নভেম্বর ০১, ২০২৩ ১২:১৬ Asia/Dhaka

সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ১ নভেম্বর বুধবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • অগ্নিসংযোগ-বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় দিনের মতো অবরোধ চলছে-ইত্তেফাক
  • কুলিয়াচরে পুলিশের গুলিতে নিহত ২-যুগান্তর
  • ৪ নভেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি-ডেইলি স্টার বাংলা
  • মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিং-যুক্তরাষ্ট্র যা চায়, বাংলাদেশের জনগণও তাই চায়, পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে–মানবজমিন
  • ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত: যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি বাধাগ্রস্ত-প্রথম আলো

কোলকাতার শিরোনাম:

  • জনগণের টাকায় ক্ষতিপূরণ দিলে বৃহত্তম আন্দোলন’, সিঙ্গুর নিয়ে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর, পালটা কুণালের-সংবাদ প্রতিদিন
  • জন্মের সঙ্গেই আসে মৃত্যু! ‘অভিশাপ’ ভেবে মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের, খুনের দায়িত্ব পান ‘মা’!-‘আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ফের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ আধার ঘিরে-গণশক্তি

শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত

গাজা যুদ্ধ আর বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংঘাত-এই দুটি খবরই আজকের বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় প্রধান খবর হিসেবে দেখে গেছে।

শুরুতেই গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে নজর দেওয়া যাক। প্রথম আলো, যুগান্তরসহ প্রায় সব দৈনিকের খবরে লেখা হয়েছে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ বলিভিয়া ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছে। ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলার কারণে বলিভিয়া দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। গাজায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজা যেন শিশুদের জন্য মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে। গাজায় যুদ্ধ বিরাতির আহবান জানিয়েছে তারা তবে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কোনো সাড়া  নেই তাতে। প্রথম আলোর খবরে লেখা হয়েছে, ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সংঘাত: যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে ব্যাপক সংঘাত সহিংসতা।এর একটি চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে ২৮ অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশে পুলিশি তাণ্ডব-ও দলটির নেতাকর্মীদের সাথে নিরাপত্তাবাহিনীর ভয়াবহ সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। যেখাানে বিএনপির কর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ নিহত হয়েছেন কয়েকজন আহত হাজার। তারপর বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর হরতাল এবং বর্তমানে অবরোধ কর্মসূচি চলছে। সরকার দাবি করছে এসবের জন্য বিএনপি দায়ী তাদের পরিকল্পনা তবে বিএনপির বক্তব্য এটি সরকারের পূর্ব নীল নকশা। পুলিশ তাদের মহাসমাবেশে পরিকল্পিতভাবে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে পণ্ড করেছে এবং হত্যা করেছে। এ বিষয়ে ইত্তেফাকের শিরোনামআওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধ বুধবার (১ নভেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথের অবরোধ চলবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জে বিক্ষোভ-ভাঙচুর, আড়াইহাজারে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও। এদিকে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যুগান্তরের খবরে লেখা হয়েছে, বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে দূরপাল্লার বাসে আগুন।কুলিয়াচরে পুলিশের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছে। তবে প্রায় সব দৈনিকে লেখা হয়েছে, নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,সময়মতোই নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার সরকারের অধীনেই।

বাইডেন-ট্রাম্প সংলাপ প্রসঙ্গে যা বলল যুক্তরাষ্ট্র-যুগান্তরের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের নির্বাচনি পরিবেশকে খুব ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয়রা বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে এবং বর্তমান শাসক শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন। আমেরিকা কি জানে— ভারতীয় প্রভাবের কারণে আওয়ামী লীগ ও হাসিনার প্রতি ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে? এমন অবস্থায় বাংলাদেশি জনগণের ভোটাধিকার থাকা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হওয়া পুরোপুরি অসম্ভব।পরে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধীদের মধ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। তার এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংলাপ করেন, তবে তিনি বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ করবেন। মূলত শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো সংলাপ করতে অস্বীকার করেছেন। তার প্রশাসন বিরোধীদের ওপর খুব আক্রমণ করছে। আজ পুলিশের হাতে বিরোধীদলীয় দুই নেতা নিহত হয়েছেন এবং ইতোমধ্যে ঢাকায় বিরোধী দুই শীর্ষ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিনই তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে, তা হলে আপনি কীভাবে বিশ্বাস করবেন যে, বাংলাদেশে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক (অংশগ্রহণমূলক) হবে? এসব প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আপনার প্রথম প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই— যেমনটি আমি আগেই বলেছি, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব সবার। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সব রাজনৈতিক দল, ভোটার, সরকার, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার দায়িত্ব রয়েছে। আর আমরা বাংলাদেশে সেটিই চাই, যা বাংলাদেশের জনগণ চায়। বাংলাদেশে যেন শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।

 ওএইচসিএইচআরের আহ্বান

রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করুন-যুগান্তরের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে একাধিক সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর (ওএইচসিএইচআর)। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা রোধে সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করতে  রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।

এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত 

জনগণের টাকায় ক্ষতিপূরণ দিলে বৃহত্তম আন্দোলন’, সিঙ্গুর নিয়ে হুঁশিয়ারি শুভেন্দুর, পালটা কুণালের-সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, ন্যানো বিদায়ের দেড় দশক বাদে রাজ্য রাজনীতিকে ফের অদ্ভুত এক সন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করিয়েছে সিঙ্গুর। এবার ইস্যু টাটা মোটরসকে (Tata Motors) জরিমানা দেওয়া। যা নিয়ে প্রত্যাশিতভাবেই শুরু হয়ে গেল শাসক-বিরোধী তরজা।সোমবার আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিঙ্গুরে কারখানা বন্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭৬৬ কোটি টাকা টাটা মোটরসকে দেবে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি মামলার খরচ স্বরূপ টাটা গোষ্ঠীকে আরও ১ কোটি টাকা দিতে হবে। সব মিলিয়ে রাজ্যের কোষাগার থেকে ৭৬৭ কোটি টাকা পাবে টাটা গোষ্ঠী (Tata Group)। যা সিঙ্গুর মামলায় টাটা গোষ্ঠীর বড় জয় হিসাবে ধরা হচ্ছে। যদিও এই ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পথ এখনও খোলা আছে। কিন্তু এখন থেকেই তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা।বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, এই ক্ষতিপূরণের টাকা দিতে হলেও রাজ্যের কোষাগার থেকে দেওয়া যাবে না। জনগণের করের টাকায় তাঁর সাফ কথা, “জনগণের করের টাকায় সিঙ্গুর মামলায় টাটাদের ক্ষতিপূরণ দিলে বৃহত্তম আন্দোলন হবে। দলের তহবিল থেকে টাটাদের ক্ষতিপূরণ দিক তৃণমূল।

ফের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ আধার ঘিরে-গণশক্তি

বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, ৮১.৫ কোটি ভারতীয়’র কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট ফাঁস হয়ে গিয়েছে খোলা বাজারে। মঙ্গলবার ডার্ক ওয়েবে একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায়। সেখানে জনৈক ব্যক্তি ৮১.৫ কোটি ভারতীয়’র কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট, তাঁদের আধার কার্ডের নম্বর, পাসপোর্টের নম্বর, ফোন নম্বর সহ যাবতীয় নথি বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। এই ঘটনা সামনে আসায় ব্যপক সমালোচনার মুখে পড়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। কারণ, এই গোপনীয় তথ্য তাঁদের হেফাজতে রাখা ছিল। 

যদিও এই প্রথম নয়। আধার ঘিরে তথ্য চুরির অভিযোগ এর আগেও একাধিকবার উঠেছে।প্রসঙ্গত, ওয়েব দুনিয়ার চোরা কারবারের বাজার হল ডার্কওয়েব।এই তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর সামনে আসায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র।

জন্মের সঙ্গেই আসে মৃত্যু! ‘অভিশাপ’ ভেবে মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের, খুনের দায়িত্ব পান ‘মা’!-আনন্দবাজার পত্রিকার এ খবরে লেখা হয়েছে, কেন বিয়ে হয় না রাজস্থানের এই ছ’টি গ্রামের পুরুষদের? নেপথ্যে লুকিয়ে কোন ‘অভিশাপের’ কাহিনি? কি সেই কাহিনি!

জন্মের পরই মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের

রাজস্থানের জয়সলমের এবং বারমের জেলা। এই দুই জেলায় এমন কয়েকটি গ্রাম রয়েছে, যেখানে জন্ম এবং মৃত্যু আসে একই সঙ্গে। জন্মের পরই মেরে ফেলা হয় কন্যাসন্তানদের।বহু বছর ধরে এই গ্রামগুলিতে কন্যাসন্তানদের অভিশাপ বলে মনে করা হয়। বহু পরিবারে কন্যাসন্তান জন্ম নিলেই তাকে মেরে ফেলার রীতি রয়েছে। এই প্রথায় বিশ্বাসী নন, এমন স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে অবগত। পুলিশও জানে। সরকারের তরফে বহু বার এই ঘটনা আটকানোর চেষ্টা করেও বিশেষ লাভ হয়নি।যদিও বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, সম্প্রতি সদ্যোজাত কন্যাসন্তানদের মেরে ফেলার ঘটনা কমেছে। তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।

সংবাদমাধ্যম ‘ক্রাইম তক’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জয়সলমের এবং বারমের জেলায় এমন ছ’টি গ্রাম রয়েছে, যেখানে কন্যাসন্তান জন্মের হার খুবই কম।এই ছ’টি গ্রাম—দেও়ড়া, তেজমালতা, মোরা, রাসলা, ডোগরি এবং মোরান। যার মধ্যে এমন এক গ্রামও রয়েছে যে গ্রামে মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১১০ বছর পর।ক্রাইম তক’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গ্রামের নাম দেওড়া। ১১০ বছর পর সেই গ্রামে কোনও মেয়ের বিয়ে হয় ২০১৯ সালে। বর, বরকন্দাজ নিয়ে বরযাত্রী সেই গ্রামে ঢুকেছিল ১১০ বছর পর।

দেওড়া গ্রামের এক সময়ের প্রধান ছিলেন ইন্দ্র সিংহ। তাঁর ছেলে ছিলেন যশবন্ত সিংহ। বছর পঁচিশেক আগে যশবন্তের স্ত্রী এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু মেয়েকে বাঁচাতে যশবন্তের স্ত্রী বিষয়টি পরিবারের সকলের থেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তাঁর ভয় ছিল, কন্যাসন্তান জন্ম নিয়েছে জানতে পারলে সেই ছোট শিশুটিকে মেরে ফেলা হবে। ছেলেদের পোশাক পরিয়ে মেয়েকে বড় করা শুরু করেন তিনি।কিছু দিন পর মেয়েকে নানিহালে এক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দেন যশবন্তের স্ত্রী। কিন্তু বিষয়টি বেশি দিন চাপা থাকেনি। কন্যার বিষয়ে জেনে যায় যশবন্তের পরিবার।তবে তত দিনে সেই কন্যা অনেকটাই বড়। স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেছে সে। তত দিনে যশবন্ত এবং ইন্দ্রের চিন্তাভাবনাতেও বদল এসেছে। মেয়েকে খুশি হয়ে মেনে নেন তাঁরা। ঠিক করেন, মেয়েকে ভাল ভাবেই লালনপালন করবেন তাঁরা।নানিহাল থেকেই পড়াশোনা চালাতে থাকে যশবন্তের কন্যা। উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর পরিবারের তরফে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মেয়ের বিয়ে নানিহাল থেকে নয়, দেওড়া থেকে হবে।জয়সলমেরের বিভিন্ন এলাকায় কোনও বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হলে বাড়ির বাইরে এক বিশেষ নকশাযুক্ত তিনকোনা কাঠামো লাগানোর চল রয়েছে। যা দেখে বোঝা যায় যে বাড়িতে মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। যশবন্তের মেয়ের বিয়েতে দেওড়া গ্রামে সেই নকশা লাগানো হয়েছিল ১১০ বছর পর। বর্তমানে যশবন্ত-কন্যা স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বাকি সদস্যদের সঙ্গে কোটায় রয়েছেন।

Image Caption

তবে দেওড়ার সব মেয়ে যশবন্ত-কন্যার মতো ভাগ্যবতী নয়। অনেক কন্যাসন্তানকেই নাকি পৃথিবীর আলো দেখার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেরে ফেলা হয়। একই প্রথা প্রচলিত রয়েছে তেজমালতা, মোরা, রাসলা, ডোগরি এবং মোরান গ্রামেও।কিন্তু কেন এমনটা করা হয় রাজস্থানের ওই গ্রামগুলিতে? প্রচলিত রয়েছে, মুঘলরা রাজস্থানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আধিপত্য বিস্তারের পর মুঘল সেনারা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন গ্রাম থেকে রাজপুত মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করত। বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হত তাদের।মূলত রাজপুতদের অপমান করতেই নাকি এই জুলুম চালাত মুঘলরা। আর তাই বাড়ির মেয়েদের মুঘল সেনাদের লালসা এবং অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতেই নাকি জন্মের পরে কন্যাসন্তান মেরে ফেলার প্রথা চালু হয় রাজস্থানের বহু গ্রামে।মুঘলদের পর ব্রিটিশরা এসেছে। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনও হয়েছে। তবে কন্যাসন্তানকে মেরে ফেলার এই প্রথা বন্ধ হয়নি। কেবল মেরে ফেলার কারণ বদলেছে।সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেয়েদের পড়াশোনা এবং বিয়েতে খরচ বাঁচানোর জন্যই নাকি এখন জন্মের পর তাদের মেরে ফেলা হয় রাজস্থানের বহু গ্রামে। সেই প্রথা এখনও প্রচলিত বহু পরিবারে।কিন্তু কী ভাবে কন্যাসন্তানদের মেরে ফেলার পরও শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান রাজস্থানের ওই গ্রামগুলির বিভিন্ন পরিবার? সেই গ্রামগুলিতে বেশির ভাগ সময়ই সন্তানসম্ভবাদের প্রসবের জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় না। গ্রামের বয়স্ক মহিলাদের সাহায্যেই সন্তান জন্ম নেয়। এই মহিলাদের ‘দাই মা’ বলে। সেই দাই মাকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, কন্যাসন্তান জন্ম নিলে যেন তাকে মেরে ফেলা হয়। দাই মা রাজি না হলে সন্তানকে মেরে ফেলার দায়িত্ব এসে পড়ে জন্মদাত্রীর উপরেই।জন্মের ১-২ ঘণ্টার মধ্যেই কন্যাসন্তানটিকে মেরে ফেলা হয়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ভারী বালিশ বা মাটির ছোট বস্তা বাচ্চাটির মুখের উপর রেখে দেওয়া হয়। যাতে মনে হয়, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু হয়েছে সন্তানের।এ ছাড়াও নবজাতিকাদের আফিম খাইয়ে দেওয়া, মুখে এবং নাকে বালি বা তুলো ঢুকিয়ে মেরে ফেলারও প্রথা রয়েছে। মারার পর রাজস্থানের মরুভূমির বালির নীচে ওই শিশুদের দেহ চাপা দিয়ে দেওয়া হয়।তবে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর সরকার উদ্যোগী হয়েছে। প্রশাসনের দাবি, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই বদলেছে। তবে পুরোপুরি ভাবে এই প্রথা বন্ধ হয়নি বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি।

এই প্রথার প্রভাব পড়ছে গ্রামের পুরুষদের উপরেও। দেওড়া-সহ ওই ছ’গ্রামের বহু পুরুষ অবিবাহিত থেকে যান। বিয়ের জন্য মেয়েই খুঁজে পাননি তাঁরা। গ্রামে কন্যাসন্তান মেরে ফেলার রীতির কারণেও অনেক পরিবার এই গ্রামগুলিতে মেয়েদের বিয়ে দিতে রাজি হন না।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ১

 

ট্যাগ