জুন ১১, ২০২৩ ২৩:৪২ Asia/Dhaka

সন্তানদের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষার পাশাপাশি তাদেরকে নৈতিক শিক্ষা, সততা এবং আদব-কায়দা শেখানোর ব্যাপারেও যত্নশীল হওয়া উচিত।

সুখ আর প্রশান্তি মানে অন্তরের গহীনে লালিত কিছু স্বপ্ন!

এতো নয় কেবল মালিকানার অনুভূতি!

সুখের একটি দিগন্ত যদি যায় হারিয়ে

খুঁজে দেখো অন্যদিকে খুলেছে স্বপ্নের অন্য আরেক দিগন্ত!

কেবল রুদ্ধ দিগন্তের পানে চেয়ে চেয়ে

সুখের নতুন রাজ্যগুলোকে করো না দুঃখের করদরাজ্য!

যা গেছে চলে তা যাক! ভেবো না তা ক্ষতি!

আশার রাজ্যে বিষণ্ণতার স্মৃতিগুলো সব হোক পরিত্যাজ্য!

জীবন হোক না যতই দুঃখময় অশান্ত

হাসির ফল্গুধারায় তাও হবে প্রশান্ত, প্রাণোচ্ছল, প্রাণবন্ত !  

 

আমরা অনেক সময় দেখি যে অনেক মা-বাবা সন্তানদের বাহ্যিক কল্যাণ ও প্রশান্তির প্রতি খুবই যত্নশীল। তাদের বস্তুগত চাহিদা মেটাতে আমরা মাত্রাতিরিক্ত দায়িত্বশীল!  সন্তানের চোখ ও কানের সামান্য সমস্যা নিয়ে আমরা মহা-উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি! ঠিক একইভাবে যদি আমরা সন্তানদের নৈতিক শিক্ষা, সততা এবং আদব-কায়দা শেখানোর ব্যাপারে যত্নশীল হতাম তাহলে তারা খুব দ্রুত সোনার মানুষ বা আদর্শ নাগরিক হয়ে গড়ে উঠত। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ) তাঁর বড় সন্তান ইমাম হাসানকে বলেছেন, শিশুর মন হচ্ছে খালি বা পড়ে থাকা জমির মত। এখানে যে বীজই বোনা হবে তা-ই বেড়ে উঠবে ও ফলবান হবে। তাই তোমার মনের জমিনে বন্ধু ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের মত অন্য অনেক কিছুর শক্তি ভিত্তি গড়ে ওঠার আগেই তোমায় সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার পদক্ষেপ নিতে চাই।-    কথায় বলে যার নয় বছর বয়সে শিক্ষা হয় না তার নব্বুই বছর বয়সেও সুশিক্ষা লাভ হয় না। তাই কেউ যদি সন্তানদের ধার্মিক ও সৎ বানাতে চায় তাহলে ছোটবেলা থেকেই তাদেরকে নানা ধর্মীয় শিক্ষা ও অভ্যাসে অভ্যস্ত করা উচিত।

'তোমরা সন্তানদেরকে প্রথম সাত বছর মনিবের মত যত্ন করবে' : হাদিস

 

 শিশুরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড়দের অনুসরণ করে। তাই মা-বাবা ও বড় ভাইবোনরা যদি আচার-আচরণ ও নৈতিকতার নানা ক্ষেত্রে ভালো কোনো দৃষ্টান্ত দেখাতে না পারেন তাহলে ছোট সন্তানরাও সহজেই ভালো কিছু শিখতে ও রপ্ত করতে ব্যর্থ হবে।  বাংলাদেশের একটি গ্রাম্য প্রবাদ হল, আগের হাল যেদিকে যায় পিছের হালও সেদিকেই ধায়! শিশুদেরকে শেখাতে হবে ভালোবাসা ও স্নেহের পরশ দিয়ে। কারণ তারা স্নেহ ও ভালোবাসার মুখাপেক্ষী। তাদের এসব চাহিদা মেটানো না হলে তারা নিঃসঙ্গতা ও গুরুত্বহীনতার বা অবহেলিত হওয়ার অনুভূতি নিয়ে বিষণ্ণ হয়ে থাকবে।  শিশুরা দেখতে চায় যে তাদেরকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ও তাদেরকেও সম্মান করা হচ্ছে। শিশুদেরকে কাজ দিতে হবে তাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। মহানবী (সা) বলেছেন, 'তোমরা সন্তানদেরকে প্রথম সাত বছর মনিবের মত যত্ন করবে, পরবর্তী সাত বছর তাদেরকে অনুগত কর্মী করবে ও তার পরের সাত বছর তাদেরকে পরামর্শদাতা বা উজির করবে। একুশ বছর নাগাদ তাদের আচার-আচরণ ও অভ্যাস যদি পছন্দনীয় হয় তাহলে তো ভালোই অন্যথায় তাদেরকে নিজের হালের ওপর ছেড়ে দিন। কারণ আল্লাহর কাছে তোমার কোনো ত্রুটি নেই।'

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় শিশুদেরকে ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সে আনুগত্য শেখাতে হবে। কৈশোর থেকে যৌবনের গোঁড়া পর্যন্ত তথা ১৫ থেকে একুশ বছর পর্যন্ত তাকে বানাতে হবে পরামর্শদাতা। অন্য কথায় সন্তানদের সুশিক্ষিত করতে হলে তাদের বয়স এবং পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকে নানা বিষয় শেখাতে হবে ও এরই আলোকে তাদের কাছ থেকে নানা বিষয়ে উন্নতির প্রত্যাশা করতে হবে।শৈশবে শিশুদের সঙ্গে আপোষ করে চলতে হবে ও তাদের সব আবদার রক্ষা করতে হবে। এ সময় আনন্দ-ফুর্তি ও খেলাধুলার প্রতি তাদের যে প্রবল আকর্ষণ তার গুরুত্ব বুঝতে হবে এবং এরই আলোকে তাদের জন্য খেলাধুলার যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখতে হবে। শারীরিক সুস্থতা ও প্রবৃদ্ধি ছাড়াও খেলাধুলা শিশুদের চিন্তাশক্তিও বাড়িয়ে তোলে। বাবা-মাও শিশুদের খেলার সঙ্গী হয়ে তাদেরকে গুরুত্বপূর্ণ নানা মূল্যবোধ ও সামাজিক নানা রীতি আর প্রথা শেখাতে সহায়তা করতে পারেন।  

আনুগত্য, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায় শেখানোর ভালো সময় হচ্ছে ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সের সময়টুকু

 

আনুগত্য, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও অধ্যবসায় শেখানোর ভালো সময় হচ্ছে ৭ থেকে ১৪ বছর বয়সের সময়টুকু। পরিবার ছাড়াও এসব কাজে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। সন্তানদের শিক্ষার তৃতীয় পর্যায় তথা ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সের সময়টুকুও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় সন্তানরা বেশ স্বাধীনচেতা হয়ে ওঠে। তারা যে কোনো পেশার দিকে এ সময় ঝুঁকে পড়ে। যে কোনো দায়িত্ব গঠন ও এমনকি পরিবার গড়ার জন্যও তারা এ সময় প্রস্তুত থাকে। ধর্মীয় সামাজিক ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধগুলোও তারা এ সময় বোঝার চেষ্টা করে গভীরভাবে। তাই এ সময় তাদের ব্যক্তিত্বকে সম্মান দেয়া উচিত এবং জীবনের নানা বিষয়ে তাদের পরামর্শও নেয়া উচিত। এ সময় তরুণরা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তববাদী হওয়ার পরিবর্তে উচ্চাভিলাষী হয়। তাই তাদের সঙ্গে এ সময় বেশি বেশি মত-বিনিময় করা ও তাদের সঙ্গে সমানুভূতি বা সহানুভূতি প্রকাশ করা জরুরি যাতে তারা বিভ্রান্তি, চরমপন্থা বা ভুল পথ থেকে দূরে থাকে।  

আজকের আলোচনা শেষ করবো ক্রোধের নেতিবাচক ও হাসির ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে গবেষকদের দেয়া ক'টি তথ্য শুনিয়ে। মানুষ যদি এক মিনিটের জন্য ক্রুদ্ধ হয় তাহলে তার শরীর ৫ ঘণ্টা ধরে দুর্বল থাকে। আর এক মিনিটের হাসি শরীরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ২৪ ঘণ্টার জন্য শক্তিশালী করে। মানুষ যখন হাসে তখন নার্ভ বা স্নায়ুতন্ত্র এন্ড্রোফিন নামক রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করে বলে মানুষের আত্মবিশ্বাস ও উৎফুল্লতা ব্যাপক মাত্রায় বেড়ে যায়। হাসির সময় মানুষ গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় এবং রক্তে অক্সিজেন বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে হাসি নানা ধরনের রোগ বিশেষ করে হৃদরোগ কমিয়ে দেয়। কারণ হাসার কারণে হৃদযন্ত্রে ও শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত-চলাচল খুব বেড়ে যায়। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠেই যতটা সম্ভব বেশি বেশি হাসা উচিত। ফার্সি কবিতায় বলা হয় নিরাময়-অযোগ্য যে কোনো অসুখের ওষুধ হল হাসি!  তাই পারিবারিক বন্ধনকেও মজবুত করতে পরিবারের সদস্যদের হাসি ও আনন্দের মাধ্যমে খুশি ও প্রাণবন্ত রাখুন।#

পার্সটুডে/আমির/১১

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

ট্যাগ