ডিসেম্বর ০৪, ২০২৩ ১৮:০১ Asia/Dhaka
  • ঘটনার নেপথ্যে (পর্ব-১০)

গত আসরে আমরা ইরানের নিরাপত্তা নিয়ে পাশ্চাত্যের প্রচারণা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আজ আমরা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরনের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর অনন্য সাধারণ নেতৃত্ব সম্পর্কে খানিকটা কথা বলব। আমরা একথা তুলে ধরার চেষ্টা করব যে, একমেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা ভেঙেচুড়ে পৃথিবীজুড়ে এখন বহু মেরুকেন্দ্রীক যে বিশ্বব্যবস্থা গড়ে উঠছে সে সম্পর্কে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত আপনাদের সঙ্গ পাবো বলে আশা রাখছি।

তিন দশক আগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় তখন পশ্চিমা চিন্তাবিদরা গর্ব করে একথা বলে বেড়াতেন যে, এখন থেকে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালু হবে এবং তা ঠেকিয়ে রাখার মতো কোনো শক্তি পৃথিবীতে নেই। কিন্তু তাদের সে ভবিষ্যদ্বাণী ব্যর্থ করে দিয়ে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতি এমনভাবে পরিবর্তিত হয়েছে যে, এক মেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা এখন বহু মেরুকেন্দ্রিকতার দিকে ধাবিত হচ্ছে যা সবার কাছে স্পষ্ট। আজ বিশ্ব অঙ্গনে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এখন থেকে এক দশক আগে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমরা এখন ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছি। বিশ্বে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়েছে যার ফলাফল আস্তে আস্তে প্রকাশ পেতে শুরু করবে।  আমাদেরকে এই পরিবর্তনের ওপর গভীর নজর রাখতে হবে এবং তাতে ভূমিকা পালন করতে হবে।”

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান তার সর্বোচ্চ নেতার সে ভবিষ্যদ্বাণী মেনে চলেছে বলেই আজ পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে বহু মেরুকেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থার কথা বলা হচ্ছে ইরান তার একটি মেরু হিসেবে গণ্য হতে পেরেছে।  ইরান এখন পাশ্চাত্যের চিন্তাগত আদর্শ ও সামরিক শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে একবিংশ শতাব্দির মানুষের জন্য নতুন কিছু বক্তব্য পেশ করতে পারছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন স্থায়ী প্রতিনিধি জন বোল্টন জাতিসংঘে দেয়া ভাষণে দাবি করেছিলেন, ইরানের ইসলামি বিপ্লবকে ৪০ বছর পূর্তি পর্যন্ত যেতে দেওয়া উচিত হবে না। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকীতে পরবর্তী ৪০ বছরের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।  সর্বোচ্চ নেতার এ সংক্রান্ত ভাষণের একাংশে বলা হয়েছে:

ইরানি জাতির জমকালো বিপ্লব ছিল আধুনিক যুগের সবচেয়ে বড় ও সবচেয়ে বেশি জনসংশ্লিষ্ট বিপ্লব। এটি একমাত্র বিপ্লব যা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে কোনো আপোষ করা ছাড়াই চল্লিশতম বর্ষপূর্তি উদযাপন করেছে এবং শত্রুর সব ষড়যন্ত্র নস্যাত করে পরবর্তী চল্লিশ বছরে পদার্পণ করেছে। ইরানের যে প্রজন্ম বিপ্লব করেছে এবং বর্তমানের যে প্রজন্ম পরবর্তী চল্লিশ বছরে বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প করেছে তাদের সবাইকে তিনি ধন্যবাদ জানান।

ইসলামি বিপ্লবের মহান নেতা ইমাম খোমেনী (রহ.) এই বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানের বুকে একটি ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর অন্তর্ধানের পর ইসলামি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী নয়া ইসলামি সভ্যতা গড়ে তোলাকে এই

।  এক মেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থাকে সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ধীরে ধীরে আরো বেশি প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। আপনারা প্রায়ই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদদের মুখে এখন একথা বলতে শুনবেন যে, তারা এক মেরুকেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থা পছন্দ করেন না। এটি কোনো সাধারণ ঘটনা নয় বরং এটি একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। আর এই পরিবর্তনে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারি। মুসলিম বিশ্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে; তবে এক শর্তে- নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা। সেইসঙ্গে আমেরিকা, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তাদের মিত্রদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

২০০৮ সালে আমেরিকার কার্নেগি ইনস্টিটিউট থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্পর্কে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এটির শুরুতে বলা হয়: “বিশ্বে খুব কম রাজনীতিবিদ আছেন যারা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর মতো বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে এতো গভীর জ্ঞান রাখেন; অথচ একইসঙ্গে এমন নেতা খুব কমই পাওয়া যাবে যিনি বিশ্ববাসীর সামনে তাঁর মতো এতটা অপরিচিত রয়ে গেছেন।” পশ্চিমা দেশগুলোর বহু ইনস্টিটিউট ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইরানের সর্বোচ্চ নেতার সহজ-সরল জীবনযাপন নিয়েও গবেষণা করেছে। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বের অন্য কোনো রাজনীতিবিদ তো দূরের কথা বহু ধর্মীয় নেতাও তাঁর মতো সাধাসিধে জীবনযাপন করেন না। বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদরা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এমন একটি কক্ষে প্রবেশ করেন যেটি কোনো প্রাসাদ নয় এবং যাতে কোনো দামী কার্পেটও বিছানো নেই। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সাধারণ মানের চেয়ার ও সোফাসেটে বসে কথা বলেন।

২০২২ সালে ইরানে যে দাঙ্গা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল তার একটি লক্ষ্য ছিল ইরানের বেলায়েতে ফকীহ শাসনব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা। বিশ্লেষকদের মতে, মুসলিম বিশ্বের জন্য পশ্চিমাদের মতো করে নেতা তৈরি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই পাশ্চাত্যের গণমাধ্যমগুলো ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।  এক পাক্ষিক বিশ্বব্যবস্থা ও সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী নীতি প্রণয়নে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর সক্ষমতা এবং তার পক্ষ থেকে ইহুদিবাদীদের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক পশ্চিমাদের আতঙ্কিত করে তুলেছে।

তো শ্রোতাবন্ধুরা, এখানেই শেষ করতে হচ্ছে ঘটনার নেপথ্যের আজকের আয়োজন। যারা সঙ্গ দিলেন তাদের প্রত্যেককে অসংখ্য ধন্যবাদ।

বিপ্লবের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন। তাঁর মতে, ইসলামি সভ্যতার অর্থ হলো ইসলাম থেকে মতাদর্শ গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধ মুসলিম বিশ্বের ছায়াতলে তা বাস্তবায়ন করা।

মুসলিম বিশ্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠা একটি বিশাল কাজ।  মুসলিম জাতিগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হামলা করা থেকে বিরত থেকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। অথবা তারও ঊর্ধ্বে উঠে মুসলমানদের অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আত্মরক্ষার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করার মাধ্যমেও নিজেদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আবার জ্ঞান-বিজ্ঞান ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে উন্নতি করার কাজে পরস্পরকে সাহায্য করার মাধ্যমে একটি নয়া ইসলামি সভ্যতা গড়ে তুলেও মুসলিম বিশ্বে ঐক্য ও সংহতি শক্তিশালী করা সম্ভব। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এই তৃতীয় ধরনের ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চান।  ইরানে ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ঐক্য সপ্তাহের সম্মেলনে সর্বোচ্চ নেতা তাঁর ভাষণে বলেন:“বর্তমানে প্রতিদিনই একথা আগের চেয়ে আরো বেশি স্পষ্ট হচ্ছে যে, বিশ্বের রাজনৈতিক ভারসাম্য প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে।

 

পার্সটুডে/এমএমআই/ বাবুল আখতার/ ৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ