ডিসেম্বর ২৭, ২০২৩ ১৭:২৬ Asia/Dhaka
  • সূরা তালাক: ১-৭ (পর্ব-১)

আপনাদের হয়তো মনে আছে গত আসরে আমরা সূরা তাগ্বাবুনের আলোচনা শেষ করেছি। কাজেই আজ থেকে আমরা এর পরবর্তী সূরা অর্থাৎ সূরা তালাকের আলোচনা শুরু করব।

মদীনায় অবতীর্ণ এই সূরায় ১২টি আয়াত রয়েছে। এর মধ্যে এক থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত আয়াতে তালাক এবং এর আহকাম বা বিধিবিধান বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর আট নম্বর আয়াতের পর থেকে দু’টি ভিন্ন দলের পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে: এদের একদল আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাঁর শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হয়েছে। অপর দল ঈমান আনার পাশাপাশি নেক আমল করে ঐশী পুরস্কার লাভের যোগ্য হয়েছে। প্রথমেই এই সূরার ১ থেকে ৩ নম্বর পর্যন্ত আয়াতের তিলাওয়াত ও তর্জমা শোনা যাক:

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَطَلِّقُوهُنَّ لِعِدَّتِهِنَّ وَأَحْصُوا الْعِدَّةَ وَاتَّقُوا اللَّهَ رَبَّكُمْ لَا تُخْرِجُوهُنَّ مِنْ بُيُوتِهِنَّ وَلَا يَخْرُجْنَ إِلَّا أَنْ يَأْتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ وَمَنْ يَتَعَدَّ حُدُودَ اللَّهِ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ لَا تَدْرِي لَعَلَّ اللَّهَ يُحْدِثُ بَعْدَ ذَلِكَ أَمْرًا (1) فَإِذَا بَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ فَارِقُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ وَأَشْهِدُوا ذَوَيْ عَدْلٍ مِنْكُمْ وَأَقِيمُوا الشَّهَادَةَ لِلَّهِ ذَلِكُمْ يُوعَظُ بِهِ مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا (3)

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।”

হে নবী! [আপনি বলে দিন] তোমরা যখন তোমাদের স্ত্রীগণকে তালাক দিতে ইচ্ছে কর তাদেরকে তালাক দিও ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং তোমরা ইদ্দতের হিসেব রেখো। আর তোমাদের রব আল্লাহকে ভয় করে চলো। তোমরা [ইদ্দতের সময়] তাদেরকে তাদের ঘরবাড়ি থেকে বহিস্কার করো না এবং তারাও বের হবে না, যদি না তারা লিপ্ত হয় স্পষ্ট অশ্লীলতায় [যদি হয় তাহলে তাদেরকে বহিষ্কার করা জায়েয হবে]। আর এই [নির্দেশগুলো] আল্লাহর নির্ধারিত সীমা; যে আল্লাহর সীমা লঙ্ঘন করে সে নিজেরই উপর অত্যাচার করে। আপনি জানেন না, আল্লাহ হয়ত এর পর কোন উপায় করে দেবেন [যাতে তাদের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে যায়]।” (৬৫:১)

“অতঃপর তাদের ইদ্দত পূরণের কাল আসন্ন হলে তোমরা হয় ন্যায়ানুগ প‎ন্থায় তাদেরকে রেখে দেবে, না হয় তাদেরকে [মোহরানাসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করে] ন্যায়ানুগ প‎ন্থায় পরিত্যাগ করবে: এবং [তালাকের সময়] তোমাদের মধ্য থেকে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে; আর তোমরা আল্লাহ্‌র জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। এ দ্বারা তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। আর যে কেউ আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য [যেকোনো সমস্যা থেকে উত্তরণের] পথ করে দেন।” (৬৫:২)

“এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিজিক দান করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছে পূরণ করবেনই; অবশ্যই আল্লাহ সবকিছুর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিমাপ স্থির করেছেন।” (৬৫:৩)

বিয়ে করে পরিবার গঠন করার ওপর ইসলাম অনেক বেশি গুরুত্ব আরোপ করেছে। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে বিশেষ করে সূরা নিসায় এ সংক্রান্ত হুকুম-আহকাম বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু কখনও কখনও স্বামী বা স্ত্রীর যেকোনো একজনের কারণে অপরজনের জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে এবং তাদের পক্ষে আর দাম্পত্য জীবন অব্যাহত রাখা সম্ভব হয় না। এ কারণে এ ধরনের দম্পতিকে কিছু শর্তসাপেক্ষে তালাকের মাধ্যমে পরস্পরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছে ইসলাম। তালাকের ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রীর যথাযথ সম্মান ও অধিকার রক্ষা করা হয়েছে।

এই তিন আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সা.)কে উদ্দেশ করে তালাকের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে যাতে মুসলমানরা এ সংক্রান্ত বিধান সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার গুরুত্ব উপলব্ধি করে। প্রথম আয়াতে বলা হচ্ছে: যদি তোমরা তোমাদের স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও তাহলে এমন সময় তালাক দিতে হবে যখন তার মাসিক ঋতুস্রাব শেষ হবে এবং এরপর তার সঙ্গে আর কোনো মেলামেশা করা যাবে না। এ সময় তালাক দেওয়া হলে পরপর তিন মাস ঋতুচক্র বা ইদ্দত সম্পন্ন হওয়ার মাধ্যমে তালাকটি কার্যকর হবে। 

এই তিন মাস সময়ে এই নারীর বাসস্থান ও খোরপোষের ব্যবস্থা তার স্বামীকেই করতে হবে। এ সময়ে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার অধিকার তার স্বামীর নেই। আর নারীও ভরণপোষণ ঠিকমতো পেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অধিকার রাখবে না।

মানুষ যেহেতু প্রচণ্ড রাগের মাথায় হতবুদ্ধি অবস্থায় তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তাই এই তিন মাস সময়ে মেলামেশাহীন অবস্থায় একই ঘরে থাকার বিধান এজন্য দেওয়া হয়েছে যে, তাদের ক্রোধ প্রশমিত হলে তারা যেন পরস্পরকে নতুন করে চিনতে ও নিজেদের মধ্যে সন্ধি করার সুযোগ পায়। অবশ্য তিন মাসের ইদ্দত পালনের সময় শর্ত হচ্ছে নারী যেন দুর্ব্যবহার ও কুৎসিত বাক্য প্রয়োগের মাধ্যমে তার স্বামীর জীবনকে অতিষ্ট করে না তোলে। অথবা স্ত্রী যেন কোনো অশ্লীল কাজ করে না বসে।

পরের আয়াতে বলা হচ্ছে, তিন মাসের ইদ্দত পালন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তালাকের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যদি তোমরা তালাকের সিদ্ধান্তে অটল থাকো তাহলে তা সর্বোত্তম পন্থায় হতে হবে। স্ত্রীর সঙ্গে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার করা বা কটুকথা বলা যাবে না এবং শরিয়ত তাকে মোহরানাসহ যতটুকু অধিকার দিয়েছে তা পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করে দিতে হবে।

তালাকের সময় স্বামীর একথা মনে রাখতে হবে যে, তারা যদি আল্লাহ প্রদত্ত সীমারেখা মেনে চলে এবং যেকোনো ধরনের দুর্ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের ভবিষ্যতের জন্য এমন উত্তম ব্যবস্থা করে দেবেন যা তাদের কল্পনাও ছিল না। এটি হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার স্থায়ী বিধান। যে কেউ কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার ওপর তাওয়াক্কুল করবে ও তাঁকে ভয় করে চলবে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যাবেন। তার জন্য তার তাক্বদির বা সুনির্দিষ্ট ভাগ্যলিপি অনুযায়ী সর্বোত্তম জীবনোপকরণ দান করবেন।

এই তিন আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে:

১- ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বিষয়। কাজেই কোনো দম্পতি পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আলাদা হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কয়েক মাস সময় প্রয়োজন। তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে পুনরায় দাম্পত্য জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য এই সময়টিকে তাদের জন্য সুযোগ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

২- যদি শেষ পর্যন্ত ইদ্দতকাল পার হয়ে যাওয়ার পরও তালাক হয়েই যায় তাহলে তোমরা জীবনের ব্যাপারে হতাশ হবে না বরং আল্লাহর ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী থাকবে।

৩- স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের প্রতি ব্যবহার হতে হবে নির্মল ও মধুর। শান্তিপূর্ণ দাম্পত্য জীবন কিংবা ক্ষুব্ধ অবস্থায় পরস্পর আলাদা থাকা উভয় সময়ের ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। এতে করে সন্তানদের ওপর তালাকের কুপ্রভাব কম পড়বে।

৪- তালাকের সময় দুজন ন্যায়পরায়ণ সাক্ষীর উপস্থিতি লাগবে। এই বিধানের মাধ্যমে তালাকের সময় স্বামী ও স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৫- সমস্যাসঙ্কুল জীবনের ঘাত প্রতিঘাত থেকে বাঁচার দু’টি উপায় রয়েছে: ১- তাকওয়া অবলম্বন ও গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। ২- আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল বা পরিপূর্ণ নির্ভরতা। অর্থাৎ, জীবনের যেকোনো সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার দু’টি চাবিকাঠি হচ্ছে তাকওয়া ও তাওয়াক্কুল।

এবারে সূরা তালাকের ৪ ও ৫ নম্বর আয়াতের তেলাওয়াত ও তর্জমা শোনা যাক:

وَاللَّائِي يَئِسْنَ مِنَ الْمَحِيضِ مِنْ نِسَائِكُمْ إِنِ ارْتَبْتُمْ فَعِدَّتُهُنَّ ثَلَاثَةُ أَشْهُرٍ وَاللَّائِي لَمْ يَحِضْنَ وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا (4) ذَلِكَ أَمْرُ اللَّهِ أَنْزَلَهُ إِلَيْكُمْ وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا (5)

“তোমাদের যে সব স্ত্রীর আর ঋতুবতী হওয়ার আশা নেই তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা [তাদের বয়স বা অসুস্থতা কিংবা গর্ভবতী হওয়ার কারণে] সন্দেহ করলে তাদের ইদ্দতকাল হবে তিন মাস এবং যাদের [ঋতুর বয়স হওয়া সত্ত্বেও] এখনো ঋতুবর্তী হয়নি তাদেরও; আর গর্ভবতী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন।” (৬৫:৪)

“এটা আল্লাহর বিধান যা তিনি তোমাদের প্রতি নাযিল করেছেন। আর যে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন করে তিনি তার পাপসমূহ মোচন করে দেন এবং তাকে দেবেন মহাপুরস্কার।” (৬৫:৫)

আগের আয়াতগুলোর ধারাবাহিকতায় তালাকের সময় নারীদের ইদ্দত পালনের সময়কাল বর্ণনা করা হয়েছে। ইদ্দত পালনের দিক দিয়ে নারীদেরকে এখানে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে:

প্রথম ভাগে রয়েছেন এমন নারী যার আর ঋতু হওয়ার আশা নেই। দ্বিতীয় ভাগে রয়েছেন এমন নারী যার বয়স হওয়া সত্ত্বেও অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে এখনও ঋতুবর্তী হননি। এবং তৃতীয় ভাগে রয়েছেন গর্ভবতী নারীরা। প্রথম দুই দলের নারীরা তাদের স্বামীদের মাধ্যমে গর্ভবর্তী হয়েছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। আর তৃতীয় দলের নারীরা গর্ভের সন্তান প্রসব পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন এবং তারপরই তাদের তালাকের বিধান কার্যকর হবে।

সাধারণত বনিবনা না হওয়ার কারণে দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটানো হয় বলে তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়ার সময় পরস্পরের অধিকার রক্ষা না করা এবং পরস্পরের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করার সমূহ আশঙ্কা থাকে। এ কারণে এই পাঁচ আয়াতে তালাকের সময় চারবার তাকওয়া অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে। আগের আয়াতগুলোতে তাকওয়া অবলম্বন করলে রিজিক বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এই দুই আয়াতে তাকওয়া অবলম্বন করলে জীবনের কঠিন কাজগুলো সহজ করে দেওয়ার এবং গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য।

এই দুই আয়াতের কয়েকটি শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে:

১- স্থান-কাল-পাত্রভেদে মানুষের অবস্থা বুঝে তার জন্য বিধান জারি করেছেন মহান আল্লাহ। তিনি সবার জন্য একই বিধান বাধ্যতামূলক করে দেননি।

২- গর্ভে থাকা অবস্থায়ও সন্তান সুনির্দিষ্ট অধিকার সংরক্ষণ করে। কাজেই গর্ভবতী অবস্থায় কোনো নারীকে আবার বিয়ে করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

৩- দাম্পত্য জীবন উপভোগ করা কিংবা তালাকের মাধ্যমে আলাদা হয়ে যাওয়া- এই উভয় সময়ে তাকওয়া অবলম্বন করতে হবে। তাহলে আল্লাহ রিজিক বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি সব কাজ সহজ করে দেবেন।

৪- সবচেয়ে সেরা তওবা হলো তাকওয়া অবলম্বন করা বা আল্লাহকে ভয় করে চলা। কারণ, এর ফলে গোনাহসমূহ মাফ হয়ে যায় এবং সৎকাজের পুরস্কারের পরিমাণ বেড়ে যায়।

এবারে সূরা তালাকের ৬ ও ৭ নম্বর আয়াতের তেলাওয়াত ও তর্জমা শোনা যাক:

أَسْكِنُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ سَكَنْتُمْ مِنْ وُجْدِكُمْ وَلَا تُضَارُّوهُنَّ لِتُضَيِّقُوا عَلَيْهِنَّ وَإِنْ كُنَّ أُولَاتِ حَمْلٍ فَأَنْفِقُوا عَلَيْهِنَّ حَتَّى يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ فَإِنْ أَرْضَعْنَ لَكُمْ فَآَتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ وَأْتَمِرُوا بَيْنَكُمْ بِمَعْرُوفٍ وَإِنْ تَعَاسَرْتُمْ فَسَتُرْضِعُ لَهُ أُخْرَى (6) لِيُنْفِقْ ذُو سَعَةٍ مِنْ سَعَتِهِ وَمَنْ قُدِرَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ فَلْيُنْفِقْ مِمَّا آَتَاهُ اللَّهُ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا مَا آَتَاهَا سَيَجْعَلُ اللَّهُ بَعْدَ عُسْرٍ يُسْرًا (7)

“তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীদেরকে [ইদ্দতকাল শেষ হওয়া পর্যন্ত] তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ ঘরে তোমরা বাস কর সেরূপ ঘরে বাস করতে দেবে; তাদেরকে উত্ত্যক্ত করবে না সংকটে ফেলার জন্য [যাতে তারা তোমাদের গৃহ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়]; আর তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের খরচ বহন করবে। অতঃপর যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে স্তন্য দান করে, তবে তাদেরকে পারিশ্রমিক দেবে এবং [সন্তানের কল্যাণ সম্পর্কে] তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে সমঝোতায় পৌঁছাবে। আর যদি তোমরা [সমঝোতা করতে ব্যর্থ হও] তাহলে অন্য নারী ওই সন্তানকে স্তন্য দান করাবে।” (৬৫:৬)

“সচ্ছল ব্যক্তি তার সচ্ছলতা অনুসারে ব্যয় করবে। আর যার রিযিক সীমিত করা হয়েছে, সে ব্যয় করবে আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তা থেকে [সামর্থ্য অনুযায়ী]। আল্লাহ যাকে যতটা দিয়েছেন তার অতিরিক্ত বোঝা তার উপর চাপান না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কষ্টের পর স্বস্তি দান করবেন।” (৬৫:৭)

এই দুই আয়াতে আবারও ইদ্দত পালনকালে নারীর অধিকার আদায় করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলা হচ্ছে: তোমরা কোনো অবস্থায় এই কয়টি মাস তাদেরকে তোমাদের বাসস্থানে অবস্থান করতে দিতে বা তাদের খোরপোষ বহন করতে অনীহা প্রকাশ করবে না। বিশেষ করে গর্ভবতী স্ত্রীর এই সময়টাতে ভালো খাওয়া এবং অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয়। সন্তানের জন্ম পর্যন্ত এই প্রয়োজন পূরণে সচেষ্ট থাকবে। নবজাতকের জন্মের পর তাকে স্তন দান করার ব্যাপারে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সঙ্গে সদালাপের মাধ্যমে আলোচনা করে একটি সমঝোতায় উপনীত হবে। কিন্তু যদি মা তালাক হয়ে যাওয়ার কারণে তার সন্তানকে স্তন পান করাতে অস্বীকৃতি জানান তাহলে সন্তানকে স্তন দান করার জন্য অন্য কোনো নারী নিয়োগ দিতে হবে।

পরের আয়াতে জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানের প্রতি ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে: মহান আল্লাহ বান্দার সামর্থ্যের বাইরে তার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেন না। কাজেই কোনো স্ত্রী যেন তার স্বামীর সাধ্যের অতীত কোনো কিছু তার কাছে দাবি না করে। আর স্বামীও তার সামর্থ্য অনুযায়ী যেন পরিবারের ব্যয়ভার বহন করে এবং কার্পণ্য না করে।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো:

১-  ইদ্দত পালনকালে স্বামী তার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার কিংবা তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে পারবে না বরং ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত আগের মতো তার সব ভরণপোষণ চালিয়ে যেতে হবে।

২- বাসস্থান ও খোরপোষ বহনের মাপকাঠি হচ্ছে স্বামীর আর্থিক সামর্থ্য। স্ত্রী তার স্বামীর সামর্থ্যের অতিরিক্ত আশা করতে পারবে না।

৩- সন্তানের ভবিষ্যত নির্ধারণের ক্ষেত্রে পিতা ও মাতার মধ্যে শলাপরামর্শ করার ওপর ইসলাম যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছে।

৪- মানুষকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করতে বলা হয়েছে। কিয়ামতের দিনও আল্লাহ মানুষের সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে তার হিসাব নেবেন।

তো শ্রোতাবন্ধুরা! এরইসঙ্গে শেষ করছি কুরআনের আলোর আজকের আয়োজন। যারা সঙ্গে দিলেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।#

 

পার্সটুডে/এমএমআই/এমবিএ/২৭

ট্যাগ