জুন ১৫, ২০২৩ ১৯:৪৬ Asia/Dhaka

আজ আমরা পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে আলোচিত আদর্শ নারীদের জীবনের মহান বৈশিষ্ট্য বা দিকগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরে সর্বকালের সেরা আদর্শ মহামানবী হযরত ফাতিমা জাহরা সালামুল্লাহি আলাইহার জীবন-বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সেসবের তুলনার চেষ্টা করব।

নবী-নন্দিনী  হযরত ফাতিমাকে বলা হয় খাতুনে জান্নাত তথা বেহেশতি নারীদের নেত্রী। আদর্শ নারীদের যেসব বৈশিষ্ট্য পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে সেসবেরই সমাহার ঘটেছিল খাতুনে জান্নাতের মধ্যে।আদর্শ নারীরা হবেন তওবাকারী। হযরত বিবি হাওয়া ও হযরত আদম উভয়ই শয়তানের ধোঁকার শিকার হয়ে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার কারণে অনুতপ্ত হন এবং মহান আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চান। মহান আল্লাহ তাঁদের ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আরেক নারী ফেরাউনের স্ত্রী হযরত আসিয়াকে বিশ্বাসী ও খোদার অনুরাগী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

পবিত্র কুরআন হযরত মুসা নবীর মাতা ইয়োকাবাদকে আল্লাহর বিধানের প্রতি আত্মসমর্পণকারী তথা মুসলিম ও আল্লাহর প্রতি ভরসাকারী হিসেবে তুলে ধরেছে। মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার কারণে তিনি নিজের নবজাতক সন্তানকে বাক্সবন্দি করে দরিয়ায় ভাসিয়ে দিতে পেরেছিলেন মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসা ইশারার আলোকে, যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে এমন কাজ ছিল অবিবেচনাসুলভ!

পবিত্র কুরআনের বর্ণিত নারী লজ্জাশীল ও সতী-সাধ্বী। যেমন, হযরত মুসা নবী যখন মাদায়েন শহরে আসেন এবং সেখানে শোয়াইব নবীর কন্যা সফুরার সঙ্গে যখন তাঁর দেখা হয় তখন ওই পবিত্র নারী যে সর্বোচ্চ মাত্রায় লজ্জাশীলতা বজায় রেখে পথ চলছিলেন সে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র কুরআনে। সুরা কাসাস-এর ২৫ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে: অতঃপর বালিকাদ্বয়ের একজন সর্বোচ্চ লজ্জাজড়িত পদক্ষেপে তাঁর কাছে আগমন করল। বলল, আমার পিতা আপনাকে ডাকছেন, যাতে আপনি যে আমাদেরকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময়ে পুরস্কার প্রদান করেন। -হযরত মুসার তাকওয়া বা খোদাভীতি দেখে শোয়াইব নিজের লজ্জাশীল সতীসাধ্বী কন্যা সুফরাকে  হযরত মুসার কাছে বিয়ে দেন।

নবী-নন্দিনী  হযরত ফাতিমাকে বলা হয় খাতুনে জান্নাত তথা বেহেশতি নারীদের নেত্রী

 

 পবিত্র কুরআন হযরত আইয়ুব নবীর জন্য তাঁর স্ত্রী বিবি রহিমার অসাধারণ ধৈর্য ও আত্মত্যাগের প্রশংসা করেছে। হযরত আইয়ুব জটিল রোগে আক্রান্ত হলে সবাই তাঁকে পরিত্যাগ করে দূরে সরে যায়, এমনকি তাঁর পুত্ররাও দূরে চলে যায়! এ সময়ে একঘরে ও দরিদ্র হয়ে পড়া হযরত আইয়ুবকে সাহায্য ও সেবা করতে তাঁর পাশে ছিলেন বিবি রহিমা। মহান আল্লাহ নানা ধরনের বিপদ-আপদের মাধ্যমে হযরত আইয়ুব, তাঁর স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ধৈর্য কতটুকু তা পরীক্ষা করেছেন। মহান আল্লাহ এই মহান নবী ও তাঁর স্ত্রীর ধৈর্যের পুরস্কার হিসেবে তাঁদের সব সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি ফিরিয়ে দেন এবং এমনকি হযরত ইয়াকুব ও তাঁর স্ত্রীকে আবারও যৌবন দান করে সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে দেন।  

 পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত সাবার রাণী বিলকিস ছিলেন  দূরদর্শী, বিচক্ষণ, বাস্তববাদী ও সত্যের অনুরাগী। তিনি একদেশদর্শী বা স্বৈরতান্ত্রিক পন্থায় দেশ শাসন না করে বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করতেন। সুলায়মানের চিঠিতে একত্ববাদের দাওয়াত পেয়ে তিনি দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেই করণীয় কাজ বা কর্তব্য ঠিক করেছিলেন।  তিনি দূতের মাধ্যমে উপঢৌকন পাঠিয়ে প্রথমে সুলায়মানকে পরীক্ষা করেন এবং যখন বুঝতে পারেন যে সুলায়মান সত্যিই মহান আল্লাহর নবী ও একত্ববাদী তখনই তিনি সূর্যপূজার ভ্রান্ত পথ ছেড়ে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনেন।পবিত্র কুরআন তথা মহান আল্লাহর বাণীতে হযরত মারিয়ামকে নির্বাচিত ও পবিত্র মহিলা বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাঁকে জগতের নারীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।  ফেরেশতারা মারিয়ামের সঙ্গে কথা বলেছেন ও তিনি যে মহান আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত তার সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁর কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ফল আসতো।  মহান আল্লাহ তাঁকে হযরত ঈসার মা হওয়ার গৌরব দান করেছেন।

হযরত ফাতিমা (সালামুল্লাহি আলাইহা) সর্বকালের সেরা মহামানবী ও বেহেশতি নারীদের নেত্রী হিসেবে ইসলামের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বা সর্বোত্তম আদর্শ হিসেবে বিবেচিত। আদর্শ নারীদের সব গুণই তাঁর মধ্যে ছিল। হযরত ফাতিমা মুসলিম নারী জাতির জন্য পরিপূর্ণ তথা পূর্ণাঙ্গ আদর্শ। এমন শ্রেষ্ঠ মহামানবীকে মহানবীর (সা) ঘরে দান করার কারণে মহান আল্লাহ তাঁকে এরই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বিশেষ নামাজ আদায়ের ও  কুরবানি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ ফাতিমাকে মহানবীর জন্য কাউসার বা কল্যাণের প্রাচুর্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং এ উপলক্ষে সুরা কাউসার নামে একটি সুরা নাজিল করেছেন। মহান আল্লাহ এ সুরায় বলেছেন: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানি করুন। যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ। -হযরত ফাতিমা নারী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে মহানবীর বংশধর হিসেবে ঘোষণা করে মহান আল্লাহ গোটা নারী জাতিকে সম্মানিত করেছেন।#

পার্সটুডে/এমএএইচ/১৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

 

ট্যাগ