আরবাইনের মহাসমাবেশের বার্তা: শিয়া-সুন্নি মুসলিম ঐক্য ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি
https://parstoday.ir/bn/news/world-i151234
পার্স টুডে - বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জনপ্রিয় সমাবেশ আরবাইন আজ কেবল একটি ধর্মীয় মহাসমাবেশই নয়, এই মহতী সমাবেশ আজ ইসলামের পতাকাতলে সমবেত জাতিগুলোর আদর্শিক শক্তি, সম্মিলিত পরিচয় এবং সংহতি প্রদর্শনের এক মহামঞ্চ।
(last modified 2025-08-17T15:08:05+00:00 )
আগস্ট ১৭, ২০২৫ ১৯:৩৩ Asia/Dhaka
  • আরবাইনের বার্তা: শিয়া-সুন্নি মুসলিম ঐক্য ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি
    আরবাইনের বার্তা: শিয়া-সুন্নি মুসলিম ঐক্য ও গাজাবাসীর সঙ্গে সংহতি

পার্স টুডে - বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় ও জনপ্রিয় সমাবেশ আরবাইন আজ কেবল একটি ধর্মীয় মহাসমাবেশই নয়, এই মহতী সমাবেশ আজ ইসলামের পতাকাতলে সমবেত জাতিগুলোর আদর্শিক শক্তি, সম্মিলিত পরিচয় এবং সংহতি প্রদর্শনের এক মহামঞ্চ।

আরবাইন এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে শিয়া ও সুন্নি মুসলমানরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বিশ্বকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, নিপীড়িতদের, বিশেষ করে গাজার জনগণের প্রতি সমর্থন এবং ইসলামী উম্মাহর ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। ইরানের কুর্দিস্তান এবং সিস্তান ও বেলুচিস্তানের সুন্নিদের তৈরি করা জিয়ারতকারী-সেবা-কেন্দ্রগুলো থেকে শুরু করে কারবালায় নাইজেরিয়া ও পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতি থেকে এটা স্পষ্ট যে আরবাইন হৃদয়ের বন্ধন, শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং আশুরার আন্দোলনের ধারাবাহিকতার স্পষ্ট প্রকাশ।

আরবাইন: আদর্শিক শক্তির ও সমষ্টিগত পরিচিতির মহড়া

আরবাইনের মহাসমাবেশের বার্তা কোটি কোটি মানুষের ধর্মীয় মাত্রা ছাড়াও ভূ-রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক তাৎপর্য তুলে ধরছে। এই অনুষ্ঠান শিয়া মুসলমানদের আদর্শিক বা নরম শক্তিকে প্রসারিত করেছে, শত্রুর নেতিবাচক প্রচারণাকে করেছে বানচাল এবং মুসলমানদের মধ্যে প্রতিরোধ ও নিপীড়ন বিরোধী পরিচয়কে করেছে শক্তিশালী। এই বছর ইসলামী বিশ্বের সুন্নি পণ্ডিত ও চিন্তাবিদরা জোর দিয়ে বলেছেন যে আরবাইনের মূল বার্তা হল গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি ঐক্য এবং সমর্থন। এই অনুষ্ঠানে শিয়া ও সুন্নিদের যৌথ উপস্থিতি ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংহতির বিশ্বব্যাপী বার্তা।

কুর্দিস্তান: আরবাইনের তীর্থযাত্রীদের সেবায় শিয়া ও সুন্নি ঐক্যের বহিঃপ্রকাশ

পশ্চিম ইরানের কুর্দিস্তান প্রদেশে এই বছরের আরবাইন ছিল ধর্মীয় সংহতি, সামাজিক ঐক্য এবং জিহাদি সেবার এক বিরল দৃশ্যপট- এ ছিল এমন একটি প্রকাশ যা কেবল ইরানের স্থায়ী নিরাপত্তাই প্রদর্শন করেনি, একইসঙ্গে সমগ্র বিশ্বের কাছে ঐক্য ও প্রতিরোধের বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে। 

কুর্দিস্তানের আরবাইন ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে আরবাইন মিছিল কেবল একটি আধ্যাত্মিক আন্দোলন নয়, একইসঙ্গে এটি দেশের টেকসই নিরাপত্তা জোরদার করার একটি হাতিয়ারও। এই প্রদেশে ৭৬টি জিয়ারতকারী-সেবা-কেন্দ্রগ প্রতিষ্ঠা  প্রমাণ করেছে যে শত্রুরা জনগণের ঐক্যের আসল চেহারা কলঙ্কিত করতে পারে না।

কুর্দিস্তান প্রদেশে জিয়ারতকারীদের সেবাদানের আয়োজনের বেশিরভাগ দায়িত্ব সুন্নি ভাইরা কাঁধে নিয়েছেন যেখানে সুন্নি ইরানি-কুর্দি মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ; তাদের সেবা-কেন্দ্রগুলো ভালোবাসা ও আন্তরিকতার সাথে পরিচালিত হয়েছে, যা বিশ্বের কাছে শিয়া ও সুন্নিদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে।

সিস্তান ও বেলুচিস্তান; সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য

পূর্ব ইরানে শিয়া ও সুন্নিদের ঐক্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর চক্রান্তের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশের উভয় মাজহাবের আলেমরা জোর দিয়ে বলেছেন যে নিরাপত্তা ইরানি জাতির লাল রেখা এবং এর বিরুদ্ধে যেকোনো পদক্ষেপ হবে শত্রুদেরকে সহায়তা দান। 

আরবাইন ঐক্যের বার্তা; গাজার জনগণের সাথে মুসলিম উম্মাহর সংহতি

এই বছরের কারবালায় আরবাইন মার্চের অবকাশে একজন নাইজেরিয়ান বুদ্ধিজীবী এই কোটি কোটি মানুষের সমাবেশকে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও গাজার নির্যাতিত জনগণের প্রতি সহায়তার বার্তা বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন: ইমাম হুসাইন (আ.) হলেন সকল মুসলমানের অভিন্ন সম্পদ। আদম বেলো", যিনি দ্বিতীয়বারের মতো আরবাইনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, একজন নাইজেরিয়ান বিচারক এবং বুদ্ধিজীবী, তিনি বলেছেন: "এই বিশাল সমাবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হল ফিলিস্তিনের সমর্থনে মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি।" তিনি আরও বলেন: "ইমাম হুসাইন (আ.) শিয়া ও সুন্নি উভয় মাজহাবসহ সকল মুসলমানের, এবং আরবাইনের বার্তা সর্বজনীন যা ধর্মীয় সীমারেখার উর্ধ্বে।"

আরবাইনে হুসাইনি: প্রতিরোধ ও মুসলিম ঐক্যের বৈশ্বিক পতাকা

সিন্ধু প্রদেশে মহররমের এক শোক অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে একজন পাকিস্তানি আলেম আরবাইন হুসাইনিকে নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং ইসলামী জাতির সংহতির বিশ্বব্যাপী প্রতীক বলে মনে করেন।  তিনি জোর দিয়ে বলেছেন: এই আন্দোলন আশুরার ধারাবাহিকতা এবং বিশ্বজুড়ে মুসলিম ঐক্যের পতাকা।

মজলিস-ই-ওয়াহদাত-ই-মুসলিমীন পাকিস্তানের একজন সিনিয়র সদস্য হুজ্জাতুল ইসলাম"মাকসুদ আলী দোমাকি" বলেছেন: "আরবাইন কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, একইসঙ্গে তা হুসাইননি নিদর্শন ও আচার-অনুষ্ঠানকে সম্মান করার জন্য সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সমাবেশ, যা ইয়াজিদিদের ক্ষুব্ধ করে এবং মহানবীর (সা) আহলুল বাইত (আস) এর প্রেমিকদের উৎসাহিত করে।
আরবাইনের কুরআনি ও ঐতিহাসিক মূলের কথা উল্লেখ করে এই পাকিস্তানি পণ্ডিত বলেন: "এই ঐতিহ্য ইমাম সাজ্জাদ (আ.) ও হযরত জয়নাব (সা.আ.)-এর সময়ে শুরু হয়েছিল এবং আজ, সারা বিশ্ব থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ কারবালায় উপস্থিত হয়ে মহান আল্লাহ এবং মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইত (আ.)-এর প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা উচ্চকণ্ঠে তুলে ধরেছন।" #
 

পার্স টুডে/এমএএইচ/১৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।