুন্দর উপমা দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শিশু সন্তানকে চুমো খাওয়া ও আদর করা অনেক সাওয়াবের কাজ। বাবা-মা যখন সন্তানের দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকায় এবং সন্তানরাও স্নেহের দৃষ্টিতে বাবা-মায়ের দিকে তাকায় তখন পরিবারের সব সদস্যের বন্ধনই জোরদারের পরিবেশ গড়ে উঠে।  

শিশুদের সুবাদে বাবা-মায়ের যোগ্যতা বাড়ে

বিখ্যাত গবেষক হফম্যানের গবেষণায় দেখা গেছে যেসব বাবা-মা সন্তানের অধিকারী হন তারা আগের চেয়েও বেশি সামাজিক ও মিশুক হয়ে ওঠেন। শিশু সন্তানের কারণে বাবা মায়েরা সামাজিক পরিচিতি লাভ করেন। স্কুলে, পাড়া-পড়শির ঘরে ও নানা বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের তৎপরতা বাবা-মাকে অতীতের তুলনায় বেশি সামাজিক করে তোলে। অন্যদিকে শিশুরা বাবা-মায়ের অনুকরণে নির্দিষ্ট ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তাধারার অনুসারী হয়। বাবা মায়ের অনুকরণে শিশুরাও অন্যদের সুখ ও কল্যাণকে নিজের স্বার্থের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়ার শিক্ষা পায়। এভাবে সন্তানের আগমন গোটা পরিবারের সামাজিক হওয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়। সন্তানের কারণে বাবা-মায়েরা একাকিত্ব থেকে মুক্তি পান এবং তাদের জীবন হয়ে ওঠে আনন্দময় ও তৃপ্তিদায়ক। হফম্যানের মতে শিশুদের কারণে বাবা-মায়ের যোগ্যতা বাড়ে এবং তারা আগের চেয়ে বেশি স্বনির্ভর হয়ে ওঠেন। 

সন্তানদেরকে সুশিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে বাবা-মায়েরাও অনেক কিছু শেখেন এবং তাদের চিন্তাশক্তি, ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। সম্ভবত এ কারণেই ইসলাম স্রস্টা ও নবী-রাসুলের পরই বাবা-মায়ের বেশি প্রশংসা করেছে এবং তাদেরকে সম্মান দেখাতে বলেছে। সাধারণত প্রত্যেক বাবা-মা অত্যন্ত অনুরাগ নিয়ে সন্তানদের বড় ও সুশিক্ষিত করতে চান। আর এভাবে মা-বাবারাও মানবীয় পূর্ণতা ও মানসিক পরিপক্বতা অর্জন করেন।

বিয়ে করে সন্তানের অধিকারী হওয়ার পর মানুষের নৈতিক ও মানবীয় গুণগুলোর পরিচর্যার সুযোগ বেড়ে যায়। অন্যদিকে বেড়ে যায় মায়েদেরও ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, যোগ্যতা এবং সংসারের জন্য কষ্ট সহ্য করার শক্তি। বিয়ের এতসব উপকারিতার কারণে মহানবী (সা) বলেছেন, তোমরা বিয়ে কর ও পরিবার গড়ে তোল যাতে সন্তানের অধিকারী হতে পার। কিয়ামতের দিন আমি অন্যান্য উম্মতের তুলনায় তোমাদের তথা মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে গর্ব করব। 
 
দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে হলে স্বামী ও স্ত্রীর উচিত নারী-পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক চাহিদার পার্থক্যগুলো ভালোভাবে জানা বা বোঝার চেষ্টা করা। পুরুষরা চায় একজন ভালো জীবন-সঙ্গী যে হবে বিনোদনকামী, আকর্ষণীয়, সহায়তাকারী ও প্রেরণাদায়ী, প্রশংসাকারী ও সম্মানকারী ইত্যাদি। অন্যদিকে নারীরা চায় দয়া ও অনুরাগ, সান্ত্বনা, সহানুভূতি ও  আন্তরিক সংলাপ, স্পষ্টভাষিতা ও সততা এবং আর্থিক সহায়তা- ইত্যাদি। নারী চান তার স্বামী নিজ পরিবারকে প্রাধান্য দিবেন এবং সংসারের ছোটখাটো বিষয়কেও গুরুত্ব দিয়ে স্ত্রীর অনুভূতি, বিশ্বাস, প্রস্তাবনা ও প্রাত্যহিক কাজগুলোকেও গুরুত্ব দিবেন। স্ত্রী চান স্বামী অন্যদের সামনে তাকে সম্মান করবেন ও তাকে নিয়ে গর্ব করবেন। স্ত্রীরা চায় স্বামীর জীবনের শরিক হতে এবং স্বামী তার পেশাগত লক্ষ্য ও বিষয়গুলো তাকেও জানাবেন। স্বামী যদি স্ত্রীকে একটি ছোট্ট জিনিসও উপহার দেন কিংবা প্রেমময় কিছু কথা বলেন বা লিখে দেন তাহলে তা যেন তার জন্য সুস্থতা ও সুরক্ষার মাধ্যম হয়ে যায়। 

পুরুষরা চান লক্ষ্যকামী হতে ও সাফল্য অর্জন করতে এবং তারা পথ উন্মোচনকারী ও ত্রাণকর্তা হতে চান। তারা নিজ পেশাকে নিজ অস্তিত্বের অংশ বলে মনে করেন। অন্যদিকে নারীরা মালিকানাকামী। তার বাইরের পেশার চেয়েও পরিবারকে বেশি গুরুত্ব দেন ও পরিবারকে নিজের অস্তিত্বের অংশ বলে মনে করেন। তারা বর্তমান চাহিদাগুলো পূরণ করাকে বেশি গুরুত্ব দেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ